দেশের প্রথম নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সুস্থ রয়েছেন। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন অমর্ত্যের কন্যা নন্দনা সেন। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার রাত পর্যন্ত বাবার সঙ্গেই কাটিয়েছেন তিনি। নন্দনা বলেন, ‘‘আমি অনুরোধ করছি, এ সব গুজব ছড়ানো বন্ধ রাখুন। বাবা ভাল আছেন। সুস্থ আছেন। আমি কাল (সোমবার) রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিলাম।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে আচমকাই খবর ছড়িয়ে পড়ে, অমর্ত্য প্রয়াত। সেই খবরের ‘সূত্র’ ছিলেন অর্থনীতিতে সদ্য নোবেলজয়ী ক্লডিয়া গোল্ডিন। তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে বলা হয়, ‘‘মর্মান্তিক খবর! আমার প্রিয়তম অধ্যাপক অমর্ত্য সেন কয়েক মিনিট আগে প্রয়াত হয়েছেন। ভাষা নেই!’’
এই প্রকাশ্য বিবৃতিটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখেই আনন্দবাজার অনলাইন সরাসরি যোগাযোগ করে নন্দনার সঙ্গে। নন্দনা সঙ্গে সঙ্গেই জানান, অমর্ত্য ভাল রয়েছেন। তিনি বস্টনে রয়েছেন। নন্দনা রয়েছেন নিউ ইয়র্কে। নন্দনা বলেন, ‘‘এই গুজব ছড়ানো বন্ধ হোক। গত সপ্তাহটা আমরা বাবার সঙ্গেই ছিলাম। তাঁর সঙ্গেই কাটিয়েছি। তিনি একেবারেই সুস্থ আছেন। প্রাণশক্তিতে ভরপুর রয়েছেন। হার্ভার্ডে সপ্তাহে দু’টি করে পাঠক্রম পড়াচ্ছেন। নিজের নতুন বই নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।’’
আনন্দবাজার অনলাইনকে এই কথা জানানোর পর নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলেও সে কথা লিখলেন নন্দনা।
অমর্ত্যের প্রতীচী ট্রাস্টের তরফেও জানানো হয়, তিনি সুস্থ রয়েছেন। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, কেন হঠাৎ অমর্ত্যকে নিয়ে এই পোস্ট করলেন সদ্য নোবেলজয়ী ক্লডিয়া? তাঁর প্রথম পোস্টের ৪৫ মিনিট পর ফের দ্বিতীয় একটি পোস্ট করা হয় ওই এক্স হ্যান্ডলে। সেখানে লেখা হয়, ‘এই অ্যাকাউন্টটি ভুয়ো। ইটালিয়ান সাংবাদিক টোমাসো ডেবেনেডেট্টি এই অ্যাকাউন্টটি তৈরি করেছেন।’ যদিও তত ক্ষণে ‘ক্লডিয়ার’ পোস্টের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অমর্ত্যের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হতে শুরু করে। বেশ কয়েকটি ইংরেজি (দেশি এবং বিদেশি) এবং বাংলা সংবাদমাধ্যমে খবরটি তুলে দেওয়া হয়। এক্স হ্যান্ডলে ‘অমর্ত্যের মৃত্যুতে’ শোক প্রকাশ করে ফেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি লেখেন, ‘আপনার জীবন এবং কাজ চিরদিনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ আনন্দবাজার অনলাইনে অমর্ত্যের সুস্থ থাকার খবর প্রকাশের পরেই অবশ্য সেই পোস্ট ডিলিট করে দেন সুকান্ত। ‘অমর্ত্যের মৃত্যু’ নিয়ে প্রকাশিত খবর মুছে দিতে শুরু করে একে একে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। যে সমাজমাধ্যমে কিছু ক্ষণ আগেও ‘মৃত্যুসংবাদ’ ছড়িয়ে পড়ছিল হু-হু করে, সেখানেও তড়িঘড়ি ‘ভুয়ো’ সংবাদ প্রকাশের জন্য সরব হতে শুরু করেন ব্যবহারকারীরা। অমর্ত্যের পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘সমাজমাধ্যমে উটকো এবং অপরিচিত একটি হ্যান্ডলে লেখা কথার উপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যমগুলি কী ভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে পারল?’’