খুনের পিছনে সেই তৃণমূলই আছে! সন্দেশখালি-কাণ্ডে রাজ্য প্রশাসনকে তীব্র তোপ দিলীপের

দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা কিংবা কোনও এলাকায় অপারেশন চালানো সিভিক পুলিশদের কাজ নয়।– সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে একথায় বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পুরো ঘটনাটিইই পুলিশের ব্যর্থতা হিসেবে দাবি করে তিনি বলেন, “রাজ্যে পুলিশ নেই তাই সিভিক পুলিশ দিয়ে করানো হচ্ছে এই সমস্ত কাজ। এটা অত্যন্ত অন্যায়।”

লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মীদের খুনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে বিজেপির এই হেভিওয়েট নেতার আরও দাবি, সে সময় খুনের পিছনে ছিল তৃণমূল। এখনও তৃণমূলই রয়েছে খুনের পিছনে। যে রাজ্যে পুলিশ সুরক্ষিত নয়, সে রাজ্যে বিরোধী লোকজন কীভাবে কাজ করবে, এই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দিলীপ ঘোষ।

শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ টহলদারি চালানোর সময় দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। গুলিতে জখম হয়েছেন এক আধিকারিকসহ চারজন। সন্দেশখালি থানার খুলনা গ্রামে এই ঘটনা ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

গুলিতে জখম সন্দেশখালি থানার সাব ইন্সপেক্টর অরিন্দম হালদারকে খুলনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে দু’জনকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বসিরহাটের পুলিশসুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় টহল দিচ্ছে।

জানা গেছে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। এরপর নির্যাতিতা মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হতে চাইলেও আটকে দেওয়া হয় তাঁকে। মূল অভিযুক্ত কেদার সর্দার ও বিধান সর্দাররা সালিশি সভা বসায় গ্রামে। মুখ বুজে মেনে নেওয়া ছাড়া আর পথ খোলা ছিল না নির্যাতিতার সামনে।

দিন কয়েক পর কেদার-বিধানদের চোখ এড়িয়ে থানায় যান ওই নির্যাতিতা। গোটা ঘটনা খুলে বলেন পুলিশকে। পুলিশও মহিলার নিরাপত্তার স্বার্থে পুরোটা গোপন রাখে। কিন্তু তলে তলে খোঁজ চলছিল সর্দার ভাইদের। কারণ নির্যাতিতার অভিযোগ ছিল, লক্ষ্মীপুজোর রাতে কেদার-বিধান মিলেই তাঁর উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল। হুমকি দিয়েছিল, পুলিশকে কিছু জানালে লাশ ফেলে দেবে।

কালীপুজোর রাতেই পুলিশের কাছে খবর ছিল কেদার-বিধান এলাকায় ঢুকেছে। এরপর শুক্রবার রাতে একটি বিচিত্রানুষ্ঠানের পাশেই প্রকাশ্যে মদ-জুয়ার আসর চলার খবর পায় পুলিশ। টহলদারিতে বেরিয়ে খুলনা পুলিশ দেখতে পায় গ্রামের আতাপুর ফেরিঘাটের কাছে বেশ কয়েকজনকে রাস্তার উপর বসে মদ খাচ্ছে। এরপর এসআই অরিন্দম হালদারের নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী আসছে দেখেই গুলি বোমা ছোড়া শুরু করে দুষ্কৃতীরা।

বছর কয়েক ধরে সুন্দরবনের ত্রাস হয়ে উঠেছে শেখ শাজাহানের কাছের লোক শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কেদার সর্দার। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর একদা সিপিএম-ঘনিষ্ঠ শেখ শাজাহান তৃণমূলে যোগ দেন। এবারের লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর গত ৮ই জুন বিজয় মিছিলকে ঘিরে সংঘর্ষে সন্দেশখালির ন্যাজাটে খুন হন দুই বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল। নিখোঁজ হয়ে যান দেবদাস মণ্ডল নামে আরও এক বিজেপি কর্মী। সে ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনায় নাম জড়ায় শেখ শাজাহান ও বাবু মাষ্টারের।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএম চাপানউতর শুরু হয়েছে। যদিও কেদার-বিধানের মা জানিয়েছেন, তাঁদের গোটা পরিবার এখন তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। কেদারের স্ত্রী আবার পঞ্চায়েতের সদস্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সন্দেশখালির আইনশৃঙ্খলা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, একজন মহিলাকে ধর্ষণ করার পর অভিযুক্তরা গ্রামে সালিশি সভা বসাল, তাও পুলিশ কেন কিছু জানতে পারল না? পুলিশের যদি নিরাপত্তার এই দশা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার অবস্থা কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.