যে জনগণের ভোটের জোরে তিনি বিধায়ক হয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী পিতার কল্যাণে মন্ত্রী হয়েছেন এই জনগণকে ভাইরাস বলে নির্মূল করে দেওয়ার যে হুমকি তিনি দিয়েছেন এর শাস্তি তিনি পাবেন

১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে বর্তমান তামিলনাড়ুর এক প্রভাবশালী রাজনেতার ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এই পুত্রের জন্মের চার-পাঁচ দিন আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবিসংবাদী নেতা স্টালিনের মৃত্যু ঘটে। স্টালিনের মৃত্যুতে দুঃখিত হয়ে রাজনেতা করুণানিধি তার পুত্রের নাম রেখে দেন স্টালিন। কিন্তু দেখা গেল যে এই স্টালিন এক জবরদস্ত ব্যক্তি। তার পিতা তার নাম রেখেছিলেন স্টালিন কিন্তু তিনি এটাকে তার পদবী করে দিয়েছেন। করুণানিধি হয়ত বা পুত্রকে বলেছেন যে ওরে অপোগণ্ড আমি তোর নাম স্টালিন রেখেছি। তোর পদবী তো করুণানিধি। কিন্তু বেটা বাপের কথা শুনলে তো। তিনি তার নাম দিয়েছেন এম কে স্টালিন। এখানে ‘কে’ হলো করুণানিধি। অর্থাৎ পদবীকে মাঝখানে রেখে নামকে পদবী করে দিয়েছেন। বাহ রে বাহ।

এম কে স্টালিনের পুত্র উদয়নিধি নিজের পদবী স্টালিন রেখেছেন বাপের দেখাদেখি। অর্থাৎ এই পরিবার থেকে করুণানিধি পদবী গায়েব হয়ে গেছে। ইদানীং এই স্টালিন বিশেষ করে হিন্দু সমাজের উত্থান ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ বাড়ছে দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তার ওপরে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর অসামান্য ব্যক্তিত্ব ও উত্থানে যেমন অনেকের পশ্চাদ্দেশে অগ্নি প্রদাহ শুরু হয়েছে এর থেকে উদয়নিধি রক্ষা পাবেন কি করে। গতকাল হাইলাকান্দির এক মুমিনের কমেন্ট পড়ে বুঝেছিলাম যে ইনি যেমন ভব্যতার সীমা লঙ্ঘন করে গেছেন নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা দেখে তেমনি স্টালিনের হয়েছে একই হাল। আমার কথা হলো যে পশ্চাদ্দেশে যদি এতই প্রদাহ তাহলে নিয়মিত রবিশকুমারের ইউটিউবে ভাষণ শুনলেই তো হয়। উনি তো ফায়ার ব্রিগেডের হোশ পাইপ নিয়ে বসে আছে এই আগুন নেভানোর জন্য। যত মুমিন, কম্যুনিস্ট, কংগ্রেসি ও অন্যান্য দলের নেতা সমর্থকদের জ্বালা জুড়ানোর জন্য তিনি দোকান খুলে বসেছেন। ওনার লেকচার কিছুক্ষণ শোনার পর মাথা ঠাণ্ডা করে জনগণের সামনে আসলে অন্তত রাজনৈতিক নেতার ভাবমূর্তি বজায় থাকে। কিন্তু এইটা না করে স্টালিন পদবী লাগানো এই রাজনেতা একেবারে সনাতন ধর্মকেই ভাইরাস বলে দিয়েছেন। এমন কি এর সামুহিক উচ্ছেদ করে দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। সিলেটিতে একটা শব্দ আছে ‘বাগর ছাগি’। অর্থাৎ কিনা ক্ষমতাবান ছাগল। তা যাই হোক তিনি যে একই সঙ্গে ডট ডট মার্কা গাঠবন্ধনের বেড়া পার করে দিয়েছেন এটা নিশ্চিত। এখন অন্যেরা চুপ করে বসে আছেন কারণ যদি বলেন আমি স্টালিনের সঙ্গে একমত নই তাহলে মুসলিম ভোটে ছেদ পড়বে। এখন মুসলিম ভোট তো লাগে কাজেই স্টালিনের কথা প্রতিবাদ তো করা যাবে না। তবে কুছ পরোয়া নেহি। স্টালিনকে নীরবে সমর্থন জানিয়ে আমরা পৈতে পরে হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে হিন্দু ভোট কব্জায় রাখব।

