বিদেশে শিল্প গড়া নিয়ে ঘোষণার কৈফিয়ৎ সৌরভের, পাল্টা জবাব সুদীপ্তর

স্পেন থেকে শিল্প নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। কেন তিনি হঠাৎ স্পেন থেকে এই ঘোষণা করতে গেলেন? কলকাতায় ফিরে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে সাফাই দিলেন সৌরভ।

বৃহস্পতিবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে সৌরভ বলেন, “আমি এক জন স্বাধীন ব্যক্তি। কোনও বিধায়ক, সাংসদ নই। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। যেখানে ইচ্ছা হবে সেখানে যাব। অনেকেই অনেক জায়গায় যায়। আমার কাছে কলকাতা, দিল্লি, স্পেন সব এক। আমরা পশুদের সমাজে বাস করি না। আমরা মানুষ, একে অপরের সঙ্গে মতের আদানপ্রদান করি।”

১৩ সেপ্টেম্বর স্পেন গিয়েছিলেন সৌরভ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন সফরে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই ১৫ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে সৌরভ ঘোষণা করেছিলেন যে, আগামী পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে মেদিনীপুরে তাঁর দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানাটি তৈরি হতে চলেছে।

সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘নতুন স্টিল প্ল্যান্টটি মেদিনীপুরে তৈরি হচ্ছে। ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার কাজে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আশা করি, আগামী এক বছরের মধ্যেই তা চালু হয়ে যাবে।’’

বৃহস্পতিবার সৌরভ বলেন, “আমার কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। আমি কারও কাছে উত্তর দিতে বাধ্য নই।” বিরোধীরা অবাক হয়েছেন এরকম উদ্ধত মন্তব্যে। তাঁদেরই একজন বলেন, তিনি যেমন কারও কাছে উত্তর দিতে বাধ্য নন, যে কেউ তাঁর সমালোচনা কেন করতে পারবে না?

সৌরভ জানিয়েছেন যে দেড় বছরের মধ্যে ইস্পাত কারখানাটি তৈরি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, “১৬-২০ মাসের মধ্যে বাংলায় নতুন ইস্পাত কারখানাটি হবে। বাংলার অনেকে কাজ পাবে। আমি সকলকে বলব সেখানে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে।”

সৌরভ স্পেনে বলেছিলেন, আগামী পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে মেদিনীপুরে তাঁর দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানাটি তৈরি হতে চলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই হয়তো জানেন না, ২০০৭ সালে একটা ছোট স্টিল প্ল্যান্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। এখন তৃতীয় স্টিল প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে। আগামী পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যেই তা তৈরি হয়ে যাবে।’’

স্পেনে গিয়ে সৌরভ আরও জানিয়েছিলেন যে, তিনি শুধু ক্রীড়াবিদ নন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি চিরকাল খেলাধুলো নিয়ে থাকলেও আমার পরিবার ব্যবসায়ী পরিবার। ৫০-৫৫ বছর আগে বাংলাতেই ছোট ব্যবসা শুরু করেছিলেন আমার ঠাকুরদা। রাজ্যের তরফে সেই সময় অনেক সমর্থন মিলেছিল। এই রাজ্য সব সময়েই ব্যবসার জন্য গোটা বিশ্বকে আমন্ত্রণ জানায়।’’

এ ব্যাপারে বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ্ত গুহর বক্তব্য, “এই রাজ্য সব সময়েই ব্যবসার জন্য গোটা বিশ্বকে আমন্ত্রণ জানায়, এই দাবি কি আদৌ সঠিক? স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের জন্য সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ করার পরেও রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ অসহযোগিতার জন্য এক ইঞ্চি কাজ না করতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন আইআইটি কানপুরের প্রাক্তনী কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী অশ্বিন বৈষ্ণবজি। ৫০০০০ কোটি টাকার বেশী প্রকল্প রাজ্যের প্রায় সব জেলার বরাদ্দ করার পরেও জমির অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। মোট ৬০ এর উপর রেল প্রকল্পে কাজ করতে বাধা আসছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। স্বাধীনতার পর কোন কেন্দ্রীয় সরকার এত প্রকল্প এক সাথে আমাদের রাজ্যকে দেয় নি।

