‘না হলে ২১ জুলাইয়ের সভাও বন্ধ করে দেব’! শাহের কর্মসূচির অনুমতি দিয়ে বলল কলকাতা হাই কোর্ট

ধর্মতলায় বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিয়ে আদালত জানিয়েছে, কর্মসূচির জন্য কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া শর্ত মানতে হবে। তবে অতিরিক্ত কোনও শর্ত যে সভার আয়োজকদের উপর চাপানো যাবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

এই মামলায় ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস কর্মসূচির প্রসঙ্গও ওঠে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “২১ জুলাই বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা সব বন্ধ করে দিচ্ছি। কোনও মিটিং, মিছিল, সভা নয়। একটাই সমাধান, সবার জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করেছি। সেটা করলে কি ভাল হবে? রাজনৈতিক ভাবে অযথা সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। দু’সপ্তাহ আগে আবেদন করা যথেষ্ট।” প্রসঙ্গত, বিজেপির তরফেও রাজ্যের শাসকদলের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির প্রসঙ্গ তোলা হয়েছিল। তৃণমূল ওই দিন ধর্মতলায় সভা করতে পারলে, তারা কেন পারবে না, আদালতে সেই প্রশ্নই তোলে বিজেপি। আগের দিনের শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, ‘‘শাসকদল যেমন রাজনৈতিক কর্মসূচি করে, বিজেপিও তেমন করতে চায়। তা হলে অসুবিধার কী রয়েছে?’’

শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “রাজ্যে এই সব কর্মসূচি লেগেই থাকে। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবেন না। সরকারি কর্মচারী, রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সবাই রাস্তা আটকে মিছিল করে। পুলিশ অনুমতি দিয়ে দেয়। এটা এখানে খুব সাধারণ বিষয়। অন্য রাজ্যে আমার অভিজ্ঞতা আলাদা। হাই কোর্ট থেকে যাওয়ার জন্য গত কালও পুলিশের তরফ থেকে দু’টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আমাদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে।” তিনি আরও বলেন, “আবার কর্মসূচি হলে সবাই তাই করবে। মানুষ ঘুরে ঘুরে যাবে।”

রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “অনেকে অনেক কিছু করছে, তবুও রং দেখা হচ্ছে কেন? মানুষকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দিন। কী করা যাবে? ছটপূজা নিয়ে রাস্তা বন্ধ ছিল। মানুষ অন্য জায়গা দিয়ে ঘুরছে।”এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “এত আগেও আবেদন করার পরেও আপনারা এটাকে যদি অনুমতি না দেন তা হলে তো রাজ্যে কোনও কর্মসূচি করা যাবে না। আমরা বলে দিচ্ছি, রাজ্যের কোথাও কোনও কর্মসূচি হবে না।”

রাজ্যের তরফে নিয়মের কথা বলা হওয়ায় প্রধান বিচারপতি বলেন, “নিয়মের কথা বলছেন। শাসকদলের কর্মসূচির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানেন? তাদের ক্ষেত্রে কী নিয়ম মানেন সেই তালিকা নিয়ে আসুন।” নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “বালিগঞ্জ এলাকায় রাত ৩টে পর্যন্ত ড্রাম বাজিয়ে লরির উপরে লোকজন শোভাযাত্রা করেছে। চার-পাঁচ দিন আগে দেখলাম ট্রাকের মাথায় একটি শিশুকে নিয়ে লোক যাচ্ছে। ধরে বসার কিছু নেই। পণ্যবাহী গাড়িতে করে মানুষ যাচ্ছে। পুলিশ কিছু বলছে না! এটা তো আইন লঙ্ঘন করছে। কোনও নোটিস না দিয়ে গোটা শহর স্তব্ধ করে দিয়েছিল কুর্মি সম্প্রদায়। কেন এ রকম হবে? আদালত এগুলো দেখেছে।”

উচ্চ আদালতের রায় এবং এই পর্যবেক্ষণের পর বিজেপির আইনজীবী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং সূর্যনীল দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রাজ্য সরকার শাসকদল এবং বিরোধী দলগুলির উপর সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই আচরণ করছে। রাজ্য প্রশাসন যে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, তার প্রমাণ আজকের এই আদালতের রায়।”

২১ জুলাইয়ের সভাস্থলেই আগামী ২৯ নভেম্বর তাদের বিশেষ কর্মসূচি করার অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। সেই সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকেও আনার পরিকল্পনা আছে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের। কিন্তু পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করা হলে তারা সেই আবেদন দু’-দু’বার ফিরিয়ে দেয়। যুক্তি হিসাবে জানানো হয়, সভার জন্য জায়গাটি ফাঁকা নেই। পুলিশের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পদ্মশিবির। একক বেঞ্চ তাদের সভার ছাড়পত্র দিলে তার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বৃহস্পতিবার সেখানেই রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘আগামী ২৯ নভেম্বর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করতে চায় বিজেপি। ওই জায়গাটি কোনও কর্মসূচির জন্য নয়। শুধুমাত্র একটি কর্মসূচি করা হয়। গত ৩০ বছর ধরে তা-ই হয়ে আসছে।’’

হাই কোর্টের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরেই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্য প্রশাসন এবং তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশের ‘পক্ষপাতমূলক আচরণ’ এবং ‘অশুভ চেষ্টা’র বিরুদ্ধে ‘ন্যায়ের জয়’ বলে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তার পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না জানিয়ে বলেন, “বিজেপি এবং অমিত শাহের কর্মসূচি মানেই গুন্ডামি, গন্ডগোল। তবে এ বার এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.