‘হোঁচট’ খাচ্ছে অত্যাধুনিক খননযন্ত্র, উত্তরকাশীতে তাই এ বার শাবল-গাঁইতি নিয়ে নামতে পারেন উদ্ধারকারীরা

বার বার বাধা পাচ্ছে অভিযান। থেমে যাচ্ছে উদ্ধার কাজের প্রক্রিয়া। তাই এ বার উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গ থেকে ৪১ জন কর্মীকে বার করে আনতে অত্যাধুনিক খনন যন্ত্রের বদলে শাবল, গাঁইতি, কোদালের উপর ভরসা করতে পারেন উদ্ধারকারীরা। তেমনটাই জানা গিয়েছে উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন সূত্রে। তবে প্রশাসন যদি সেই পথ বেছে নেয়, তা হলে সুড়ঙ্গে নামা ধসের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে উদ্ধারকারীদের আরও বেশ কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার এবং বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার রাতেও আবার থমকে যায় উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে থাকা কর্মীদের উদ্ধার করার কাজ। উদ্ধারকারী সংস্থাগুলির দাবি, ৫৭ মিটার ধসের বাধা সরাতে সরাতে অধিকাংশ পথই অতিক্রম করেছে খননের যন্ত্র অগার মেশিন। আর মাত্র কয়েক মিটার বাকি। সেই ধস খুঁড়ে ফেলতে পারলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে। কিন্তু সেই কয়েক মিটার খুঁড়তে গিয়েই বার বার ‘হোঁচট’ খাচ্ছে অত্যাধুনিক খননযন্ত্র। সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে অগার যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটিো‌র কারণে কাজ বন্ধ করতে হয়। যন্ত্রটি যে উঁচু জায়গার উপর রেখে খননের কাজ চালানো হচ্ছিল, সেই জায়গাটিতেও নাকি আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। আর তার জন্যই থমকে যায় উদ্ধার কাজ। এর আগেও খনন যন্ত্র গরম হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। তাই সুড়ঙ্গের কর্মীদের উদ্ধার করতে এ বার শাবল, গাঁইতি নিয়ে আসরে নামতে পারেন উদ্ধারকারীরা।

কিন্তু কখন ওই ৪১ কর্মীকে উদ্ধার করা যাবে? সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় প্রশাসন। শুক্রবার সকালেই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাতের মধ্যে সুড়ঙ্গের ধসের বাধা পেরিয়ে বার করে আনা যাবে আটকে থাকা শ্রমিকদের। সেই মতো উদ্ধার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে হঠাৎই উদ্ধারকারীরা জানিয়ে দেন, শুক্রবার রাতে ওই শ্রমিকদের সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শুক্রবার রাতে এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল যান মুখ্যমন্ত্রী ধামী। পরে তিনি জানান, ‘‘পরিস্থিতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শেষ পর্যায়ে অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গেও কাজ করতে হবে।’’ এই মর্মে নির্দেশও দেন উদ্ধারকারীদের এবং জানিয়ে দেন, উদ্ধারকাজে প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্য করবে সরকার। কোনও কিছুর অভাব হবে না। শুধু শ্রমিকদের নিরাপদে বাইরে নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার রাত থেকে উদ্ধারকাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশারদ আর্নল্ড ডিক্স আশাবাদী যে, খুব শীঘ্রই আবার উদ্ধারকাজ শুরু করা যাবে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যায়ের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে বললেও আর্নল্ডের মত, তাড়াহুড়ো করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটি সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ। ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরেই প্রায় ৬০০ মিটার ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে পড়েন সুড়ঙ্গে কর্মরত ৪১ জন কর্মী। সেই ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্য এবং কেন্দ্র— উভয় সরকারই শ্রমিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু বার বার বাধার মুখে পড়ছে উদ্ধারকাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.