ঘর থেকে বাইরে পা রাখার অপেক্ষা। চোখ জ্বলতে শুরু করছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। সেই সঙ্গে প্রবল কাশি। খানিক পরেই ভারী বাতাস টেনে শ্বাস নেওয়া দায়। মাস্ক পরে থাকলে একটু স্বস্তি, কিন্তু সে-ও বেশিক্ষণের জন্য নয়। যেন মনে হচ্ছে, গোটা শহরটাকে কেউ একটা ধূসর ধুলোর চাদরে মুড়ে দিয়েছে। সে চাদর পেরিয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিক আলো-হাওয়া এসে পৌঁছচ্ছে না শহরে। গত কয়েক দিন ধরে এমনই অবস্থা রাজধানী শহর দিল্লির।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের রাজধানীর দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু, এবার আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে এবার সর্বাধিক দূষণের সাক্ষী হয়েছে দিল্লি। এই অবস্থায় দিল্লিবাসীরা কার্যত শহর ছেড়ে পালাতে চাইছেন। ছোট বাচ্চাদের সুস্থতার স্বার্থে ইতিমধ্যেই ‘ক্লাইমেট এমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে স্কুল ছুটি রাখা হয়েছে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে বড়দেরও প্রাণ ওষ্ঠাগত।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, ৪০ শতাংশ দিল্লি এবং এনসিআর বাসিন্দা চাইছেন পাকাপাকি ভাবে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে। অন্তত ১৬ শতাংশ বাসিন্দা চাইছেন, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ যখন, বাড়ি থেকে বেরোনো যাচ্ছে না, তখন এই সময়টা অন্তত শহরের বাইরে গিয়ে থাকতে। ৩১ শতাংশ দিল্লিবাসী আবার ভাবছেন, শহরে ছাড়ার উপায় নেই যখন, তখন এয়ার পিউরিফায়ার, মাস্কই ভরসা। ভাবছেন, আরও গাছ লাগাবেন তাঁরা। ১৩ শতাংশের বেশি নাগরিক ইতিমধ্যেই শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছেন। ২৯ শতাংশ ব্যক্তি একাধিক বার হাসপাতালে গিয়েছেন নানা রকম শারীরিক পরীক্ষার কারণে। ৪৪ শতাংশ মেনে নিচ্ছেন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু এখনও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ১৭ হাজার মানুষের মধ্যে দীপাবলিও তার পরবর্তী সময়ে চালানো হয়েছিল সমীক্ষা।
শনিবার এবং রবিবার বাতাসের গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ৯৯৯ ছাড়িয়েছে বহু জায়গায়। এই মাত্রাতিরিক্ত দূষণের জেরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে বহু শিশু। বৃদ্ধবৃদ্ধাদের অবস্থা আরও কাহিল। হৃদরোগ বাড়ছে হু হু করে। চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে সকলের। যেন অনুভব করা যাচ্ছে, বুকের খাঁচার ভিতরে ফুসফুসে জড়িয়ে যাচ্ছে ধুলো-কালির পরত।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী সূচক ০ থেকে ৫০ পর্যন্ত থাকলে ভাল ধরা হয়। অন্য দিকে সূচক ৫১-১০০ পর্যন্ত থাকলে বায়ুর পরিস্থিতি সাধারণ ধরা হয়। ১০১-২০০ মধ্যে সূচক থাকলে, ইঙ্গিত করে বায়ু ক্রমেই দূষণের দিকে যাচ্ছে। ৩০১-৪০০ মধ্যে সূচক থাকলে বায়ুর দূষণের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ বলে চিহ্নিত করা হয়। বায়ুর দূষণের সূচর ৪০১-৫০০ এর মধ্যে থাকলে পরিস্থিতি গুরুতর নির্দেশ করে। তবে সূচক ৫০০ ওপর চলে গেলে জরুরি অবস্থা ধরা হয়।
নয়ডা, গাজিয়াবাদ আর আশপাশের এলাকার রবিবার দুপুরে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ১৬০০ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এই মাত্রাছাড়া বায়ুদূষণের জন্য ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার সব সকারি আর প্রাইভেট স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছে গৌতমবুদ্ধ নগর আর গাজিয়াবাদের ডিএম। রবিবার দুপুর ১২টার সময় নয়ডার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ১৬০০, গাজিয়াবাদ-এর ছিল ১৫৬৩ আর লোনি দেহাত-এর ছিল ১৪১৩। পরিবেশবিজ্ঞানীরা স্বাভাবিক ভাবেই চরম চিন্তিত।
আরও চিন্তা বাড়িয়েছে, শনিবারের বৃষ্টি। যে বৃষ্টির পরে ঘন স্মগের (কুয়াশা আর ধোঁয়ার মিশ্রণ) আস্তরণ পাতলা হওয়ার কথা ছিল, সে বৃষ্টির পরে এতটুকু বদলায়নি পরিস্থিতি। বরং দূষণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ অপরিপর্তিত থেকেছে। আরও অস্বচ্ছ হয়েছে স্যাঁতস্যাঁতে হাওয়া। বেড়েছে ঘোলাটে ভাব।
এই অবস্থায় সোমবার থেকেই রাজধানীতে ফের যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় নীতি শুরু হচ্ছে। এই নীতির জন্য এর আগেও কেজরি সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এই নীতিতেই দূষণ কমানোর জন্য আস্থা রাখছেন কেজরিওয়াল। নজরদারির জন্য নিয়োগ করা হবে ২০০ ট্র্যাফিক পুলিশ। এদিকে, ধোঁয়াশায় কম দৃশ্যমানতার জেরে রবিবার ৩৭টি বিমান দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। সেগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।