রোদ-ঝড়-জল-বৃষ্টির সঙ্গে বন্য প্রাণের আক্রমণ। সব সামলে আজ সুবজ রঙে লেগেছে সোনালি আভাস। আর এই কারণেই বিনিদ্র রাত কাটছে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের বৈকন্ঠপুর বন দফতরের অধীন মান্টাদাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত নধাবাড়ি গ্রামের কৃষক পরিবারের সদস্যদের। এই মুহুর্তে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধান চাষ করা হয়। এদিকে লাগাতার বুনো হাতির আক্রমণে অনেক চাষিই ধান চাষ বন্ধ করে সেই জমিতে লাগিয়েছে চা।
নিচু জমির চাষিদের অবশ্য সেই সুযোগ নেই। কারণ, জলাভূমিতে চা-গাছ ভালো হয় না। অগত্যা সেই ধানই রোপণ করতে হয়। আর ধানের শীর্ষে সোনার আভা ফুটে উঠলেই শুরু জঙ্গলঘেরা কৃষিজমির মাঝে তৈরি টং-ঘরে রাত জেগে ফসল পাহারা দেওয়া। নিজেদের বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে কৃষক কালীপদ রায় বলেন, কত কষ্ট করে এই ফসল তৈরি করি, অথচ সেটি বাড়ি নিয়ে যেতে পারব কি না, সেটাই অনিশ্চিত। কৃষকদের অভিযোগ, হাতি, জংলি শুয়োর-সহ ময়ূর সকলেই ফসল খেয়ে চলে যায়। এদিকে বনবিভাগের থেকেও তেমন কোনো সহযোগিতা মেলে না।
নধাবাড়ির পার্শ্ববর্তী ১৬ গ্রামের কৃষক ভলকান রায়ের চোখেমুখে হাতির আতঙ্ক। উঠোনে দাড়িয়ে এই প্রবীণ কৃষক জানান, ধান চাষ করেছি, কিন্তু সেই ধান ঘরে নিয়ে আসতে পারব কি না, সেটা বলতে পারব না, কারণ হাতির পাল।
কেন এমন হচ্ছে?
আসলে খাদ্যসংকটে ভুগছে ওই এলাকার বন্যপ্রাণও। উত্তর সিকিমের ধ্বংসলীলার ফল পাচ্ছে বন্যপ্রাণ। বিপর্যয় হয়েছে, বিপর্যয়-মোকাবিলাও হয়েছে। প্রায় এক মাস পরে যখন মানুষের যাতায়াতের জন্য সড়ক পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে বিশেষ অভিযান চালিয়ে, সেই মতো প্রায় কেউই খেয়াল রাখেনি, জলপাইগুড়ি শহর থেকে সামান্য দূরে পাহাড়পুরের তিস্তার চরে আটকে ৭০-৮০ টি হাতির একটি পাল। বন বিভাগের পরিভাষায় অঞ্চলটি হাতি চলাচলের পথ বা এলিফ্যান্ট করিডর।
সেই সুবাদে প্রতি বছরের মতো এবারেও অক্টোবর মাসে হাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাড়ি দিয়েছিল তিস্তা পেরিয়ে। আচমকা তিস্তার চরে চলে আসে সুবিশাল জলরাশি– সঙ্গে কাঠ, ঘরবাড়ি, সেনা বাহিনীর ব্যবহারের বিস্ফোরক-সহ একাধিক মৃতদেহ। নিমেষে তিস্তার চরে চাষের জমিতে ধানের ক্ষেত চাপা পড়ে যায় পলিমাটির কাদায়। সেই থেকেই তিস্তার চরে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় অবস্থান করছে একটি বড় হাতির পালটি। হাতির পাল নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী ধীরেন দাস জানান, প্রায় ৬০-৭০টি হাতি রয়েছে, ওই শুকনো কাশবন খাচ্ছে। কী আর করবে? খাবার নেই! সেই কারণেই যে কোনো সময় দিকবিদিক হয়ে শহরমুখী হতেই পারে তারা।