কূটনৈতিক উত্তেজনার আবহে কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বুধবার এক্স হ্যান্ডলে ওই সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছেন। তাতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘‘কানাডার মাটিতে ভারতীয় নাগরিকেরা ভারত বিরোধী তৎপরতা এবং রাজনৈতিক প্ররোচনামূলক ঘৃণার জেরে হিংসার শিকার হতে পারেন।’’
কূটনীতির রীতি ভেঙে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। কানাডার মাটিতে সে দেশের খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের জন্য ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর দিকে ট্রুডো অভিযোগের আঙুল তোলায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে সে দেশে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যেও। বিদেশ মন্ত্রকের আশঙ্কা, ‘‘পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারত বিরোধী শক্তি ভারতীয় কূটনীতিক এবং ভারতীয় নাগরিকদের নিশানা করতে পারে।’’
চলতি মাসেই স্বাধীন ও সার্বভৌম খলিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে কানাডার কট্টরপন্থী শিখ গোষ্ঠী ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) অন্টারিও-সহ কয়েকটি এলাকায় জমায়েত এবং গণভোটের ডাক দিয়েছে। ভারতে নিষিদ্ধ এবং খলিস্তানপন্থী সংগঠন সাম্প্রতিক কালে কানাডার কয়েকটি ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষোভও দেখিয়েছে। এই আবহে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ এলাকাগুলি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের। ভারতীয় পড়ুয়াদের অবিলম্বে অটোয়ার ভারতীয় হাই কমিশন এবং টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারের কনস্যুলেট জেনারেলের দফতরে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের ওই সতর্কবার্তায়।
গত ন’মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের গুপ্তচর সংস্থার ভূমিকা ছিল বলে কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে সোমবার দাবি করেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রু়ডো। কানাডার তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিষয়টি নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কথা হয়েছে।
ট্রুডোর ওই বিবৃতির পরে কানাডার এক ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি ‘র’-এর কানাডার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাতেন। যদিও তাঁর নাম জানাননি মেলানি। ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার মোদী সরকার কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, নিজ্জর খুনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করে ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরোধী শক্তিকে কানাডা মদত দিচ্ছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়। বুধবার সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, ট্রুডো সরকারের মদতে অন্তত ২১ জন কট্টরপন্থী খলিস্তানি নেতা কানাডায় আশ্রয় পেয়েছেন। তাঁরা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সে দেশের ভারতীয় হাই কমিশন-সহ বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলিতে হাঙ্গামার ছক কষছেন বলেও ওই খবরে দাবি করা হয়েছে।