স্ট্যালিন “গ্রেট পার্জ” নামে যে নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেছিলেন, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়‌ও সেখান থেকে রেহাই পাননি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্লিন হয়ে উঠেছিল প্রবাসী ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটি কেন্দ্র। প্রবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উল্লেখযোগ্য ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ওরফে “চট্টো” , সরোজিনী নাইডুর ভাই এবং “সিধুজ্যাঠা” হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাদা।
১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় শ্যামজি কৃষ্ণবর্মার সান্নিধ্যে এসে বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং পরবর্তী সময়ে বীর সাভারকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকর্মীতে পরিণত হন। ১৯০৯ সালে সাভারকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মদনলাল ধিংড়া স্যার উইলিয়াম কার্জন উইলিকে হত্যা করেন। সাভারকর মদনলাল ধিংড়ার সমর্থনে এগিয়ে আসেন। সাভারকরের সমর্থনে দ্য টাইমস্ পত্রিকায় একটি চিঠি লেখেন বীরেন্দ্রনাথ। ফলস্বরূপ মিডল টেম্পলের থেকে বহিষ্কৃত হন।
১৯১০ সালে সাভারকরের গ্রেফতারের পর লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউসে ব্রিটিশ পুলিশের ধরপাকড় বেড়ে যায়। গ্রেফতারি এড়াতে চট্টো পালিয়ে যান প্যারিসে। সেখান থেকে বার্লিন। বার্লিনে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।বস্তুত বীরেন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের নেতা। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বার্লিনের ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে চট্টো‌ই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মস্কো যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন চট্টো ছিলেন বহু ভাষাবিদ, পন্ডিত এবং মজলিস জমাতে পারদর্শী।
১৯৩৩ সালে জার্মানিতে হিটলারের শাসন জারি হলে চট্টো মস্কো চলে যান। তিরিশের দশকের শেষের দিকে স্ট্যালিন “গ্রেট পার্জ” নামে যে নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেছিলেন, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়‌ও সেখান থেকে রেহাই পাননি। সাভারকর প্রতিটি রাজনৈতিক নেতার কাছে চিঠি লিখেছিলেন এঁকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু সাভারকরের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় নি।

পিনাকী পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.