বাগুইআটিতে দিনেরবেলায় প্রকাশ্যে চলছে জুয়া খেলা, কী করছে পুলিশ? ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের

সাট্টা-জুয়ার ব্যবসা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বাগুইআটি থানা এলাকায়। অভিযোগ, প্রকাশ্য রাস্তায় তো বটেই, ঠেক বসছে বাগুইআটি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই। স্থানীয়েরা এ নিয়ে বিরক্ত বোধ করলেও প্রশাসনিক স্তরে সাট্টা-জুয়া বন্ধে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। এমনকি, স্থানীয়দের এমনও অভিযোগ যে প্রশাসনের একাংশের মদতেই রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন জুয়ার কারবারিরা।

এক দুপুরে বাগুইআটি থানা এলাকার অদূরেই চোখে পড়ল প্রকাশ্যে চলা জুয়ার ব্যবসা। অর্জুনপুর বাজারের কাছে কোথাও বাঁশ-ত্রিপলের ঘর তৈরি করে ব্যবসা চলছে, কোথাও আবার বাজার ব্যবসায়ীদের জন্য তৈরি পাকা দোকানঘরের ভিতরে রমরমিয়ে চলছে জুয়া। প্রকাশ্যে সেখানে এসে টাকা লাগাচ্ছেন গ্রাহকেরা। বেপরোয়া এবং নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই ঠেকে বসে হিসাব রাখার কাজ করছেন লোকজন। জুয়ার ব্যবসার এমন ছবি দেখা গিয়েছে জোড়ামন্দির কিংবা কেষ্টপুর এলাকাতেও। জোড়ামন্দিরে উড়ালপুলের আশপাশে, বাগুইআটি মোড়ে যেখানে মাছের বাজার রয়েছে, কেষ্টপুরে অটো স্ট্যান্ডের লাগোয়া রাস্তায় জুয়ার বোর্ড চলতে দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখেও কারবারিদের মধ্যে কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি।

বাগুইআটির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাগুইআাটি মোড়ে চোরাগোপ্তা একাধিক ঠেক চলছে। ছোট ছোট গুমটি তৈরি করে খেলা হচ্ছে লটারি, জুয়া, সাট্টা। উল্লেখ্য, সাট্টা-জুয়া, গাঁজা, বেআইনি মদের ব্যবসা বাগুইআটি, কেষ্টপুর, নিউ টাউনে নতুন নয়। পুলিশি নজরদারি সামান্য ঢিলেঢালা হলেই ওই সব কারবার সেখানে মাথাচাড়া দেয় বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে অবধি লোটোর রমরমা কারবার ছিল ওই সব এলাকায়। ইকো পার্ক থানা ও বাগুইআটি থানা বেশ কিছু ঠেক বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি নতুন করে সাট্টা-জুয়া চালু হয়েছে বলে অভিযোগ ।

বাগুইআটি থানার অধীনে রয়েছে জগৎপুর এলাকা। সেখানে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ নাগ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাট্টা-জুয়ার ব্যবসা নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘জগৎপুরে অনেক জায়গায় ঠেক চলছে। প্রশাসন সক্রিয় না হলে সাট্টা-জুয়া বন্ধ করা কঠিন। আমি কয়েক জায়গায় চেষ্টা করে বন্ধ করেছিলাম। এখন আবার সেই সব ঠেক চালু হয়ে গিয়েছে।’’ উল্লেখ্য, যে সব জায়গায় নিম্নবিত্ত, দিন আনা-দিন খাওয়া লোকজনের বসতি বেশি, সেই সব এলাকা থেকেই ওই কারবার চলার অভিযোগ আসছে। আরও একটি প্রবণতার কথাও জানা গিয়েছে। তা হল, ওই সব এলাকায় প্রোমোটিংয়ের কারণে কলকাতার বাইরে থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ঠেকগুলিতে গিয়ে ভিড় করছেন। যে কারণে লটারি, সাট্টা, জুয়ার ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে ওই সব এলাকায়।

স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ চোখ বন্ধ করে থাকায় ভিআইপি রোডের মতো রাস্তার পাশেই সাট্টা-জুয়ার ব্যবসা চলতে পারছে। তাঁদের মতে, ভিআইপি রোডের উপর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সহ নানা বিশিষ্ট মানুষের যাতায়াত। ফলে ওই রাস্তার উপরে পুলিশি নজরদারি থাকেই। কী করে সেই নজরদারি সত্ত্বেও ওই রাস্তায় সাট্টা-জুয়া চলছে, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা।

এ নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। তা করা হলে নিশ্চয় পদক্ষেপ করা হত। অতীতে একাধিক বার এই ধরনের ঘটনায় পদক্ষেপ করা হয়েছে। তা-ও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.