জাতি-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে পরিকল্পিত পথে

পশ্চিমবঙ্গের অরাজক পরিস্থিতির ছবিটা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক হানাহানি, হিংসা, সংখ্যালঘু তোষণের ছবিটা এ রাজ্যে বহুদিনের, বাম আমলের চৌত্রিশ বছর তার নিদারুণ সাক্ষী। তার ওপরে মরিচঝাপি, বিজনসেতুর মতো রাজনৈতিক গণহত্যাও যুক্ত ছিল। বাম আমল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের পরিসর নেই, আবদমিত করেই রাখা হয়েছিল, বর্তমান আমলেও তাই। এসব এ রাজ্যের মানুষের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যে নৈরাজ্য চলছে, শুধু রাজনৈতিকভাবেনয় প্রশাসনিক অরাজকতাও তুঙ্গে। যার সুযোগ একদল লুম্পেন নিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে জাতিদাঙ্গার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। এই গোষ্ঠীর কথা সবাই জানে। বাংলাভাষী মানুষকে এমনভাবে পক্ষে’ পেতে চাইছে এরা, যাতে করে বাঙ্গলা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। বাংলাদেশের জামাতগোষ্ঠী দীর্ঘদিন এই অ্যাজেন্ডা নিয়ে চলেছে।
মুসলমান মৌলবাদীরা আগাগোড়াই চেয়েছিল দেশভাগের সময় গোটা বাঙ্গলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়তে।শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর রায়ের মতো দেশনেতাদের ভুল পথে চালিত করা হয়েছিল। পাকিস্তান দাবির উগ্র সমর্থক কমিউনিস্ট পার্টিও মুসলমানদের খপ্পরে হিন্দুদের ফেলতে চেষ্টা চালাচ্ছিল। আগামীদিনের বিপদ বুঝে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একমাত্র ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তারই জন্য বাঙ্গালি হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গ নামক একটি স্থানে আত্মরক্ষার বর্ম খুঁজে পেয়েছিল। দেশভাগের সময়কার সেই পদধ্বনি বাঙ্গালি হিন্দুরা আবার শুনতে পাচ্ছেন। সৌজন্যে বাঙ্গালিদের তথাকথিত ‘পক্ষাবলম্বী একটি গোষ্ঠীর উগ্র ভারত-বিদ্বেষ ও জামাত-পন্থা।
এই গোষ্ঠীর কথা বছর কয়েক আগেও কেউ জানত না। রাজ্যের শাসকদলের দেউলিয়াপানার সুযোগে এদের জন্ম হয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন ওই গোষ্ঠীর বড়ো মাথা থেকে ছোটোমাথা সকলেই মূলত শাসকদলের পেটোয়া কর্মী। কমিউনিস্ট পার্টির মুখ-মুখোশ। পশ্চিমবঙ্গবাসীর এতদিনে জানা হয়ে গেছে। তাই কুলোর বাতাস দিয়ে তাদের তাড়াতে দেরি হয়নি। কমিউনিস্ট পার্টি শূন্য হতে দেশদ্রোহীদের একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার ছিল, তৃণমূলের মধ্যে তারা সেটা খুঁজে পেয়েছে। একটি ‘বাজারি’ সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়র মধ্যেও সেই আহ্বান দেখা গেছিল। দেশদ্রোহিতার নানা রকমফের আছে, এতদিন আমরা দেখতাম ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’, ‘মণিপুর মাঙ্গে আজাদি’র মতো বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত দিতে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের অজুহাতে ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’-র ধ্বনি আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করেছিল ‘ইনশাল্লাহ’ স্লোগান সহযোগে।
এই ইনশাল্লাহ’ শোনারও পর ‘ধর্মনিরপেক্ষতায় আমরা যে কতট সুমহান তা প্রতিপন্ন করতে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির দুটি মেরু তৈরি হয়ে গিয়েছে; এক প্রান্তে তৃণমূল, দেশদ্রোহীদের নয়া ঠিকানা, অন্য প্রান্তে বিজেপি, বাঙ্গালি হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের একমাত্র দিশা। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এই ইঙ্গিতকেই স্পষ্ট করেছে। রাজ্যের শাসকগোষ্ঠীর একদা বাম বিরোধিতা আজ ইতিহাসের পাতাতেই শোভা পায়। একদিকে টুকরে গোষ্ঠী, অন্যদিকে জাতিদাঙ্গা সৃষ্টির পক্ষপাতী গোষ্ঠী, আবার নকশাল, জাতপাত-এম ভিত্তিক রাজনীতির ব্যাপারিরা—সব নিয়ে তৃণমূল দলটা আদতে হরেক রকমের দেশদ্রোহীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে নেতৃত্বের অপরিণামদর্শিতায় এটা মেনে নিতেই হবে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে বাঙ্গালি সেন্টিমেন্ট নিয়ে সুকৌশলে আরবীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে মিলিয়ে দিয়ে, তাকে আর্য-সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা। এই চেষ্টাটির নমুনা অনেকদিনই দেখা পাওয়া যাচ্ছে। পয়লা বৈশাখের সঙ্গে মোগল আমল, আরবীয় সংস্কৃতিকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি একদা যারা ভেঙেছিল আজ তারা ফসিল হলেও সেই মানসিকতার যে কোনও পরিবর্তন হয়নি, ফেসবুকে সেই প্রমাণ মিলছিল। হঠাৎ দেখা গেল বিদ্যাসাগর কলেজেমূর্তি ভাঙার পর সেই বিদ্যাসাগর বিদ্বেষীদের বিদ্যাসাগর প্রেম। নানাভাবে বিজেপি এবিভিপিকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছিল। লক্ষ্য ছিল ভোট। ভোট মিটল, কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ মিলল কই! বঙ্গের মনীষীরা কাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল, সবাই তা জানে। এদেরই উত্তরাধিকারীরা আবারও বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে।
গোবলয় শব্দটি আগে ব্যবহৃত হোত, এখন ‘গুটকাখোর’; জাতিবিদ্বেষের বিষবহ্নি ক্রমশ ছড়াচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে বাঙ্গালি হিন্দুর ভবিষ্যৎ। এই পক্ষ’দের মধ্যেই এখন নেতৃত্বের লড়াই চলছে, যে যাকে পাচ্ছে বহিষ্কার করছে। বাঙ্গালি হিন্দুরা এদের বিদায় করতে না পারলে অচিরেই দুর্যোগ আরও ঘনাবে।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.