শতাব্দীপ্রাচীন জমিদারিত্বের প্রথা মেনে শান্তিনিকেতনের সুরুল জমিদার বাড়ির পুজো সবার নজর কাড়ে। এখানে আজও আগের মতোই ঝোলানো হয় বহু মূল্যবান বেলজিয়াম কাচের ঝাড়বাতি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুরুলের প্রশাসক জমিদারবাড়ির ভালো সম্পর্ক ছিল। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সুরুল জমিদার বাড়ির এই পুজোয় সামিল হতেন। তবে, সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বনেদি বাড়ির পুজো ধীরে ধীরে সর্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে।
বর্ধমান জেলার নীলপুর থেকে বীরভূমের শান্তিনিকেতন লাগোয়া সুরুলে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ভরতচন্দ্র সরকার। তাঁকে জমিদারবাড়ির প্রাণপুরুষ বলা হত। জানা যায়, তাঁরই পুত্র কৃষ্ণহরি জমিদারবাড়ির অভ্যন্তরে আনুমানিক ২৮৮ বছর আগে প্রথম এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। সেই থেকেই চিরাচরিত বনেদি বাড়ির প্রথা মেনে আজও চলে আসছে সুরুলের এই দুর্গাপুজো।
জমিদারবাড়ির জাঁকজমকপূর্ণ এই পুজোর বিশেষত্ব হল এ গ্রামের সবাই মিলে সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নান করাতে যান ও ঘট ভরে আনেন। এছাড়াও রীতি অনুযায়ী সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে ছাগ ও নবমীতে আখ বলি দেওয়া হয় এখানে। প্রতিমা নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনওরকম ছাঁচ ব্যবহার করা হয় না। মাটি দিয়ে হাতে তৈরি প্রতিমাকে ডাকের সাজে সাজানো হয়। এখনও পুজোর দিন নাটমন্দির সাজানো হয় প্রাচীন বহুমূল্য বেলজিয়াম কাচের তৈরি ঝাড়বাতি দিয়ে। যার অপরূপ দৃশ্য নজর কাড়ে। ঐতিহ্যবাহী সুরুল জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে বাইরে থেকে বহু মানুষ পুজোর চারদিন ভিড় জমান এখানে। ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বিশাল এ বাড়িটি মানুষকে আজও আকৃষ্ট করে। এই বাড়ির জৌলুশ এখনও এতটুকু কমেনি।
জমিদার পরিবারের এক সদস্য বলেন– এবছর এ পুজো ২৮৯-তে পা দিল। আজও প্রাচীন জমিদারি প্রথা মেনে আমাদের এই পুজো হয়। আদি রীতি মেনে পুজো শুরুর দিন সকালে গ্রামের সবাই মিলে ঘট ভরা ও নবপত্রিকা আনা হয়। পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি, এক সময় ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের পরিবারের। শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একসময় নাকি আসতেন এই পুজোয়!