হামাসকে সাহায্য করার আড়ালে হিজবুল্লাও ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক হিজবুল্লা কমান্ডারদের হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইজরায়েল কড়া সুরে লেবাননকে বলেছে, তারা পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ করব এবং তা হবে লেবাননের জন্য বিপর্যয়। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে হিজবুল্লাহ যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা তা আমি এখনও বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি হবে তার সবচেয়ে বড় ভুল, দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। আমরা তাদের এমনভাবে আক্রমণ করব যে তারা চিন্তাও করতে পারবে না। হিজবুল্লা এবং লেবাননের সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে’।
হামাস-হিজবুল্লা কী শিয়া-সুন্নি লড়াই ভুলে গেছে?
এটি লক্ষণীয় যে হিজবুল্লা একটি সুশৃঙ্খল সামরিক সংগঠনের মতো কাজ করে। এর আধুনিক অস্ত্র রয়েছে এবং এর অস্ত্রাগা১.৫1.5 লাখেরও বেশি রকেট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হিজবুল্লা যোদ্ধারা অনেক দেশের সেনাবাহিনীর তুলনায় ভালো প্রশিক্ষণ পায়। হিজবুল্লা একটি লেবানিজ-ইরানি শিয়া সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং সিরিয়ায় সুন্নি হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। কিন্তু শুধুমাত্র ধর্মের নামে শত্রু হিজবুল্লা ও হামাস উভয়েই একত্রিত হয়ে ইজরায়েলের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে চায়।
প্রথম লেবানন যুদ্ধ কী?
১৯৮২ সালের ৬ জুন প্রথম লেবানন যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের সবথেকে বড় কারণ ছিল লন্ডনে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত এরগভকে হত্যার চেষ্টা। এর পর ইজরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশ করে। এরপর হামলা ও পাল্টা হামলায় সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী উভয় পক্ষের বিপুল সংখ্যক সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারায়। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মুখোমুখি হয়েছিল।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে ইজরায়েল জয়ী হয়। এর ফলে ইজরায়েল লেবাননে পিএলও-র প্রভাব শেষ করে। সেখানেও সিরিয়ার কোনও হস্তক্ষেপ ছিল না। সেখানে ইজরায়েলপন্থী খ্রিস্টান সরকার গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাসির গেমায়েল।
হিজবুল্লা কতটা বিপজ্জনক?
এখন প্রশ্ন হল বিশ্ব কেন হিজবুল্লা নিয়ে উদ্বিগ্ন? এর পেছনে রয়েছে হিজবুল্লার শক্তি, তার চিন্তাভাবনা, তার এজেন্ডা। হিজবুল্লাকে অত্যন্ত মারাত্মক ও প্রাণঘাতী বলে মনে করা হয়। হিজবুল্লা যদি ইজরায়েল-হামাস সংঘাতে পুরোপুরি প্রবেশ করে, তবে এর প্রবেশ একটি গেম চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে। এটা বলার পেছনে অনেকগুলি কারণ আছে।
কীভাবে হিজবুল্লার শক্তি বাড়ল?
জেনে রাখুন যে হিজবুল্লা মানে ঈশ্বরের দল। হিজবুল্লা লেবাননে একটি রাজনৈতিক ও আধা-সামরিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত। লেবাননে এটি একটি শিয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। লেবাননের সংসদে রাজনৈতিক দল হিসেবে এর ৬২ সদস্যও রয়েছে। হিজবুল্লা ১৯৮২ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হিজবুল্লাকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে আমেরিকা।
কিন্তু অন্যদিকে এর প্রতি ইরান সরকার ও ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সমর্থন রয়েছে। ২০০৬ সালে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লার শক্তি আরও বেড়েছে।
হিজবুল্লার শক্তি কত?
হিজবুল্লার লেবাননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর প্রভাব রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত যে এখন লেবাননেও হিজবুল্লার জনপ্রিয়তা কমেছে। সেখানকার মানুষের মধ্যে হিজবুল্লার প্রতি আগের তুলনায় কম। হিজবুল্লার এক লাখের বেশি যোদ্ধা রয়েছে, যার মধ্যে দুই হাজার যোদ্ধা সবসময় সক্রিয় মোডে থাকে। বাকি যোদ্ধারা যে কোনও সময় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকে।