তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে টাকার পাহাড়! অভিষেকের কথা টেনে দলের অবস্থান জানালেন কুণাল

মুর্শিদাবাদের তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুলের বাড়ি থেকে লাখ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। যদিও সিবিআই এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানায়নি। তবে ইতিমধ্যেই জাফিকুলের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিল শাসক তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বিধায়কের বাড়ি থেকে ‘উদ্ধার’ হওয়া নগদ টাকা যদি ‘অবৈধ’ হয়, তা হলে দলের নীতি ‘জ়িরো টলারেন্স’। যা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জাফিকুলের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। বিধায়ক বর্তমানে বিধানসভার অধিবেশনের জন্য কলকাতায় রয়েছেন। সিবিআই কর্তারা জাফিকুলের বাড়িতে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বাড়ির গোটা চত্বর ঘিরে ফেলা হয়। এর পর দুপুর নাগাদ নিয়ে আসা হয় টাকা গোনার যন্ত্র। পরে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিধায়কের বাড়ির শৌচাগারের লফ্‌ট থেকে সাত লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের ওই অংশের দাবি, জাফিকুলের ‘বেডরুম’ থেকেও কয়েক লাখ টাকা উদ্ধার হতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের তরফে প্রকাশ্যে বা সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিধায়কের পরিবার সূত্রে খবর, সম্প্রতি কিছু সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকাই তাঁর বাড়িতে ছিল।

এ ব্যাপারে কুণাল বলেন, ‘‘কোনও কোনও সূত্রে বলা হচ্ছে, জাফিকুলের বাড়ি থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকা বৈধ না অবৈধ, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। যদি ব্যবসার টাকা হয়, তা হলে তার বৈধতা নিয়ে কার কী বলার আছে? আর যদি অবৈধ হয়, তা হলে দলের অবস্থান আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন— জ়িরো টলারেন্স।’’

ঘটনাচক্রে, বুধবারই ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না! তার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সিবিআইয়ের এই তৎপরতা। সকালে জাফিকুলের বাড়ি ছাড়াও রাজ্যের আরও কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়েছেন সিবিআই কর্তারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সী তথা বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তী এবং কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িও। দেবরাজের দু’টি বাড়িতে যান তাঁরা। তবে দুপুর ৩টের মধ্যে দু’টি ঠিকানা থেকে বেরিয়েও যান। বাপ্পাদিত্যের বা়ড়ি থেকেও দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ বেরিয়ে যায় সিবিআই। সিবিআই বেরিয়ে যাওয়ার পর দেবরাজ বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থা এ ভাবে হানা দিচ্ছে, কারণ আমরা তৃণমূল করি।’’ একই সুরে কথা বললেন কুণালও। তিনি বলেন, ‘‘বুধবারের ব্যর্থ সভার পর যে ভাবে বিজেপি তাদের গণসংগঠন সিবিআইকে নামিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

পাল্টা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ওই টাকা বৈধ বলে কি আদৌ তৃণমূলও বিশ্বাস করে? সাধারণ কর্মীরা দূরের কথা, যিনি বলেছেন, তিনিও বিশ্বাস করেন? সিবিআই একটা বাড়িতে গিয়েছে, যাঁর বাড়িতে যাবে, তাঁর বাড়িতেই টাকা পাবে। তৃণমূলের মুখপাত্রেরা অপেক্ষা করুন, এই রকম প্রতিক্রিয়া আরও অনেক বার দিতে হবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.