সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে মল্লরাজাদের তৈরি প্রাচীন গোকুলচাঁদ মন্দির

পুরাতত্ব বিভাগের অধিগ্রহণের নির্দেশিকা লেখা নোটিশ রয়েছে। কিন্তু সেইভাবে আজও সংস্কার হয়নি বাঁকুড়া জেলার জয়পুরের গোকুলনগর গ্রামের প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো গোকুল চাঁদ মন্দির। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এক সময়ের মল্ল রাজাদের রাজধানী ‘মন্দির নগরী’ ছিল এই বিষ্ণুপুর। মল্ল রাজা আদি মল্লের ছেলে জয়মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন। ধারাবাহিকভাবে মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরে বেশ কিছু মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি পাশের জয়পুরের গোকুলনগর গ্রামে তৈরি করেন গোকুলচাঁদ মন্দির। প্রাচীন ওড়িশার পঞ্চচূড় মন্দিরের শৈলী ও প্রাচীন বাংলার একচালা দালান শৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি হয় উঁচু ভিতের উপর মন্দির। এর দক্ষিণে রয়েছে নাট মন্দির। তিন দিক বারান্দা ও প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। পাঁচটি শিখর বিশিষ্ট এই মন্দিরের মূল শিখরটি অষ্টভূজ আকৃতির ও কোণের শিখর গুলি চতুষ্কোণী। এই মন্দিরটি মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহের রাজত্বকালে নির্মিত বলে জানা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় পুরাতত্ব বিভাগ, কলকাতা মণ্ডল প্রাচীন এই মন্দির অধিগ্রহণের নোটিশ টানিয়ে দায় সেরেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবজ্ঞা, অনাদর আর অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে প্রাচীন এই মন্দিরটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কালী শঙ্কর রায় বলেন, আমরা এলাকার মানুষ প্রাচীন মন্দির সংরক্ষণ কমিটি তৈরি করে বহু আবেদন নিবেদনের পর ১৯৯৬ সালে পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দির অধিগ্রহণ করে। প্রথম দিকে কিছু কাজ হলেও দীর্ঘদিন কোনও কাজ হয়নি। প্রাচীন এই মন্দিরের পাচিল পুনরায় নির্মাণের কথা থাকলেও তা হয়নি। এই অবস্থায় মন্দিরের পাথর চুরি হয়ে যাচ্ছে। এই গোকুলচাঁদ মন্দিরটি জেলা তথা রাজ্যের মাকড়া পাথরে নির্মিত সর্ববৃহৎ মন্দির দাবি করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এই মন্দির জাতীয় সৌধের মর্যাদা পেয়েছে। এমনকী, আন্তর্জাতিক সৌধের মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে। এই অবস্থায় রাজ্য, কেন্দ্র, পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও পর্যটন দফতরের এই মন্দিরকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। প্রচুর বিদেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে অনেকেই আসতে পারেন না বলে তিনি জানান।

স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, পুরাতত্ত্ব বিভাগ প্রথম দিকে এ বিষয়ে তৎপরতা দেখালেও শেষের দিকে সেই তৎপরতা আর চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে তাদের বেশ কয়েকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে মন্দিরে বিশেষত রাত্রিকালীন নিরাপত্তায় পুলিশ ক্যাম্প করার কথা ভাবা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই মন্দির সংরক্ষণ প্রশাসন বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে।

জেলাশাসক উমাশঙ্কর এসকে প্রাচীন এই গোকুলচাঁদ মন্দিরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুরাতত্ত্ব বিভাগ ইতিমধ্যে এই মন্দির অধিগ্রহণ করেছে। প্রশাসনের তরফে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে আবারও দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

তিমির কান্তি পতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.