বর্ষা মানেই ছাতা। অথচ, ছাতার আবিষ্কার কিন্তু একেবারেই বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য তৈরি হয়নি। বরং, ছাতা তৈরি হয়েছে রোদ থেকে বাঁচার জন্যেই। আমব্রেলা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘আমব্রা’ শব্দ থেকে। এই ‘আমব্রা’ শব্দের অর্থ হল ছায়া। সূর্য থেকে রক্ষা পেতে কৃত্রিম ছায়ার জন্যেই ছাতা বা আমব্রেলার আবিষ্কার। ছাতার আবিষ্কার হয়েছে চিন দেশে, সেটাও প্রায় তিন হাজার বছর আগে। চিনারা আবিষ্কার করার পর, ছাতার ব্যবহার শুরু করেন কোরিয়ানরা। তারপর এশিয়ার আরও কিছু দেশ। এরপরেই ছাতা পাড়ি দেয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। রোমানদের কাছে খুব তাড়াতাড়িই প্রিয় হয়ে উঠেছিল ছাতা। এমনকি ইউরোপের নবজাগরণের সময়েও ছাতার ব্যবহারের কথা জানা যায়।
ছাতা আবিষ্কারের পর তা শুধুমাত্র মেয়েদের মধ্যেই প্রচলন ছিল। পুরুষ কিন্তু ছাতা ব্যবহার করা শুরু করেছে অনেক পরে। আর মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস হলেও, সব মেয়েরা শুরুর দিকে ছাতার ব্যবহার করতে পারত না। শুধুমাত্র সমাজের সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী পরিবারের মহিলারাই ছাতার ব্যবহার করতেন। ছাতা ছিল সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তির প্রতীক। চিনের প্রাচীন শহর সংজিয়াতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ছাতা প্রস্তুতকারক সংস্থা আছে। যার জন্য এই শহরকে ‘পৃথিবীর ছাতা’ বলা হয়। কর্মীরা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪০টি ছাতা তৈরি করেন। যেহেতু ছাতা ছিল মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস, তাই ছেলেদের এটা ব্যবহার করা হত না। পুরুষদের মধ্যে প্রকাশ্যে প্রথম ছাতা ব্যবহার করেন ইংরেজ জোনাস হানওয়ে। শোনা যায় তিনি একবার অবিভক্ত বাংলায় এসেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তুমুল গরমে তাঁর সঙ্গী ছিল ওই ছাতা। তারপর থেকেই পুরুষরা ছাতা ব্যবহার করা শুরু করলেন, বিদেশে ও এদেশে। ছাতা শুধু রোদ থেকে বাঁচার জিনিস রইল না। হয়ে গেল আত্মরক্ষার অন্যতম অস্ত্র। বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জিওর্জি মারকোভ নিজের নিরাপত্তার জন্য ছাতার মধ্যে সরু তরোয়াল লুকিয়ে রাখতেন।
আমাদের বাংলায় ছাতা এসেছে এই ইংরেজদের হাত ধরেই। এখন তো বিভিন্ন ধরনের ছাতা আবিষ্কার হয়েছে। বদলেছে তার চেহারা। বাংলায় ছাতা ব্যবহারের মাত্রাও পৌঁছে গেছে বিভিন্ন স্তরে। গ্রাম বাংলায় চাষিরা মাথায় টোকা পরে থাকেন। মূলত রোদ ও বৃষ্টি উভয়ের থেকেই রক্ষা পেতে। ছাতার কালো রং প্রায় বদলে রামধনু আকার ধারণ করেছে। তবে একটি প্রাসঙ্গিক কথা হল, যে ছাতা আবিষ্কার হয়েছিল নিজেদের রোদ থেকে বাঁচার জন্য, সেই ছাতার ব্যবহার এখন রোদে অনেকটা কমে গেছে। অনেক বাড়িতেই ছাতা বের হয় বর্ষাকালের দুই-তিনমাস। বাঙালির ইতিহাস এভাবেই পাল্টে যায়। তার চেহারা যুগ ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যনতুনভাবে সেজে ওঠে।