ইন্ডিয়া নয় ভারত। শুধুই জল্পনা যে নয় তা ফের বেরিয়ে এল কেন্দ্রের এক নথিতে। জি ২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি যে ডিনারের আমন্ত্রণ করেছেন সেই আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া নয়’। এনিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফর উপলক্ষ্যে সরকারি নোটে লেখা হয়েছে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’। ইন্ডিয়া নয়।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বসতে চলেছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, ওই অধিবেশনেই আমাদের দেশের নাম ইংরেজিতে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। গতকালই বিষয়টি তুলে ধরেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। রাষ্ট্রপতির পাঠানো ডিনারের আমন্ত্রণপত্রে প্রেসিডিন্ট অব ইন্ডিয়া লেখার উল্লেখ করে রমেশ ট্যুইট করেছেন, খবরটা তাহলে সত্যি! জি ২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর একটি ডিনারের আয়োজন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে রাষ্ট্রপতি অতিথিদের যে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন তাতে প্রসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার বদল লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট অব ভারত। অর্থাত্ এখন থেকে সংবিধানের ১ নম্বর ধারা এভাবে পড়তে হবে, একসময় ছিল ইন্ডিয়া। এখন হয়েছে ভারত। এটি হবে প্রদেশগুলির ইউনিয়ন। এবার দেশের ইউনিয়ন অব স্টেটও হুমকির সম্মুখীন।
আসিয়ান-ভারত সম্মেলনে যোগ দিতে আজ ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফরের সেই সরকারি নোট প্রকাশ্যে এসেছে। ইংরেজিতে লেখা সেই নোটে লেখা হয়েছে প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত। প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া নয়। অর্থাত্ দেশের নাম ইংরেজিতে ইন্ডিয়া থেকে বদলে কেন্দ্র যে ভারত করার দিকে এগোচ্ছে তা একপ্রকার স্পষ্ট।
এদিকে, দেশের নাম পরিবর্তনের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ইন্ডিয়া-র নাম বদল করে দিচ্ছে আমি শুনলাম। জি ২০-র ডিনারের জন্য মানণীয় রাষ্ট্রপতির নামে যে কার্ড হয়েছে তাতে লেখা রয়েছে ‘ভারত’। আরে ভারত তো আমরা বলি। এতে নতুনত্বের কী আছে? ইংরোজিতে বলি ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলে ভারত কা সংবিধান। আমরা তো বলি-ভারত আমর ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। কিন্তু ইন্ডিয়া নামে গোটা বিশ্ব আমাদের চেনে। হঠাত্ এমন কী হল যে দেশের নামটাও বদল হয়ে যাচ্ছে? হয়তো একদিন রবি ঠাকুরের নাম বদল হয়ে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয়, বড়বড় ঐতিহাসিক সৌধগুলির নাম চেঞ্জ করে দিচ্ছে। ইতিহাস বদল করে দিচ্ছে!
এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও। গতকালই এক ট্যুইট করে তিনি লেখেন, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে যখন অবিজেপি দলগুলি ‘ইন্ডিয়া’ জোটে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই বিজেপি দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে বদলে ভারত করার পরিকল্পনা করেছে। বিজেপি বলেছিল ইন্ডিয়ার ভোল বদলে দেবে। এখন যেটা দেখা যাচ্ছে দেশের নামই বদলে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরা এবারে ইন্ডিয়া জোটের শক্তি টের পাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।
সূত্রের খবর, আগামী ১৮-২২ সেপ্টেম্বর সংসদে যে বিশেষ অধিবেশন বসতে চলেছে সেখানে সংবিধান সংশোধন করে দেশের ইংরেজি নাম ভারত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। দেশের নাম যে ভারত হওয়া উচিত তা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন একাধিক বিজেপি নেতা। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ট্যুইট করেছেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত’। ভাবতে ভালো লাগছে আমাদের সভ্যতা অমৃতকালের দিকে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমাদের দেশটার নাম ভারত। এনিয়ে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কংগ্রেসের সবেতেই সমস্যা।