যস্‌সিই জানায় কী হচ্ছে, কোথায় বল করতে হবে: মহম্মদ সিরাজ

এইমাত্র শ্রীলঙ্কাকে ধ্বংস করে এলেন। যেন এশিয়া কাপ ফাইনালে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করেছিলেন ওয়াংখেড়েতে। ওখানে শ্রীলঙ্কা অলআউট ৫০, এখানে শেষ ৫৫ রানে। ভারতীয় পেস ত্রয়ীর আগুনে লঙ্কাকাণ্ড বিশ্বকাপ জয়ের মাঠে। ম্যাচের পরে মিক্সড জ়োনে এলেন মহম্মদ সিরাজ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা তুলে দেওয়া হল যাতে আন্দাজ দেওয়া যায়, পেস-ত্রয়ী কী ভাবে অপারেশন চালান।

বাইরের প্রতিক্রিয়া সামলানো: আমি বুঝি ক’টা উইকেট নিলাম, সেটাই লোকে দেখবে। উইকেট নেওয়া যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আমার মনেও সংশয় নেই। শেষ কয়েকটা ম্যাচে ছন্দ পাচ্ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম, সেরা ছন্দে নেই। তাই আজকের এই স্পেলটা বেশি আনন্দদায়ক।

ছন্দে না থাকলে কী করেন: তবে খুব বেশি আত্মসমালোচনা এই মুহূর্তে করতে চাইছি না। সব সময় উইকেট সংখ্যা দিয়ে নিজেকে আমি বিচার করতে চাই না। আমি সবচেয়ে খুশি যে, ঠিক জায়গায় বলটা ফেলতে পেরেছি এবং সুইং করাতে পারছিলাম। এটাই ধরে রাখতে চাই আমি।

ওয়াংখেড়েতে ৩০২ রানে জয়: যা যা পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম, সেগুলো কাজে লাগাতে পেরেছি। এটা দেখেই সব চেয়ে খুশি। তবে সব চেয়ে খুশি যে, আমরা সেমিফাইনালে চলে গেলাম।

পারলে প্রশংসা, না পারলে নিন্দা, কী ভাবে দেখেন: জিততে থাকলে সবই ভাল। কিন্তু হারলেই কথা উঠে যায়, এই বোলারকে বসিয়ে দাও। অমুককে দলে রাখা হচ্ছে কেন? একটা বাজে ম্যাচ গেলেই লোকে কথা তুলতে শুরু করে। বলে, একে দিয়ে হবে না, বসিয়ে দাও। আমরা বাইরের সব নেতিবাচক কথাবার্তাকে দূরে সরিয়ে রাখছি। দলের অন্দরমহলে শুধু ইতিবাচক কথাই বলছি।

পেস-ত্রয়ীর সাফল্য: আমাদের পেস বোলিং বিভাগ নিয়ে আর কী বলব? আপনারা সকলে তো নিজেদের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, তিন জনের কেউ না কেউ ঠিক আগুন ঝরাবে। আমি উইকেট না পেলে শামি ভাই নেবে। নয়তো যস্‌সি ভাই (যশপ্রীত বুমরা) প্রতিপক্ষকে ভাঙবে।

সাফল্যের রসায়ন কী: আমাদের ফাস্ট বোলারদের ভাল সময় যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আমরা অনেক কথা বলি। কী রকম লাইন-লেংথে বল করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করি। এক জনের যেটা মনে হচ্ছে পিচ বা পরিবেশ সম্পর্কে সেটা অন্য দু’জনের সঙ্গে আদানপ্রদান করি। ক্রমাগত আমরা তথ্য আদানপ্রদান করি নিজেদের মধ্যে। যখন যেটা মনে হচ্ছে বল করতে এসে, অন্য দু’জনকে জানাই। নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাওয়াটা সাফল্যের অন্যতম কারণ।

যশপ্রীত বুমরার ভূমিকা: যস্‌সি ভাই (যশপ্রীত বুমরা) আমাদের বোলিংয়ের নেতা। ও বল করতে এসেই বুঝে যায়, এই পিচে কোন লেংথে বল করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেটা বলে দেয়। আমরা দ্রুত বুঝে যাই, পিচ কেমন আচরণ করতে পারে। বা পরিবেশ কতটা সহায়ক রয়েছে। বল সুইং করবে কি না। যদি না করে, তখন সিম ব্যবহারের উপরে বেশি নির্ভর করতে হবে। পুরো রণনীতিটাই পাল্টে যেতে পারে। প্রাথমিক ওই তথ্য পাওয়াটা খুব জরুরি। যস্সি ভাই সেটা আমাদের দেয়।

আর কার সঙ্গে কথা বলেন বোলিংয়ের সময়: আমি রাহুল ভাইয়ের (কে এল রাহুল) সঙ্গেও কথা বলতে থাকি। কারণ উইকেটের পিছন থেকে ও সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারে কতটা সুইং হচ্ছে। বা পিচে পড়ে কতটা সিম মুভমেন্ট হচ্ছে। উইকেটকিপারের বক্তব্য শোনাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কিপার রাহুলের কামাল: রাহুল ভাই রিহ্যাবের সময় খুব খেটেছে। তার সুফল পাচ্ছে। দারুণ কিপিং করছে। ডিআরএস-টাও খুব ভাল নিয়েছে (আম্পায়ার ওয়াইড দিলেও কে এল রাহুল ডিআরএস নেওয়ার পরে দেখা যায় বল দুষ্মন্ত চামিরার গ্লাভসে লেগেছে)। কিপার হিসেবে খুব সজাগ।

ফাস্ট বোলার হিসেবে লক্ষ্য কী: ফাস্ট বোলারদের জন্য খুব জরুরি হচ্ছে, ধারাবাহিক ভাবে সঠিক জায়গায় বল করে যাওয়া। আমরা চেষ্টা করছি, পাওয়ার প্লে-তে উইকেট নেওয়ার। সেটা করতে পারলে প্রতিপক্ষ চাপে পড়ে যায়। শুরুতে উইকেট তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটা করতে পারছি বলে প্রতিপক্ষের উপরে প্রবল চাপ তৈরি হচ্ছে। ওদের দ্রুত শেষ করে দিতে পারছি। এই কাজটা চালিয়ে যেতে হবে।

কোন উইকেট সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে: এশিয়া কাপ ফাইনালে দাসুন শনকা আর ওয়াংখেড়েতে কুশল মেন্ডিসের উইকেট সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে। শনকা ছিল পঞ্চম শিকার। এখানেও ক্রিজ়ের কোণ থেকে বল করে উইকেট পেলাম বলে আনন্দ পেয়েছি। একটা জিনিস চেষ্টা করে যদি সাফল্য পাওয়া যায়, তার চেয়ে আনন্দ আর কীসে হতে পারে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.