হৃদয়ের দীপশলাকা বিভূতিভূষণের ‘হীরা মানিক জ্বলে’

লম্বকে বেড়িয়ে ফিরে আমার পাতানো ডাকাবুকো বোন সেবার দেখা করে গেল। সুপ্রীতি। স্বামী ব্যস্ত ডাক্তার। সই-কয়েকজন গেছে বালি দ্বীপে। সেখানে একটা স্টেডিয়ামে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে মাঠে ঢুকে পড়ে সমুদ্রের জল! জেগে থাকে পাথরের গ্যালারি। তারপর ভাটার টানে জল সরে যায়, জেগে ওঠে ধ্যানমগ্ন শিব। মাঠে? না না—জলে।
এই মন্দিরের কথা কি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন? কে জানে যে আশ্চর্য কুশলতায় তিনি চম্পা দেশের ঘন জঙ্গলে জোঁক-সাপ-মৌমাছির মধ্যে আবিষ্কার করেন লুপ্ত এক ধ্বংস হয়ে যাওয়া নগরী, সেই নগরীর সন্ধান পায় তার নায়ক সুশীল মুস্তাফি, তা অভাবনীয়। ১৯৪৬-এর মে মাসে ডি, এম, লাইব্রেরি বইটি প্রকাশ করে ‘হীরা মানিক জ্বলে। এর আগে ডি. এম. লাইব্রেরি ১৯৪১, বৈশাখ সংখ্যা থেকে ১৯৪২ চৈত্র সংখ্যা সুধীরচন্দ্র সরকার সম্পাদিত মৌচাক’পত্রিকায়। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাস সাধারণভাবে কিশোর পাঠ্য বলে সমালোচকরা নির্ধারণ করেছেন। লেখাটি সম্পর্কে শিশু-সাহিত্যিক লীলা মজুমদার লিখেছেন : গোপাল হালদার যে বলেছিলেন, বিভূতিভূষণের সাহিত্য নাকি ‘অন্তর্মুখী। লীলা মজুমদারের মতে এটি ভুল—“শিশু সাহিত্যের গতিই হলো বাইরের দিকে, বিশেষ করে রহস্য ও দুঃসাহসিক অভিযানের মধ্যে। (ভূমিকা : ‘বিভূতি রচনাবলী’; নবম খণ্ড; মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা; নবম মুদ্রণ, পৌষ ১৪০৫ ব.)। একই মানদণ্ডে ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’, ‘মিমিদের কবর’ আর ‘হীরা মানিক জ্বলে’বিচার করেছেন লীলা মজুমদার। আমাদের সামান্য আপত্তি জানিয়ে রাখলাম।
আগে গল্পে আসি। সুশীল মুস্তাফি দূর গ্রামের বনেদি পরিবারের তরণ। সেই পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন কোনোক্রমে চলে যায়—চাকরি করে না কেউ। সুশীল দেখল তাদের আশ্রিত ঘরজামাইদের বংশ রায়দের অবনী এসে নাগরিক বৈভব দেখিয়ে গেল। মন কেমন নিয়ে গেল সে আত্মীয় সনৎ-এর ভাড়া। বাড়িতে। গড়ের মাঠে দেখা হলো জাহাজের খালাসি জামাতুল্লার সঙ্গে। বাবুম্যাচেস আছে? সামান্য সংলাপ–সংযোগ থেকে খুলে গেল গল্পের রহস্য দুয়ার। এই লেখার পাঠককে অনুরোধ উপন্যাসটি পড়ে নিন। সুনীল জানল জামাতুল্লা ডাচ ইন্ডিজ দ্বীপের দুঃসাহসী নাবিক ছিল।তার ছিল একটি আশ্চর্য সিলমোহর। সেটি নাকি বহুমূল্য। সেটির প্লাস্টার অব পেরিসের ছাপ তোলার সময় জানা গেল এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় উপনিবেশের। কলকাতা জাদুঘরের কর্মী ডা. রজনীকান্ত বসুর মতে ওঙ্কারভাটে ১৩শ শতাব্দীতে এইরকম সিলমোহর পাওয়া যেত।
