আইপিএলের নিলাম কি এ বার উঠেই যাবে? হার্দিকের দলবদল বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘টাকা যার, ক্রিকেটার তার’

আইপিএল থেকে কি এ বার নিলামটাই উঠে যেতে চলেছে? যে দলের কাছে টাকা রয়েছে সেই দল অন্য দল থেকে তাদের পছন্দ মতো ক্রিকেটার কিনে নিতে পারবে! চলতি বছর নিলামের আগে গুজরাত টাইটান্স থেকে হার্দিক পাণ্ড্যের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যোগদান সেই প্রশ্নটাই তুলে দিচ্ছে।

ছ’বছর মুম্বইয়ের হয়ে খেলার পরে ২০২১ সালে গুজরাতে যোগ দিয়েছিলেন হার্দিক। ১৫ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছিল গুজরাত। করা হয়েছিল দলের অধিনায়ক। প্রথম বারই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। সেই বছর হার্দিককে দেখে অবাক হয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। বলা হয়েছিল, পুরো বদলে গিয়েছেন হার্দিক। ধীর, শান্ত, পরিণত হার্দিক দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মস্তিষ্কের যুদ্ধে টেক্কা দিয়েছিলেন তাবড় অধিনায়কদের।

পরের বছরও গুজরাতের বাজি সেই হার্দিকই। আরও এক বার দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। শেষ দু’বলে রবীন্দ্র জাডেজার ব্যাটে হারতে হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। সেই দু’বছরে ভারতীয় দলের পরবর্তী অধিনায়ক হিসাবে উঠে এসেছিলেন তিনি। অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, সাদা বলের ক্রিকেটের অধিনায়ক করে দেওয়া হোক তাঁকে। অধিনায়ক না হলেও রোহিত শর্মার সহ-অধিনায়ক হয়েছেন তিনি।

কিন্তু চলতি বছর আইপিএলের আগেই শুরু হল জল্পনা। হার্দিক নাকি গুজরাত ছাড়তে চাইছেন। ফিরে যেতে চাইছেন মুম্বইয়ে। নিজের পুরনো দলে। মুম্বইও নাকি হার্দিককে ফিরে পেতে মরিয়া। দু’দলের মধ্যে অনেক আলোচনাও হল। নিলামের আগে ২৬ নভেম্বর ছিল ক্রিকেটার ধরে রাখার শেষ দিন। সে দিন বিকালে যখন গুজরাতের তালিকা দেওয়া হল, সেখানে দেখা গেল হার্দিকের নাম। কিন্তু সবার শেষে। সেটা কী ভাবে সম্ভব? যেখানে অধিনায়কের নাম সবার প্রথমে থাকে সেখানে কেন হার্দিকের নাম সবার শেষে? প্রশ্নটা তখনই উঠেছিল।

কয়েক ঘণ্টা পরেই ছবিটা বদলে গেল। জানা গেল, গুজরাত থেকে মুম্বই হার্দিককে কিনে নিয়েছে। কিন্তু কী ভাবে? সেটাও জানা গেল। জটিল কেনাবেচা পেরিয়ে হয়েছে এই দলবদল। মুম্বই তাদের দল থেকে ক্যামেরন গ্রিনকে বিক্রি করেছে আরসিবিতে। গ্রিনকে ১৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কিনেছিল মুম্বই। আরসিবিকে বিক্রি করায় সেই টাকা তাদের কাছে চলে আসে। সেই টাকাতে তারা হার্দিককে কিনেছে ১৫ কোটি টাকায়। ফলে অন্য কোনও দলের সেখানে আপত্তির কোনও জায়গা নেই। কিন্তু অন্য কোনও দল সেখানে নাক গলাতে পারছে না। নিলাম হলে সেটা হত না। লড়াই হত। যে দল সেই লড়াইয়ে জিতত তারা পেত ক্রিকেটারকে। নিলামের বাইরে ক্রিকেটার কেনা-বেচা হওয়ায় সেই সুযোগ থাকছে না বাকি দলগুলির কাছে।

এ ভাবে নিলামের বাইরে ক্রিকেটার কেনাবেচা একটা বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। আইপিএলের শুরু থেকে নিয়ম, তিন বছর অন্তর হয় বড় নিলাম। সেখানে কয়েক জন ক্রিকেটার ছাড়া বাকি প্রায় সবাই নিলামে অংশ নেন। দল নতুন করে তৈরি করার জায়গা থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে। তা ছাড়া প্রতি বছর ছোট নিলাম হয়। সেখানে দলের ফাঁক ভরাট করার চেষ্টা করে দলগুলি। কিন্তু যদি নিলামের আগেই বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ক্রিকেটার কেনাবেচা করে নেয়, তা হলে নিলামের সময় কী হবে? সে ক্ষেত্রে সেই সব ক্রিকেটারই নিলামে উঠবেন, যাঁদের প্রতি কারও বিশেষ আগ্রহ নেই। তা হলে তো নিলাম গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে। যে দলগুলির কাছে বেশি টাকা থাকবে তারাই ভাল ক্রিকেটারদের কিনে নেবে। সে ক্ষেত্রে হবে অসম লড়াই। তাতে প্রাণ হারাবে আইপিএলই। হার্দিকের দলবদল নিয়ে বিষয়টি শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে তা আরও বড় আকারে দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.