অপহৃত ইজরায়েলিদের মুক্তি না-দেওয়া পর্যন্ত গাজায় জল, খাবার, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকবে। আন্তর্জাতিক আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েল। এই পরিস্থিতিতে গাজ়ায় মানবিক সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার ইজরায়েল যাচ্ছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এবং আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। সরকারি সূত্রের খবর, ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা।
শনিবার রকেট হানা এবং প্যারাগ্লাইডারে চড়ে ইজ়রায়েল ভূখণ্ডে হামলার পাশাপাশি স্থলপথেও অনুপ্রবেশ করেছিল হামাস বাহিনী। গাজ়া সীমান্তে ইজ়রায়েলের তৈরি ইস্পাতের ‘দি গ্রেট স্মার্ট ফেন্স’ ভেঙে ঢুকে পড়ে দেড়শো জনেরও বেশি ইজরায়েলিকে বন্দি করেন হামাস যোদ্ধারা। তাঁদের এখন গাজ়ার ভূগর্ভস্থ কোনও সুড়ঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে বলে মনে করছে ইজ়রায়েল সেনা। আর তাঁদের মুক্ত করতে স্থলপথে গাজ়া ভূখণ্ডে অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকাতে ইতিমধ্যে নিয়মিত এবং সংরক্ষিত ব্যাটেলিয়নগুলি মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ ইজ়রায়েলি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এরই পাশাপাশি গত ছ’দন ধরে গাজ়ায় চলছে ইজ়রায়েলি বিমান হানা। যার জেরে ২৩ লক্ষ প্যালেস্তেনীয়র বাসভূমি গাজ়ায় তিন লক্ষের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁদের বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ পরিচালিত জ়াবালিয়া, আল-শাতি এবং খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে। যদিও ইজ়রায়েলের বোমারু বিমানের হামলায় গাজ়ায় কার্যত কোনও ‘নিরাপদ জায়গা’ নেই বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জ়াবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পাশাপাশি ইজ়রায়েলি বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে গাজ়ার কয়েকটি হাসপাতালও।
এ পর্যন্ত ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ১,৩০০ জন। অন্য দিকে, গাজায় ইজ়রায়েলি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলি এবং আমেরিকার নাগরিকদের মুক্তির জন্য কাতার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছে। মিশর সরকারও এ বিষয়ে হামাস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
প্রাথমিক ভাবে হামাসের তরফে পণবন্দিদের মুক্তির শর্ত হিসাবে ইজ়রায়েলের বিভিন্ন জেলে বন্দি হাজারের বেশি প্যালেস্তেনীয় আন্দোলনকারী মুক্তি দাবি করা হলেও নেতানিয়াহু সরকার সরাসরি তা খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি গাজ়ার বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। জীবনদায়ী ব্যবস্থা চালু না থাকায় মৃত্যু হয়েছে বহু রোগীর।