এখন নরেন্দ্র মোদী তার সভাসদদের ডেকে বলে দিয়েছেন যে এই ধরণের বক্তব্যকে মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি এই প্রচার আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলতে থাকবে। এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির দিকে ঝুঁকে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এই পাঁচ শতাংশের কারণে অন্তত কুড়ি পঁচিশটা আসন বেশি পাবে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী আর যাই হোক তিনি একজন রাজনীতিবিদ। একজন রাজনীতিবিদ হয়ে বিরোধী দলের এই ভুলের তিনি ফায়দা নেবেন না এটা তো হতে পারে না। তাই জায়গায় জায়গায় ধর্না প্রদর্শন, টিভিতে ডিবেট ইত্যাদি চালিয়ে যাওয়ার পন্থা তিনি গ্রহণ করেছেন। মোটের ওপর প্রতিজন হিন্দুর মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিতে হবে যে এই ডট ডট গাঠবন্ধন হিন্দু বিরোধী। অনেকে স্টালিন পদবী দেখে ইনাকে খ্রিস্টান বলে ধরে নিয়েছেন। যার ফলে খ্রিস্টানদের কিছুটা বিব্রত বোধ করার কথা। তবে স্টালিন বিজেপির হাতে যে ব্রহ্মাস্ত্র তুলে দিয়েছেন এর প্রহার এমন হবে যে ইনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। উপরন্তু তিনি যে সভায় ভাষণ দিয়েছেন সেই অনুষ্ঠানের নামকরণ ছিল হিন্দু উৎখাত সম্মেলন। কাজেই মাফ চেয়ে খুব একটা লাভ হবে না। উপরন্তু তামিলনাড়ুতে মুসলিম ও কম্যুনিস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। এই রাজ্যের ৭ কোটি ৩৩ লক্ষ জনগণের মধ্যে মুসলিম পপুলেশন ৪৯ লক্ষ। খ্রিস্টান পপুলেশন ৫১ লক্ষ। আর কম্যুনিস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। উপরন্তু তামিলনাড়ু কিংবা কর্ণাটকে বিশাল বিশাল সব মন্দির রয়েছে যেখানে প্রতি নিয়ত ভিড় দেখা যায়। এখানের হিন্দুরা অনেকটাই ধর্মপ্রাণ। কাজেই স্টালিনের এই পার্জনীতির ঘোষণার কারণে এই উদয়নিধির ভাগ্যাকাশে অমাবস্যার চাঁদই উদিত হবে অদূর ভবিষ্যতে। মনে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর বাড়তি জনপ্রিয়তায় কিছু লোক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। ইনাকে নিয়ে গাঠবন্ধন এখন মহা আতান্তরে আছে।

অর্থশান্ত্রী সুমপিটারের ‘এন্ড অব ওয়েস্টার্ন ক্যাপিটালিজম’ নামক থিওরি এক সময়ে পড়েছিলাম। কী করে ক্যাপিটালিজমের পতন ঘটবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। ওনার থিওরিতে একটা কথা আছে যে এক সময়ে কিছু লোক তাদের কর্মকুশলতা দিয়ে একেকটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন বটে কিন্তু তাদের উত্তরাধিকারীরা জন্ম থেকেই এমন ভাবে বেড়ে ওঠে যে এক সময়ে তাদের সেই অ্যাকুমেন থাকে না এই বিশাল সাম্রাজ্যকে ধরে রাখার। অর্থাৎ তাদের ক্ষমতার তুলনায় সংগঠন বড় হয়ে যায়। এদের অপদার্থতার কারণে এক সময়ে বিশাল বিশাল ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো শেষ পর্যন্ত ম্যানেজারিয়েল স্টাফের হাতে চলে যায়। এই ম্যানেজাররা তো মালিক নন তাই তাদের নিষ্ঠা সেরকম থাকে না। তাই মালিক যদি গর্দভ হোন তাহলে ঘোড়ারা আস্তাবল ছেড়ে চলে যান আর গাধারা টিকে থাকেন। বর্তমানে আদর্শবিহীন পরিবারভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো একেকটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। আজ এখানে গিয়ে পৈতে পরে মন্দিরে পুজো দেওয়া তো কাল টুপি পরে মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়া। কোন সম্প্রদায় বিশেষের ভোট কব্জা করার এই পন্থা আজ এতই পুরনো হয়ে গেছে যে আজকের দিনে এটা আর চলে না। নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন কিছু করতে হবে। কারণ অতি ব্যবহারে ব্রহ্মাস্ত্র পর্যন্ত ভোতা হয়ে যায়। আর নতুন কিছু উদ্ভাবন করার মতো প্রতিভা এদের মধ্যে নেই। কাজেই এই স্টালিন পদবীধারী হিন্দু ব্যক্তিটি করুণানিধির ডিএমকে দলের বেড়া পার করে দেবেন এটা নিশ্চিত। একটি বিশেষ পরিবারে জন্মেছেন দেখে তিনি আজ তামিলনাড়ুর যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রী। নিজের ক্ষমতায় এটাও হতো না। যাই হোক, উদয়নিধি স্টালিন যে ডিএমকে দলের সর্বনাশ করে ফেলবেন এটা তো নিশ্চিত। যে জনগণের ভোটের জোরে তিনি বিধায়ক হয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী পিতার কল্যাণে মন্ত্রী হয়েছেন এই জনগণকে ভাইরাস বলে নির্মূল করে দেওয়ার যে হুমকি তিনি দিয়েছেন এর শাস্তি তিনি পাবেন। দেশের অনেক জায়গাতেই ইনার নামে এফআইআর করা হয়েছে। কেস যত চলবে আদালতের বয়ানের ওপর টিভি চ্যানেলে এই নিয়ে আলোচনা হবে। বারবার ওনার বক্তব্য দেখানো হবে নানান কারণে। কোর্টের রায়ে শাস্তি হোক কিংবা না হোক আগামী লোকসভা নির্বাচনে এর পরিণাম ডট ডটদের জন্য ভালো হবে না। এই গাঠবন্ধন এই ভস্মাসুরকে জোটে রাখবে না বিদেয় করবে সেটা তারাই জানে। তবে রাখলে পরে ইনার এই বক্তব্যকে কাজে লাগাবে বিজেপি।

রজত কান্তি দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.