জামাতুল্লা পশ্চিমি মুসলমান। কলকাতায় থেকে বাংলা শিখেছে। তার অভিজ্ঞতাবিস্তৃত। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া-সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারত মহাসাগরীয় বন্দরে যাত্রার মাঝখানে এক আজানা ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ‘সহসা এক। নির্জন দ্বীপে আবিষ্কার করে অজানা এক হিন্দু সাম্রাজ্যের রাজধানী–আর তার বিপুল রত্নভাণ্ডারের সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সুশীল সনৎ জানল তামিলনাড়ুর কোটি চম্পা গ্রামের এক নাবিক নটরাজনের বিধবা স্ত্রীর প্রাপ্য অর্থ ভাঙ্গাল না—কারণ জামাতুল্লা নটরাজনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই সিলমোহর আর পুরোন বহুমূল্য মানিক ছাড়াই, বেরুল তারা অভিযানে। আবার সেই ডুবো পাহাড়, চীনা নাবিক, মালয়ী মুসলমান কুলি আর ইয়ারহোসেনের মতো নিষ্ঠুর লোভী সঙ্গী!মাঝে মাঝে পিজন ইংলিশ’ আর আনুসঙ্গিক।
ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে গিয়ে সুশীল পড়াশুনো করে জানল ভারতের গৌরবের সেই দিনগুলির কথা। বাঙ্গালি বনেদি পরিবারের ছেলে সুশীল, তার মনে দক্ষিণ মহাসমুদ্রের ঢেউ এসে শুনিয়ে গেল সুদূরের ডাক : ‘বিজয় সিংহের সিংহল বিজয়ের কাহিনি, চম্পা রাজ্যের কথা—সুদূর সমুদ্রপারের ভারতীয় উপনিবেশ চম্পা।ভারতবাসী অসির তীক্ষ্ণগ্রভাগ দিয়ে সে দেশের মাটি পাথরের গায়ে নাগরাজা বাসুকী, শিব পাৰ্ব্বতী ও বিষ্ণুমূর্তি অমর করে রেখেছে। সবটা ইতিহাস নয়। ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনা মিশে এক ভবিষ্যতের অনাগত নির্মাণই তো দেশ গঠনের ভূমিকা তৈরি করে। যা ছিল তাকে অবলম্বন করা, যা হয়েছে তাকে অতিক্রম করার জন্য চাবিকাঠি হলো আদর্শের উদ্দীপনা। বিভূতিভূষণ তার এই অপূর্ব কিশোর উপন্যাসে সেই চেষ্টা করেছেন। থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে/দেখবো এবার জগৎটাকে’—ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কাহিনি বা ইতিহাস তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ নৌ-বিদ্যার পাশাপাশি পর্তুগিজ—স্পেনীয় আর ওলন্দাজ প্রভৃতি শক্তির আবির্ভাবই ইউরোপীয় নবজাগরণ ও শিল্পবিপ্লবের ভূমিকা। আর তারই ফল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস—নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার। সাহিত্য কোনো আকাশের ফুল নয়—এজন্যই তো সমুদ্র-নিবিড় কিশোর উপন্যাসগুলি ইংরেজি সাহিত্যের ভুবনকে বদলে দিয়েছে। ‘রবিনসন ক্রুশো’ বা ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ তো শুধু উপন্যাস নয়— উপনিবেশ স্থাপনের দুর্জয় আগ্রহের, উদ্দাম অভিযান ও সাহসের কাহিনি। কল্পনা আর বাস্তবের এমন মিলিত যাত্রা সাহিত্যের প্রাণ। বিভূতিভূষণের কিশোর উপন্যাস তিনটিতেই তা ধরা পড়ে। ‘চাঁদের পাহাড়’ (১৯৩৭), ‘মরণের ডঙ্কা বাজে (১৯৪০) আর ‘হিরে মানিক জ্বলে (১৯৪৬)—তেমনি অভিযানের গল্প। এর সঙ্গে ‘মিসমিদের কবর’ (১৯৪২) মিলিয়ে নিতে চাইল—সেটি অন্য রসের কাহিনি-রহস্য রোমাঞ্চ গল্প।‘চাঁদের পাহাড়’আফ্রিকা মহাদেশ, ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’-র পটভূমি চীন-জাপানের যুদ্ধ।‘হিরে মানিক জ্বলে’আমরা বেছে নিলাম। কারণ তা কেবল কল্পনা দিয়ে বাস্তবের দিকে যাত্রা বা মায়া রচনা নয়। এক সুদূর অতীত বাস্তবের দিকে সাংস্কৃতিক উজান যাত্রা-Cultural journey.
