একটা সময় দেখে মনে হয়েছিল হাসতে হাসতে শ্রীলঙ্কাকে হারাবে ভারত। ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে ৯৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও লড়াই করলেন শ্রীলঙ্কার দুই ক্রিকেটার ধনঞ্জয় ডি’সিলভা ও দুনিথ ওয়েল্লালাগে। খেলা প্রায় ভারতের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা। চাপে পড়ে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ ধরে রাখল ভারত। অনেক চেষ্টা করেও জিততে পারল না শ্রীলঙ্কা। ৪১ রানে জিতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে গেলেন রোহিত শর্মারা। শুক্রবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়াল। অন্য দিকে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হয়ে দাঁড়াল সেমিফাইনাল। কারণ, দু’দলেরই পয়েন্ট সমান (দুই ম্যাচ খেলে ২)। বৃহস্পতিবার যে দল সেই ম্যাচ জিতবে সেই দল ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলবে। যদি পাকিস্তান সেই ম্যাচ জেতে তা হলে রবিবার ফাইনালে আবার ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। ভারতীয় ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ছবিটা অন্য রকম ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের মতো শ্রীলঙ্কার কপালেও দুর্ভোগ আছে। রোহিত ও শুভমন গিল শুরুটা যেমন করেছিলেন তাতে আরও এক বার ৩০০-র বেশি রানের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু দুনিথ ওয়েল্লালাগে বল হাতে নেওয়ার পরেই ছবিটা বদলে গেল। হঠাৎ করে যেন পিচটাই বদলে গেল। বল ঘুরতে শুরু করল। পিচে পড়ে থমকালো। আর তাতেই খতম ভারতীয় ব্যাটারদের জারিজুরি। বেরিয়ে এল ব্যাটিংয়ের কঙ্কালসার চেহারা। কোনও ব্যাটার দাঁড়াতে পারলেন না স্পিনারদের সামনে।
প্রথম ১০ ওভারে পিটিয়ে খেলছিলেন রোহিত ও শুভমন। বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন রোহিত। ১০ ওভারের মধ্যেই নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার পেসারদের খেলতে কোনও সমস্যাই হচ্ছিল না ভারতীয় ব্যাটারদের। হাত খুলে খেলছিলেন তাঁরা। তখনই স্পিনারদের দিকে তাকান শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শনাকা। বল তুলে দেন ওয়েল্লালাগের হাতে। ওয়েল্লালাগে শুরুটা করেন শুভমনকে দিয়ে। বাঁ হাতি স্পিনারের বল মিডল স্টাম্পে পড়ে বাঁক খায়। শুভমন ভুল লাইনে খেলেন। তিনি ভাবতেই পারেননি বল অতটা ঘুরবে। অফ স্টাম্পে গিয়ে বল লাগে। ১৯ রানে ফেরেন শুভমন। দু’ওভার পরেই ওয়েল্লালাগের শিকার বিরাট কোহলি। বল পিচে পড়ে একটু থমকে এল। বিরাট টাইমিং করতে পারলেন না। শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাত্র ৩ রানে।
ভারতকে ওয়েল্লালাগে সব থেকে বড় ধাক্কা দিলেন ১৬তম ওভারে। ৫৩ রান করে খেলা রোহিতকে বোল্ড করলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য রোহিতের ভাগ্য খানিকটা দায়ী। বলে পড়ে অনেকটা নিচু হল। রোহিত ব্যাট নামানোর আগেই উইকেট ভেঙে গেল।
তিন উইকেট পড়ার পরে কিছুটা জুটি বেঁধেছিলেন ঈশান কিশন ও লোকেশ রাহুল। ৬৫ রান যোগ করেন তাঁরা। যদিও রানের গতি খুব ধীরে ছিল। ভারতের দুই ব্যাটার ২৫০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলছিলেন। কিন্তু ৩০তম ওভারে আবার কামাল করলেন ওয়েল্লালাগে। রাহুলকে ৩৯ রানের মাথায় ফেরান তিনি। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরেন স্পিনার।
