জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং বিশেষ মর্যাদা লোপের পর কাশ্মীরে এই এলেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাংসদদের একটি দল। ৩৭০ ধারা লোপের পর এই প্রথম কোনও বিদেশী প্রতিনিধিরা উপত্যকায় পা রাখলেন।
এই সফরকে কেন্দ্র করে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। গত ৫ই অগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্র। সেই সঙ্গেই লোপ পায় উপত্যকার বিশেষ মর্যাদাও। এরপর থেকেই কোনও বিরোধী নেতৃত্বকে কাশ্মীরে সহজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বিরোধী পক্ষের নেতাকে। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন বিদেশী সাংসদদের অবাধে ভূস্বর্গে ঢুকতে দিলেও, দেশের বিরোধী নেতাদের কেন ঢুকতে দেওয়া হবে না?
আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই ২৭ সদস্যের সাংসদদের দল ভূস্বর্গে পৌঁছে গিয়েছেন। যদিও এই সাংসদদের সফরকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। ২৭ জন সাংসদদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩ সদস্যই বামঘেঁষা কিংবা নিরপেক্ষ। বাকি সিংহভাগ সাংসদই অতি দক্ষিণপন্থী। ২৭ সদস্যের এই দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য ৪জন সাংসদকে উপত্যকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা শ্রীনগর থেকে যাত্রা শুরু হয় এই ইউরোপীয় ইউনিয়ন দলের সদস্যদের। তাদের সেই সব স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে আটক করে রাখা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে।
এরপরে তাঁদের গন্তব্য ছিল কাশ্মীরের ভারতীয় সেনাবাহিনির সদ্রর দফতর। এখানে তাঁদের উপত্যকার সুরক্ষার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়। এখানে বিজেপির বহু নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা।
কিন্তু বারবার অভিযোগ ওঠে বিদেশী এই সাংসদদের দলটিকে কোনও সমাজকর্মী বা সাধারণ কাশ্মীরিদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ওই দলটির সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই সাংসদ দেখা করতে চাইলেও তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।
বিদেশী সাংসদদের এই দলটির যাত্রা শেষ হয় ডাল লেকে নৌকো চড়ার মধ্য দিয়ে।
এই সফর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য নাথান গিল জানান, কাশ্মীরের অবস্থাটা ঠিক কি সেটা জানার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর এক সাংসদ থিয়েরি মারিয়ানি বলেন, আমরা কাশ্মীরের আসল পরিস্থিতি দেখতে চাই। অন্তত ওরা আমাদের কি দেখাতে চায় সেটাই দেখতে চাই।
এর মাঝেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর এক সাংসদ থেরেসা গ্রিফিন টুইট করেন, ‘এই সফর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বলা হলেও আদতে এটা সত্যি নয়। অতি দক্ষিণপন্থী সদস্যরা কাশ্মীর সফর করলেও তাঁরা নিজেদের খরচায় গিয়েছেন। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও সরকারি সফর নয়।”
আরও এক সাংসদ ক্রিস ডেভিস সাংবাদিকদের কাছে আবার বিস্ফোরক দাবী করেছেন। তাঁকে কাশ্মীর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে তিনি জানান কাশ্মীরে তিনি কোনও নিরাপত্তা আধিকারিক বা কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের ছাড়া ঘুরতে চেয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি মোদি সরকারের জনসংযোগের পুতুল হিসাবে সব ঠিক আছে এই ভাবে থাকতে চাইনি। কাশ্মীরে গণতন্ত্র ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। তাই এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে আনা প্রয়োজন।”