ষষ্ঠীতে রাজ্যে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে দলীয় নেতৃত্ব চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দুর্গাপুজোর সময় রাজ্যে নিয়ে আসতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। শেষমেশ নড্ডা আসবেন বলে স্থির হয়েছে।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় দুর্গোপুজোর আয়োজনে শাসক তৃণমূলের একচেটিয়া উপস্থিতিতে ভাগ বসাতে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছে বিজেপি। তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মেয়র পারিষদ ও বিধায়ক দেবাশিস কুমারদের নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শহরের পুজোর আয়োজন। ছোটখাটো পুজো কমিটিগুলিও নানা ভাবে তৃণমূল নেতাদের হাতেই রয়েছে। শাসকদলের এই পুজোর ময়দানে সিঁদ কাটতে চায় গেরুয়া শিবির। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগের পুজোয় সেই চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে হারের পর সেই প্রচেষ্টা খানিক স্তিমিত হয়ে যায়। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী বছর লোকসভা ভোট রয়েছে। তার আগে আবার রাজ্যের দুর্গাপুজোয় দলীয় প্রভাব বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা হয়। রাজ্য নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, এ বার শাহ আসুন শহরে। কিন্তু সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট থাকায় রাজ্য বিজেপির সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পরিবর্তে আসছেন নড্ডা।
সজল ঘোষ ও তাঁর বাবা প্রদীপ ঘোষের নাম জড়িয়ে থাকা মধ্য কলকাতায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোই এখন বিজেপির একমাত্র পুজো বলে পরিচিত শহরে। ২০২১ সালে এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গত বছর উদ্বোধন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার সজলদের পুজোয় আসছেন নড্ডা। এ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির ঘুরে দেখার কথা উত্তর কলকাতার বেশ কয়েকটি পুজো। তবে নড্ডা শহরের কোন কোন পুজোয় যাবেন, তার চূড়ান্ত তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। দলের তরফে এই বিষয়টি দেখছেন উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ।
২০২০ সালে রাজ্য জুড়ে দুর্গাপুজোর কমিটিগুলিতে প্রভাব বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র (ইজেডসিসি)-এ দলীয় পুজো উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বছর দুর্গাপুজোর সময় রাজ্যে এসেছিলেন শাহ-ও। এ বছরও একই ভাবে তৎপর হতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নিউমার্কেট থানা এলাকায় খুঁটিপুজোয় উপস্থিত ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, দলীয় সূত্রে খবর, প্রথমে জেলা সভাপতিদের কাছে নির্দেশ পৌঁছেছিল, প্রতিটি জেলার প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি পুজোয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু সব ক’টি ব্লকে আদৌ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। পরে স্থির হয়, রাজ্য জুড়ে অন্তত ১০০টি ব্লকের পুজোয় যাতে নিবি়ড় ভাবে যুক্ত হতে পারেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশিই রাজ্য নেতৃত্বের চেষ্টা ছিল, মোদী বা শাহকে যদি কোনও ভাবে রাজ্যে নিয়ে আসা যায়, তা হলে অন্তত লোকসভা ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা সম্ভব হবে। কিন্তু আপাতত নড্ডাকেই পাচ্ছে রাজ্য বিজেপি।