ওয়েল্লালাগের বোলিং দেখে একের পর এক স্পিনারকে আক্রমণে নিয়ে আসেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক শনাকা। মাহেশ থিকশানা, ধনঞ্জয় ডি’সিলভাদের পাশাপাশি চরিথ আসালঙ্কের হাতেও বল তুলে দেন তিনি। পার্ট টাইম স্পিনার আসালঙ্কও সমস্যায় ফেললেন ভারতীয় ব্যাটারদের। ৩৩ রানের মাথায় ঈশানকে আউট করেন তিনি। স্পেলের শেষ বলে হার্দিক পাণ্ড্যকে আউট করে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন ওয়েল্লালাগে। ১০ ওবারে ৪০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি।
ভারতের নীচের দিকের ব্যাটারদের আউট করার দায়িত্ব নেন আসালঙ্ক। রোহিতদের শেষ আশা রবীন্দ্র জাডেজাকে ফেরান তিনি। পর পর দু’বলে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবকে। পিচ থেকে যে সাহায্য পাচ্ছিলেন তা ভাল ভাবে কাজে লাগান আসালঙ্ক। তাঁর বল যে ভাবে ঘুরছিল তাতে দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তিনি পার্ট টাইম স্পিনার। শেষ পর্যন্ত ভারতের রান ২০০ পার করেন অক্ষর পটেল। ২৬ রান করে তিনি আউট হলে ৪৯.১ ওভারে ২১৩ রানে অল আউট যায় ভারত। এই প্রথম ভারত তাদের ১০টি উইকেটই স্পিনারদের কাছে হারায়। পাশাপাশি টানা ১৪টি এক দিনের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অল আউট করে শ্রীলঙ্কা।
ভারতের ব্যাটারদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, এই পিচে ভারতীয় স্পিনারদের খেলতেও সমস্যা হবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের। কিন্তু স্পিনারদের আগে দাপট দেখালেন ভারতের পেসারেরা। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পাথুম নিশঙ্ককে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। রান পাননি আর এক ওপেনার দিমুথ করুণারত্নেও। তাঁকে আউট করেন ভারতের আর এক পেসার মহম্মদ সিরাজ। কুশল মেন্ডিসকে ফেরান বুমরা। ২৫ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় শ্রীলঙ্কার।
চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার নায়ক সাদিরা সমরবিক্রম ও চরিথ আসালঙ্ক। কিন্তু বেশি ক্ষণ তাঁরাও টিকতে পারেননি। কুলদীপ যাদব বল করতে আসার পর থেকেই সমস্যায় পড়েন ব্যাটারেরা। সমরবিক্রম ও আসালঙ্ক দু’জনকেই আউট করেন কুলদীপ। দাসুন শনাকাকে ফেরান রবীন্দ্র জাডেজা। ১০০ রানের আগেই ৬ উইকেট পড়ে যায় শ্রীলঙ্কার।
সেখান থেকে লড়াই কঠিন ছিল। সেই কঠিন লড়াইটাই লড়লেন ডি’সিলভা ও ওয়েল্লালাগে। প্রথমে ধীরে ধীরে খেলছিলেন তাঁরা। উইকেট ধরে রাখছিলেন। লক্ষ্য কম থাকায় দ্রুত রান তোলার দরকার ছিল না। সেটা সাহায্য করল তাঁদের। কুলদীপ ও জাডেজা ভাল বল করলেও ভারতের তৃতীয় স্পিনার অক্ষর উইকেট থেকে সাহায্য পাননি। তাই তাঁকে নিশানা করেন শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটার। ধীরে ধীরে লক্ষ্য কমছিল। ৫০ রানের জুটি করার পরে আরও কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন জাডেজা। অনেক চেষ্টা করেও দলকে জেতাতে পারেননি ওয়েল্লালাগে। জিতেই মাঠ ছাড়ে ভারত।