জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়ির পুজো আজও এ বাংলার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পুজোর মধ্যে পড়ে। এপুজোর বয়স পেরিয়েছে ৫০০টি সুদীর্ঘ বছর। রহস্যময় এবাড়িতে সপ্তমীর রাতে বা অষ্টমীর শুরুতে হয় বিশেষ ‘অর্ধরাত্রির পুজো’। সারা দিন এ পুজোয় সকলের অবারিতদ্বার প্রবেশ থাকলেও মধ্যরাত্রির ওই বিশেষ পুজোয় প্রবেশ করতে পারেন না সাধারণ মানুষ। কেন? কারণ, সেখানে নরবলি হয়। না, একটু ভুল হল, ‘নরবলি হয়’ না, ‘নরবলি হত’।
তবে এখনও নরবলি হয়। কিন্তু তা প্রতীকী, রক্তমাংসের মানুষ নয়, তা সম্ভবও নয়! জানা গিয়েছে, চালের গুঁড়ো দিয়ে এবাড়িতে তৈরি হয় নকল মানুষ বা ‘নর’। কুশ দিয়ে সেই প্রতীকী ‘নর’কে বলি দেওয়া হয় এপুজোয়। এ প্রসঙ্গে রাজপরিবারের কুলপুরোহিত জানান– মাঝরাতের পুজোয় এখানে আগে নরবলি হত। পায়রাও বলি দেওয়া হত। এখন চালের গুঁড়ো দিয়ে নর তৈরি করে তা কুশ দিয়ে বলি দেওয়া হয়। এবং এখনও এসময়ে রাজপরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারেন না!
এ পুজোর নানা বৈশিষ্ট্য। যেমন, কালীপুজোর মধ্য দিয়ে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ীর দুর্গা পুজো শুরু হয়। নিত্যপূজিতা মায়ের চক্ষুদান করে তবেই মৃন্ময়ী দুর্গামূর্তির চক্ষুদান করা হয় এখানে।
মহালয়ার দিন অমাবস্যায় রাজপরিবারের প্রথা অনুযায়ী পাঁঠাবলির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ পুজো। মহালয়ার দিন সন্ধ্যায় কালীপুজোর আয়োজন হয়। কালীমায়ের চক্ষু দানের মধ্য দিয়ে এবাড়ির দুর্গাপুজোর শুরু। প্রতিপদে ঘট বসিয়ে পুজো শুরু। কালিকা পুরাণমতে এই পুজো হয়। মায়ের কাছে প্রতীকী নরবলি ছাড়াও দেওয়া হয় পাঁঠাবলি।