তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা হেঁট করলেন না।
নিজের জীবনের সঙ্গে সাহিত্যের মিল থাকবে না ?
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাই জেলেই চলে গেলেন ।
তিনি নিজেই একদিন “গণদেবতা”- র নায়ক হয়ে গেলেন !
সেইসময় স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
ইংরেজ ভারত ছাড়।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তখন লেখক হিসাবে নামডাক হয়েছে।
তারাশঙ্করকে অনেক সাহিত্যিক বারণ করছেন, আন্দোলনে জড়িয়ে না পড়তে।
তারাশঙ্করের বন্ধু বিখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় তাঁকে বারবার সাবধান করছেন,
এভাবে জড়িয়ে পড়ো না।
ভুল করছো।বিপদে পড়বে। আমরা লেখক। আমাদের এসব কাজ নয়।
তারাশঙ্কর হেসে বললেন, দ্যাখো আমি জীবন আর সাহিত্যকে আলাদা করে দেখি না।
গল্প – উপন্যাসে ভাল ভাল কথা বলবো নিজের জীবনের ক্ষেত্রে সেটা মানবো না?
সেটা কি করে সম্ভব?
অবশেষে তারাশঙ্কর একদিন লাভপুরের এক গোপন ডেরা থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন।
বিচার হবে।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারাশঙ্কর।
এস ডি ও ছিলেন মণি সেন।
এস ডি ও – র তারাশঙ্করের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন।
এস ডি ও তারাশঙ্করকে বারবার অনুরোধ করলেন, আপনি একবার শুধু বলুন, আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
এসব নোংরা কাজ আর করবেন না।
তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো।
তারাশঙ্কর বললেন, দেশকে আমি ভালবাসি। আপনি একে নোংরা কাজ বলছেন! ছি!
তারাশঙ্কর মাথা হেঁট করলেন না
এক বছরের জেল হ’লো।
জেল থেকে একদিন মাথা উঁচু করে বেরিয়ে এলেন তারাশঙ্কর।
“জ্ঞানপীঠ ” পুরস্কারে সম্মানিত উপন্যাস “গণদেবতা” – র অন্যতম নায়ক দেবু পণ্ডিতের মত।
আজকাল এরকম মেরুদণ্ড সোজা রাখা সাহিত্যিক কোথায়?

প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য |

  • পীযূষ দত্ত

তথ্যসূত্রঃ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর সাহিত্যিক শৈলজানন্দের লেখা স্মৃতিচারণ
” মানুষ তারাশঙ্কর “

ছবি – বর্ষা কর্মকার ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.