‘রবিনসন ক্রুশো’ – জাহাজডুবির পর ‘ফ্রাইডে আইল্যান্ড’-এ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসারের কাহিনি। ট্রেজার আইল্যান্ড’ বোম্বেটেদের অন্যায় অমানবিক হিংস্র লুণ্ঠনের–আসলে হয়তো সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনেরই আসল গল্প। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভালো ও মন্দ—দুয়েরই ছবি এইভাবে স্পষ্ট হয়েছে। একে বলবো বাস্তব ও কল্পনার বিমিশ্রণ। ‘হিরে মানিক জ্বলে’ কি রূপকথা? লীলা মজুমদারের কলমে তেমনই ব্যাখ্যা। ঝংকার তোলে যেন। কাহিনির নাম, স্থান নাম—সবই সুন্দর, রূপকধর্মী। শুনে কান মুগ্ধ হয়’; সুশীলের গ্রাম ‘সুন্দর পুর’; তার নামও তেমনি—“সুশীল’ ‘ছেলেটিকে ভালো মানুষ। মনে হতো। ক্রমে যে গল্প গড়ে উঠল তা ‘অস্বাভাবিক বা অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু অসাধারণ। তার পরিণতি লীলা মজুমদারের ভাষায় ‘অসাধারণ কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা বলতে চাই এই কাহিনি ‘অস্বাভাবিক বা অসম্ভব’ তো নয়ই—“অসাধারণ’ও নয়। বরং অতীত অকল্পনীয় কিন্তু অনিবার্য। যা ছিল, তা আবিষ্কার—রোমাঞ্চকর অতীত মনে হতেও পারে; ইতিহাস এভাবেই চলে। কিন্তু যা ছিল তার তাৎপর্য আবিষ্কৃত হতে থাকলে অতীত বর্তমানকে ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনে সহায়তা করে। কাহিনি তখন কল্পনা থাকে না—ভবিষ্যতের পুনর্গঠনের আবেগ সঞ্চার করে। রবিনসন ক্রুশো’অষ্টাদশ শতাব্দীর রচনা—তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের সময়। ‘হিরে মানিক জ্বলে নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি বিস্তারের ইতিহাসের রহস্যলোকে যাত্রা। রবিনসন গেছে অনাবিষ্কৃত দেশে, সুশীল সনৎ গেছে অজানা কিন্তু এক সময়কার ভারতীয় সংস্কৃতির দেশে—অর্থাৎ ‘রবিনসন ক্রুশো’ হলো সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির একমুখী প্রসারের কাহিনি। আর হিরা মানিক জ্বলে ভারতীয় সংস্কৃতিকে ফিরে দেখার কাহিনি। “রবিনসন ক্রুশো’কে যদি আধুনিকতা বলি, Modern; ‘হিরে মানিক জ্বলে’র ভঙ্গিটি উত্তর আধুনিক, Post Modern আর মায়াবী।
বিভূতিভূষণ লিখেছেন, সুশীল ইতিহাসের ছাত্র নয়। ঠিকই, ইতিহাসকে অবলম্বন করে ইতিহাস তৈরি করাই তার লক্ষ্য। বনভূমি হয়ে যাওয়া চম্পা দ্বীপে সুশীল সনৎ আর জামাতুল্লা খুঁজে পায় একটি গুপ্ত সুড়ঙ্গ। সেই রহস্যময় এলাকায় এক অপরূপ নর্তকী, ঘূর্ণমান, যেন স্মিতহাস্যে আগন্তুক অভিযাত্রীকে অতীত গৌরব, বর্তমান দুর্ভাগ্য আর ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের তর্জনীর ইশারা তার। সুশীল সনৎ খুঁজে পায়। সেই রহস্য দ্বার। সেই কক্ষে পড়ে আছে কঙ্কাল! ব্যর্থ অভিযাত্রীর অনিবার্য পরিণতি।
আগেরদিন তেলুগু নাবিকদের ভাষায় ‘ বিমুনি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় স্বপ্নে। সুশীলের সঙ্গে সেই বিষুমুনি বা ব্রহ্মদৈত্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখকের পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিন্ধুমুনির (ভুল করে ছাপা হয়েছে হতো ‘বিম্ভমুনি’–অ.বি.) দেশে জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে এক দুঃস্বপ্ন দেখেছিল। সুশীল। …প্রাচীন হিন্দু সভ্যতার আত্মা এসে যেন ডাক দিয়েছে সুশীলকে। এই স্বপ্নযাত্রার একটু শোনাই। এখনকার উত্তরাধুনিক সাহিত্যের জাদুবাস্তবতা (Magic Realism)-র ঢং এতদিন আগে বিভূতিভূষণ আয়ত্ত করলেন কীভাবে? আশ্চর্য লাগে আমাদের।
‘গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক দীর্ঘাকৃতি পুরুষ’সুশীলকে বলেছেন “আমার সঙ্গে আয়। সবাই আচ্ছন্ন। সারি সারি প্রাসাদ একদিকে, অন্যদিকে প্রশস্ত দীর্ঘীকার টলটলে নির্মল জলরাশির বুকে পদ্ম ফুটে আছে। সেই গভীর অন্ধকারের মধ্যে দেউলে দেউলে ত্রিমূর্তি মহাদবের পূজা হচ্ছে। সুশীল দেখে ‘সুগন্ধ দীপবর্তিকার আলোকে মন্দির উজ্জ্বল। ‘বাতায়ন বলভিতে শুকশারী। সুশীল জানতে চাইল, ‘আমায় কোথা নিয়ে যাবেন? সেই দীর্ঘকায় পুরুষ বললেন সে কথা বলব না। ভয় পাবি’–। তবু শুনতে চায় সুশীল। পুরুষ বললেন, ‘সমুদ্রমেখলা এ দ্বীপের বহু শতাব্দীর গুপ্ত কথা ঘন বন ঢেকে রেখেছিল। ভারত মহাসমুদ্র স্বয়ং এর প্রহরী, দেখতে পাও না?”
