সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের প্যানেলে প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করার বিষয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশনের (সিএসসি) হলফনামা তলব করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য নম্বর প্রকাশ করা জরুরি। তবে এ ব্যাপারে কমিশনের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন। তার পরেই কোর্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে। কলেজে নিয়োগে গরমিলের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে চাকরিপ্রার্থী মোনালিসা ঘোষ মামলা করেছিলেন। মঙ্গলবার সেই মামলাতেই হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি। পরবর্তী শুনানি ১৩ অক্টোবর।
এ দিন মামলাকারীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, সম্প্রতি সিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের প্যানেল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নামের তালিকা দেওয়া হলেও, কে কত নম্বর পেয়েছেন, তার উল্লেখ নেই। ফলে এই নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সিএসসি-র আইনজীবীর অবশ্য দাবি, শিক্ষাগত ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর, গবেষণাপত্র ইত্যাদি খতিয়ে দেখেই নিয়োগের তালিকা তৈরি হয়েছে।
সিএসসি-র বক্তব্য শুনে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘সিএসসি-র চেয়ারম্যানের কতগুলি গবেষণাপত্র আছে?’’ ভরা এজলাসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মনে রাখবেন, এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য কিন্তু বর্তমানে জেলে আছেন।’’ প্রসঙ্গত, সুবীরেশ এসএসসি-র চেয়ারম্যানের পদ থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন ও সেই পদে থাকাকালীনই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন।
২০২০ সালের শেষে সিএসসি-র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালে ইন্টারভিউ শুরু হয় এবং সম্প্রতি প্যানেল প্রকাশিত হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই অভিযোগ, পিএইচ ডি ও একাধিক গবেষণাপত্র থাকা অনেকের নাম প্যানেলে নেই। অথচ এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁদের যোগ্যতা ও ইন্টারভিউয়ে মোট প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে সন্দেহ আছে। কলেজ সার্ভিস কমিশন নম্বর প্রকাশ না করায় সেই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। অনেকের মতে, রাজ্যে যে ভাবে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে একের পর এক দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হচ্ছে, তাতে কলেজেও চাকরির প্যানেলে নম্বর না থাকলে সন্দেহ হবেই।
চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের বক্তব্য, মাধ্যমিক থেকে পিএইচ ডি— প্রতি স্তরের জন্য নম্বর বরাদ্দ আছে। সেই হিসাবে পিএইচ ডি করা প্রার্থী স্বাভাবিক ভাবেই বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। প্রতিটি গবেষণাপত্রের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর থাকলেও, কোনও প্রার্থী সর্বাধিক কত নম্বর পেতে পারেন তা-ও নির্দিষ্ট করা আছে। সাধারণত, কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ভাবে এই নম্বরের হিসাব হবে, তা উল্লেখ থাকে। কিন্তু অভিযোগ, সিএসসি সেখানে রাখঢাক করেছে। ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে পড়ানোর ‘ডেমো ক্লাস’ থাকে। ‘ডেমো’র জন্য কত এবং অন্য বিষয়ে কত নম্বর, তা-ও বিভাজন করা থাকা উচিত। সেখানে অস্পষ্টতা রয়েছে। স্কুলে নিয়োগের দুর্নীতি সামনে আসার পরেও কলেজেরইন্টারভিউয়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং হয়েছে কি না, স্পষ্ট নয় তা-ও।