এই প্রথম কলকাতায় বিজ্ঞানের মহাসঙ্গম। মঙ্গলবার থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল। বিকেলে নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই উৎসবের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে বলে দিলেন, “বিজ্ঞান নুডলস নয় যে, ফটাফট দু’মিনিটে তৈরি হয়ে যাবে। এটা পিৎজাও নয় যে, আধ ঘণ্টায় পাওয়া যাবে। গবেষণা, আবিষ্কার অনেক দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। এখানে ফটাফট সংস্কৃতি চলে না।”

এদিনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনাদি কাল থেকে মানুষের মধ্যে অজানার প্রতি একটা ভয় ছিল। আতঙ্ক কাজ করত। কিন্তু তার উৎস সন্ধানে গিয়েই নানা যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়েছে।” তাঁর কথায়, “আগে প্রয়োজনের নিরিখে আবিষ্কার হত। আর এখন আবিষ্কার নতুন নতুন প্রয়োজনের জন্ম দিচ্ছে।”

বিশ্ববাংলা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এদিন উপস্থিত ছিলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষবর্ধন-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্রছাত্রী, তরুণ বিজ্ঞানী, গবেষক থেকে বিদেশের অতিথি—সব মিলিয়ে বিজ্ঞানের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে এদিন। মোদী বলেন, “বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আমাদের গৌরবজ্জ্বল অতীত রয়েছে। বর্তমানেও বহু প্রতিভার বিকাশ হচ্ছে। ভবিষ্যতে তা যাতে আরও বাড়ে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট যে বিপ্লব এনেছে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মোদী। বলেন, “একটা ইন্টারনেটহীন ফোন দিয়ে দিলে মানুষ বুঝতে পারে আবিষ্কার কোথায় পৌঁছেছে।” বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আরও উন্নতির অভিমুখেই তাঁর সরকার হাঁটছে বলে এদিন দাবি করেন মোদী। তিনি বলেন, “গত তিন বছরে সারা দুনিয়ার মধ্যে ভারত বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে ৮৭ নম্বর থেকে ৫৭ নম্বর স্থানে উঠে এসেছে।”

এদিনের অনুষ্ঠানে মোদী বার্তা দেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে নতুন নতুন আবিষ্কারের ব্যাপারে অধৈর্য হলে চলবে না। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই প্রসঙ্গেই পিৎজা, নুডুলসের কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বিকল্পের সন্ধানে কাজ করছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। কী ভাবে প্লাস্টিকের বিকল্প পাওয়া যায়, কী ভাবে কৃষকদের আয় বাড়বে, ফসল ফলবে, বিদ্যুৎ অপচয় না করে কী ভাবে শক্তির অন্য উৎস আরও বড় আঙ্গিকে ব্যবহার করা যায়—এই সব ব্যাপারে গবেষণার কাজ করছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই প্রতিভাদের সঠিক দিশায় নিয়ে যাওয়া এবং সঠিক মঞ্চ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

এমনিতে ভোট প্রচারে বাংলায় এসে জনসভার শুরুতে বাংলা বলাটাকে প্রায় নিয়ম করে ফেলেছিলেন মোদী। কিন্তু সে তো ছিল বাঙালির মন জয়ের কৌশল। কিন্তু এদিন দেখা গেল, মোদীর বাংলা বলা কেবল ভট মঞ্চে সীমাবদ্ধ নেই। তা বিজ্ঞান মঞ্চেও উঠে এল এদিন। বক্তৃতার শুরুতে গুজরাতি টানে বাংলা উচ্চারণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আমি আপনাদের সাথে টেকনোলজির মাধ্যমে মিলিত হচ্ছি ঠিকই কিন্তু আপনাদের উৎসাহ উদ্দীপনা আমি এখান (দিল্লি) থেকেই অনুভব করতে পারছি।

চন্দ্রযান-২ এর সাফল্যের কথাও এদিন উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়। তাঁর বক্তব্য, চন্দ্রযান-২ ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাইলফলক নয়, এটা একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও এখন লুনা টোপোগ্রাফি, অরবিট, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের সন্ধান নিয়ে চর্চা করছে। বাবা-মায়ের কাছে জানতে চাইছে। এটা একটা নতুন মোড়।” তাঁর কথায়, “চন্দ্রযান ব্যর্থ হয়নি। বিজ্ঞানে ব্যর্থতা বলে কিছু হয় না। সবটাই নতুন অভিজ্ঞতা।”

নিউটাউনের বিশ্ববাংলা আন্তর্জাতিক অডিয়াটোরিয়াম, সায়েন্স সিটি, বোস ইনস্টিটিউটের সল্টলেক ক্যাম্পাস-সহ মোট পাঁচটি জায়গায় শুরু হয়েছে বিজ্ঞান উৎসব। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.