আপনি কি জানেন ? লোম্যান হত্যার পর পুলিশ যখন পাগলের মতন বিনয়কে খুঁজছে , নেতাজি সুভাষ বসু তাকে দেশত্যাগ করতে পরামর্শ দেন । আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বিদেশ যাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করার প্রস্তাব ও দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বিনয়, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা ছিল তুচ্ছ তাঁর কাছে ।
আপনি কি জানেন ? অলিন্দ যুদ্ধের পর বিনয় বসু যখন নিজের মাথায় গুলি করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন তখন কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট নিজের বুট দিয়ে অচৈতন্য বিনয়ের দুটো আঙ্গুল পিষে দিয়েছিলেন | কারণ তিনি সেদিন বিনয় বাদল দীনেশের বিক্রমের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন |
আপনি কি জানেন ? অলিন্দ যুদ্ধের পর যখন তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়েছিল সেইসময় পুলিশের গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বিনয় বলেছিল – “আমি আপনাদের ৫-হাজার টাকা (লোম্যান হত্যার পর বিনয়কে ধরিয়ে দেবার জন্য ৫-হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষিত ছিল) বাঁচিয়ে দিয়েছি, এর থেকে আর কি বেশি আশা করেন আমার থেকে?”
আপনি কি জানেন ? বিনয় অলিন্দ যুদ্ধের পর আহত অবস্থায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি থাকার সময় নিজের মাথার ক্ষতের ব্যান্ডেজ খুলে নিজেই ওর মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন | কেন জানেন? যাতে তাঁর সেপটিক হয়ে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে নিতে পারেন | তিনি সংকল্প করেছিলেন ইংরেজদের কাছে ধরা দেবেন না |
আপনি কি জানেন ? বিনয়ের মৃত্যুর পরের দিন কলকাতায় পোস্টার পড়েছিল “Benoy’s Blood Beckons For More Blood”. তাঁর মৃত্যুর খবরে মাথা নুইয়েছিল গোটা বাংলা |
বিনয় বসু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলেন | মেধাবী ছাত্র | ডাক্তারি পড়তেন | চাইলে সারাজীবন নিজের স্বার্থ দেখে পয়সা উপার্জন করে কাটিয়ে দিতে পারতেন | কিন্তু তিনি সেটা করেননি | তাঁর কাছে দেশের স্বাধীনতা ছিল সবকিছু | নিজের প্রাণ সেখানে অতি তুচ্ছ | ক্ষমতা ছিল শাসকদের অহংকারে আঘাত হানার এবং সেটা নিজের জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিনয়কৃষ্ণ বসু | কতটা সাহস থাকলে সকলের নজর এড়িয়ে পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করে দিনের আলোতে লোম্যানকে হত্যা করা যায় ? একবার ভেবে দেখুন | কতটা সাহস থাকলে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ঢুকে সিম্পসনকে হত্যা করা যায় কোনদিনও ভেবেছেন? একবার ভেবে দেখুন |
বিনয়-বাদল-দীনেশ মৃত্যুঞ্জয়ী | প্রত্যেকটি প্রকৃত বাঙালির হৃদয়ে আপনারা ছিলেন,আছেন আর থাকবেন।
আজ বিনয় বসুর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য |