উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের সঙ্গে চিতাবাঘের সম্পর্ক বহু পুরনো। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ঘন সবুজ চা-বাগানে চিতাবাঘের আনাগোনা দেখতে অভ্যস্ত বাগান সংলগ্ন এলাকার মানুষ। বাড়ির পোষ্য কুকুর, ছাগল, গরু, বাছুর— কিছুতেই অরুচি নেই চিতাবাঘের। শিকার করে আবার জঙ্গলে ফিরে যাওয়াই ছিল এত দিনের দস্তুর। কিন্তু সেই চিতাবাঘই যদি জঙ্গল ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে চা-বাগানে ঘাটি গাড়ে, তা হলে রাতের ঘুম উড়ে যায় এলাকাবাসীর। তেমনই কাণ্ড ঘটছে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মুন্সিবাড়ি, ভেলকুজোত-সহ একাধিক গ্রামে। চিতাবাঘ দেখতে পেলেই স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দিচ্ছেন বন দফতরে। কিন্তু বনকর্মীরা ফাঁদ পাতার আগেই সে বেমালুম উধাও! চিতাবাঘের এই লুকোচুরি খেলায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। হালে পানি পাচ্ছেন না বনকর্মীরাও।
এলাকায় ঘোরাফেরা করছে চিতাবাঘ। দিনের আলোয় হোক বা রাতের অন্ধকারে, গ্রামের গরু, ছাগল থেকে কুকুর— বিভিন্ন প্রাণী শিকার হচ্ছে চিতাবাঘের। আর চিতাবাঘের ভয়ে রাস্তা দিয়ে ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারছে না স্কুলের ছোট ছোট পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। চা বাগানে পাতা তুলতে যেতে ভয় পাচ্ছেন চা শ্রমিকরাও। পাছে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিতাবাঘ! বৃহস্পতিবার রাতেও চিতাবাঘ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু বাঘের সংখ্যা এক না অনেক— তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেই।
জালাস নিজামতারা অঞ্চলের প্রধান শম্পা দাস মিস্ত্রি বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন থেকেই চিতাবাঘের আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি আমি নিজে বন দফতরকে লিখিত জমা দিয়েছি। অবিলম্বে খাঁচা পেতে চিতাবাঘগুলিতে ধরার ব্যবস্থা করতেই হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ শানু বলেন, ‘‘বিগত কয়েক দিন ধরে চিতাবাঘের আতঙ্কে রয়েছি। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এলাকাবাসী ঘর থেকে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন। পাশেই স্কুল, যখন তখন চিতাবাঘের দেখা মেলায় পড়াশোনাও লাটে ওঠার অবস্থা। বন দফতরের কাছে অনুরোধ, খাঁচা পেতে চিতাবাঘ ধরা হোক।’’
ভেলকুজোত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার বর্মণ বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই চিতাবাঘ ঘুরতে দেখা যায়। স্কুলের পাশেই চা বাগান আর জঙ্গল। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বাচ্চাদের বলে দিয়েছি, একা একা কোথাও না যেতে। বন দফতরের কাছে অনুরোধ, খাঁচা পেতে চিতাবাঘ বন্দি করা হোক।’’ পড়ুয়া সোমা পারভিন বলছে, ‘‘চিতাবাঘের আতঙ্কে স্কুলে আসা, খেলাধুলা, পড়াশোনা— সব বন্ধের মুখে। বাড়ি থেকে বার হতে দেয় না মা, বাবা। স্কুলও তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিচ্ছে।’’ সোমার বন্ধু ইস্মিনা পারভিন বলছে, ‘‘সরকারের কাছে অনুরোধ, চিতাবাঘটিকে তাড়াতাড়ি ধরা হোক। স্কুলে আসা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে বার হয় না। এ ভাবে কি ভাল লাগে?’’
বাগডোগরা বন বিভাগের রেঞ্জার সোনম ভুটিয়া বলেন, ‘‘এলাকাটি চিতাবাঘের থাকার উপযুক্ত। চা বাগান তো রয়েইছে, পাশাপাশি, কবরস্থান এবং পরিত্যক্ত জমিতে জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। ফলে তা চিতাবাঘের লুকিয়ে থাকার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। আমরা জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখছি।’’