এই আশ্চর্য সংলাপ প্রাচীন গৌরবময় ভারতের সঙ্গে আজকের মুসলমান তাড়িত, ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসিত ক্ষীণদৃষ্টিভীরু কেরানি বৃত্তিধারী বঙ্গীয় তরুণের সঙ্গে।
ভারত মহাসমুদ্র আমাদের ভাগ্যবিধাতা। ভারতের গৌরব উত্তরে হিমালয় সন্নিহিত বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রেশম পথ আর দক্ষিণে আরব সাগর বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের মশলা পথ। যতদিন এই দুই বাণিজ্যপথ আমাদের অধিকারে ছিল, ততদিন ভারতজননীর দিকে কেউ কুদৃষ্টি ফেলতে পারেনি। এই সম্পদই জীবনানন্দ দাশের কল্পনার ‘দারুচিনি দ্বীপ’পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। ‘হিরে মানিক জ্বলে’ তারই এক আশ্চর্য উপন্যাস।
ওই বিরাট পুরুষকে ‘বিম্ভুমুনি’ বলার ভুল করেননি বিভূতিভূষণ। রবীন্দ্রনাথ সাগরিকায় এই দূর দ্বীপবাসিনীর সামনে গিয়ে বলেছিলেন—দেখোতো মোরে চিনতে পারো কি না!
সুশীল ভাবতে থাকে। সেই বিরাট পুরুষ জানিয়েছেন, ‘তুমি ভারতবর্ষের সন্তান, তোমাকে একেবারে বঞ্চিত করব না আমি-রহস্য নিয়ে যাও, অর্থ পাবে না। তা রহস্য না থাকলে জীবনের অর্থই তো হারায়। বিভূতিভূষণের কিশোর সাহিত্যকে ‘অন্তমুখী’ বলতে চাননি লীলা মজুমদার। তার চমৎকার ভাষা ‘ছোটদের বই হবে জাপানি বাগানের মতো। অতিরিক্ত কিছু থাকবে না। কিন্তু সুশীলের ভারত-ভাবনা কি অন্তর্মুখী নয়? বহু উদাহরণ দেওয়া যায়, পাঠক বইখানি পড়বেন —বাড়ির কিশোর কিশোরীদের পড়াবেন। তারা রহস্য থেকে অর্থতাৎপর্য খুঁজে পাবে।
শেষ করবো সুশীলের অভিযানের সার্থকতা আর ব্যর্থতার সন্ধিপর্বের উপলব্ধির কথা শুনিয়ে।‘ভারত! ভারত! কত মিষ্টিনাম, কী প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্ভার! তাদের পূর্বপুরুষ বাহুবালে ‘কম্পাসব্যারোমিটারহীন যুগে সপ্তসমুদ্রে পাড়ি দিয়ে এই দ্বীপময় ভারতে এসে হিন্দুধর্মের নিদর্শন দেখে গেছেন! পরবর্তী যুগে ‘স্মৃতিশাস্ত্রের বুলি আউড়ে যারা সমুদ্রযাত্রা নিষেধ করেছিল— আমরা কি তাদের উত্তরাধিকারী! আমার সেই বোন সুপ্রীতি কি এমনই কোনো নির্মাণ দেখে এসেছে? হয়তো গড়ের মাঠে এক চতুর জাহাজি সুশীলের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেছিল—মাচিস আছে? মাচিস? দেশলাই। দীপশলাকা। সুশীল ধূমপান করত না—তার কাছে মাচিস ছিল না। কিন্তু হৃদয়ে ছিল দীপশলাকা—তা না জ্বললে কি বৃহত্তর মহতোমহীয়ান ভারতকে চেনা যায়!
ড. অচিন্ত্য বিশ্বাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.