পুজোয় কোনও ‘ড্রাই ডে’ নেই। সব দিনই খোলা থাকবে রাজ্যে মদের দোকান। ২০১৬ সাল থেকেই এই নীতি নিয়েছে রাজ্য আবগারি দফতর। কিন্তু খুচরো বিক্রেতাদের একাংশের দাবি ছিল, পুজোয় কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে ছুটির ব্যবস্থা করা হোক। এ বার সেই দাবি মেনে প্রথম বার রাজ্য সরকার বিশেষ এক নির্দেশ দিল।
রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, কোন মদবিক্রেতা চাইলে দুর্গাপুজোর অষ্টমী এবং দশমীর দিন দোকান বন্ধ রাখতে পারেন। তবে সেটা অনুমতিসাপেক্ষ। পুজোয় দোকান বন্ধ রাখতে ইচ্ছুক বিক্রেতাদের আবেদন করতে হবে জেলা আবগারি দফতরের কাছে। ওই দফতর এলাকাগত ভাবে আবেদন বিবেচনা করে এক দিন বা দু’দিন বন্ধ রাখার অনুমতি দেবে।
প্রসঙ্গত, অতীতে দুর্গাপুজোর সময়ে দেড় দিন বন্ধ থাকত রাজ্যের সব মদের দোকান। অষ্টমীতে গোটা দিন এবং দশমীতে বিকেল ৫টার পরে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বৃহস্পতিবার রাজ্যের সব মদের দোকান ‘ড্রাই ডে’ হিসাবে বন্ধ থাকত। ফলে পুজোর মধ্যে কোনও বৃহস্পতিবার থাকলে ‘ড্রাই ডে’ হিসাবে সে দিনও দোকান বন্ধ রাখতে হত বিক্রেতাদের। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে একে একে সব নিয়মই বদলে যায়। পুজোয় দেড় দিনের ছুটির পাশাপাশি উঠে যায় বৃহস্পতিবারের নির্দিষ্ট ‘ড্রাই ডে’। প্রথমে ঠিক হয়, প্রতিটি দোকান সপ্তাহের যে কোনও একটি দিন বন্ধ রাখলেই চলবে। তবে সেই দিনটি ঠিক করে দিত আবগারি দফতর। একটি এলাকায় একই দিনে যাতে সব খুচরো মদের দোকান বন্ধ না থাকে, সেদিকে খেয়াল রেখেই জেলা স্তরে ঠিক হত প্রতিটি দোকানের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। এখন অবশ্য সেই নিয়মও নেই। সুরাপ্রেমীরা চাইলে যে কোনও দোকান থেকে যে কোনও দিনই মদ কিনতে পারেন।
পুজোয় বন্ধ থাকার নিয়ম উঠে যাওয়ায় এখন রাজ্যে মোট পাঁচটি দিন মদের দোকান বন্ধ থাকে— প্রজাতন্ত্র দিবস, দোলযাত্রা, স্বাধীনতা দিবস, মহরম এবং গান্ধীজয়ন্তী। অতীতে ইদুজ্জোহা এবং মহাবীরজয়ন্তীতে মদের দোকান বন্ধ রাখার নিয়ম ছিল। এখন আর তা নেই।
অনেক বছর ২ অক্টোবর (গান্ধীজয়ন্তী) পুজোর মধ্যে পড়ে যাওয়ায় ছুটি মিলে যায় মদের দোকানের কর্মচারীদের। কিন্তু তা কাকতালীয়। মদের দোকানের কর্মচারীরা এমনিতে দুর্গোৎসবে কোনও ছুটি পান না। তবে এ বার রাজ্য আবগারি দফতর পুজোয় দোকান বন্ধ রাখার নিয়ম জানিয়ে গত ৯ অক্টোবর জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠিয়েছে। তবে তাতেও ছুটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না মদের দোকানের কর্মচারীরা। মধ্য কলকাতার একটি মদের দোকানের কর্মচারী শ্যামল রায় যেমন বললেন, ‘‘আমরা চাইলে বা সরকার অনুমতি দিলেই কি আর ছুটি পাওয়া যায়? দোকানের মালিকেরা বন্ধ রাখতে চাইবেন কি না সেটাই তো আসল প্রশ্ন।’’
ওই কর্মচারীর আশঙ্কা খুব অমূলক নয়। হুগলি জেলার এক মদ ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘‘দোকান বন্ধ রাখার কোনও প্রশ্নই নেই। আমি কর্মচারীদের ভাগ ভাগ করে পুজোর দিনগুলোয় ছুটি দিয়ে দিই। পুজোর সময়ে বিক্রি একটু বেশি হয়। আমাদেরও টার্গেট থাকে। সেটা মেটাতে হবে তো। তা ছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে একা বন্ধ রাখলে লোকসান। সবার বন্ধ থাকলে ক্রেতারা আগে থেকে কিনে রাখেন। কিন্তু কোথাও না কোথাও পাওয়া যাবে জানা থাকলে কে আর আগে থেকে কিনে রাখবে!’’ ওই ব্যবাসীয়র আরও বক্তব্য, পুজোর পরের কয়েকটা দিন বাজারে একেবারেই মদের চাহিদা থাকে না। কর্মচারীরা চাইলেই ছুটি নিতে পারবেন সেই সময়ে। তবে বন্ধ রাখা হোক বা না হোক, রাজ্যের তরফে নতুন নিয়মে আবেদনের সুযোগ করে দেওয়ায় খুশি মদবিক্রেতা এবং মদের দোকানের কর্মচারীরা।