সুদীপ্তবাবু বলেন, বরকত গণিখান চৌধুরীকে আপামর বাঙালি আজও মনে রেখেছে তার কারণ তার দুই বছরের কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী হিসেবে সাফল্য। এর আগে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী হিসেবেও সাফল্য ছিল। কিন্তু রেলের কাজ মানুষের চোখে পড়ে। মমতা ব্যানার্জী ব্যাপারটা বোঝেন এবং ১৯৯৯ তে রেল মন্ত্রক নেন অটলজির থেকে। পরের দুই বছর কাজ করার চেয়ে পদত্যাগ বেশী করেন। উনি এতবার পদত্যাগ করেন যে দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোরের ইংরেজী দৈনিকে সেই নিয়ে কার্টুন আঁকা হত এবং আমরা যারা সেখানে চাকরি সূত্রে ছিলাম, তাঁদের লোকজন এসে সেই কার্টুন দেখাতো। এই বাস্তব যদি কেউ দেখেও না দেখার ভান করেন, তাহলে কিছু বলার নেই।

সুদীপ্ত গুহ জানিয়েছেন, “২০০৯ তে মমতা আবার রেল মন্ত্রক নিলেন। প্রকল্পের বন্যায় ডুবে গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সরকার। মেট্রো, রেল ওভারব্রিজ, আদর্শ স্টেশন, রেল ফ্যাক্টরি, নার্সিং কলেজ, স্টেডিয়াম সব ছিল সেই রেল বাজেটে। দুই বছর পর মুখ্যমন্ত্রী। তারপর একবছর পর ইউপিএ ত্যাগ। এরপরেই সব প্রকল্প আটকে দেন তিনি। যাতে অন্য কেউ ক্রেডিট না পায়। উদাহরণ? চোখের সামনে কলকাতা মেট্রো। জমি না দেওয়া, কিংবা রুট পরিবর্তন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ তে কলকাতার ১০০ কিলোমিটার মেট্রো শেষ হবার কথা। হয়েছে মেরেকেটে ১০ কিলোমিটার। সৌরভবাবু পয়েন্ট ধরে ধরে এই সব অভিযোগ খণ্ডন করতে পারবেন?

সুদীপ্তবাবু জানান, কোনও প্রচার না করে গত নয় বছর মোদীজি রাজ্যকে ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশী পরিকাঠামো প্রকল্প দিয়েছেন যার মধ্যে আছে গভীর সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর সম্প্রসারণ, সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন সড়ক, শিল্প করিডোর, সেচ, পানীয় জল, পরিবেশ, বিদ্যুৎ, টেলিকম এবং অর্থ পরিকাঠামো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ অসহযোগিতা। এর ফলে একদিকে বাঙালী হচ্ছে পারিযায়ী, অন্যদিকে মার খাচ্ছে উত্তর ও পূর্ব ভারত, কারণ গঙ্গা সমুদ্রে মিশছে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। উত্তরপূর্ব ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে l বাধ্য হয়ে আমাদের রেলমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে সহযোগিতার জন্য আবেদন করতে বলেছেন।

সৌরভবাবুর কাছে আমাদের আবেদন এই বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা না করে গত দু’দশক ধরে যেভাবে নিজেরটা গোছানোর চেষ্টা করেছেন, তাতে লোকের সমালোচনা আপনাকে শুনতেই হবে।

সুদীপ্ত গুহর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, কেন্দ্রকে সহযোগিতা করুন। রোজ খবরে পড়ছি রাজ্যের মানুষ কাশ্মীর থেকে মিজোরাম কাজ করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশ তো আপনারই ৩০% ভোটার। এঁদের মুখ দেখে কমকরে কেন্দ্রকে সহযোগিতা করুন? নইলে আয়ুষ্মান ভারতের বদলে যেমন স্বাস্থ্যসাথী বানিয়েছেন, তেমনই রাজ্যের আলাদা রেল কোম্পানি বানিয়ে আবার কিছু লোককে বোকা বানান। আরও একটা দুটো নির্বাচন পার হয়ে যাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.