[ ১ ]
হিমালয়ের নির্জন প্রান্তরে যেখানে ভগিনী নিবেদিতার শেষকৃত্য করা হয়েছিল সেই পবিত্র স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে ; সেটিতে লেখা রয়েছে : এখানে ভগিনী নিবেদিতা শান্তিতে নিদ্রিত – যিনি ভারতবর্ষকে তাঁর সর্বস্ব অর্পণ করেছিলেন। মূল ইংরেজি : HERE REPOSE THE ASHES OF SISTER NIVEDITA WHO GAVE HER ALL TO INDIA.
স্বামীজীর শিষ্যা নিবেদিতা স্বামীজীর মতই অল্পায়ু। দেহত্যাগের সময় তাঁর চুয়াল্লিশ বছর হতে কিছু দিন বাকী ছিল। কিন্তু তাঁর জীবনের মহান দিকগুলির কথা মস্ত বই লিখেও শেষ করা যায় না। দার্জিলিঙ – এ তাঁর শ্মশানে স্মৃতিস্তম্ভে উৎকীর্ণ কথা ক’টিই তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয়। আমরা শুধু তাঁর বাগবাজার পল্লীতে অবস্থান ও সেবাকাজের একটি রেখাচিত্র আঁকবো – এই প্রবন্ধে।
হিন্দু নারীদের মধ্যে কাজ করার জন্য হিন্দু জীবনযাত্রা প্রয়োজন। স্বামী বিবেকানন্দের এই অভিমত নিবেদিতা গ্রহণ করেছিলেন। শ্রীশ্রীমা তখন কলকাতায় ছিলেন। নিবেদিতার তাঁর নিকটে বাস করবার একান্ত ইচ্ছা। স্বামীজী শ্রীমার কাছে তাঁর থাকবার ব্যবস্থা করে দিলেন। মা তখন ১০/২ নং বোসপাড়া লেনে যে বাড়িতে বাস করছিলেন, তার প্রবেশ পথে দুইদিকে দুটি ঘর। একটি ঘরে ছিলেন অসুস্থ স্বামী যোগানন্দ। অন্যটিতে নিবেদিতার থাকবার ব্যবস্থা ছিল।
[ ২ ]
শ্রীমা তাঁকে আদরে গ্রহণ করলেন। শ্রীমার এই কাজটি সে-সময়ে যে কী বৈপ্লবিক ও দুঃসাহসিক ছিল, নিবেদিতা তখন তা কল্পনাও করতে পারেননি। পরে এজন্য তাঁর অনুশোচনার অন্ত ছিল না। আট-দশ দিন পরে তিনি ১৬ নম্বর বাড়িটিতে উঠে গেলেন। আরো পরে ১১নং বোস পাড়া লেনে এই বাড়িটি শ্রীমায়ের বাসস্থানের নিকটেই। শ্রীমা এবং স্বামীজীকে কেন্দ্র করে যে ভক্ত-সমাজ, সেই সমাজে তাঁর স্থান হয়েছিল। পরে উদার ও শিক্ষিত হিন্দুদেরও তিনি শ্রদ্ধার পাত্রী হয়েছিলেন। বাগবাজার পল্লীর ছোট থেকে প্রবীণা মহিলা পর্যন্ত প্রতি গৃহের অধিবাসীদের মধ্যে কে না তাঁর গুণে মুগ্ধ ছিলেন ? নিবেদিতা নিজেই নিতান্ত আপনার জন জ্ঞানে তাঁদের নিকট গেছেন। তাঁরাও তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখেননি।
এবার বাগবাজারে নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় নামে যে বিদ্যালয়টি বর্তমানে সুপরিচিত, তার সূচনাপর্বে ভগিনী নিবেদিতার ভূমিকার কথা বলি। নিবেদিতার ব্যবস্থাপনায় পাড়ার ছোট ছোট মেয়েগুলি প্রতিদিন ১৬ নম্বর বোস পাড়া লেনে সিস্টারের চারপাশে সমবেত হয়। হাসিমুখে তিনি তাদের নিয়ে খেলা করেন। রং ও তুলি দেন মেয়েদের এবং তারা কাগজের ওপর যার যেমন খুশি ছবি আঁকে। নিবেদিতা ইংলন্ডে তখনকার শিক্ষার সঙ্গে সুপরিচিত। সেখানকার কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষয়িত্রী রূপে কাজ করার সময় তিনি শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার পত্তনকারী পসতালৎসির, ( Pestalozzi ) ও তাঁর প্রয়োগকারী ফখবেলের ( Frocbel ) শিক্ষাচিন্তা নিয়ে আগ্রহের সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করে যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, তারই সূচনা করলেন।
[ ৩ ]
নিবেদিতা ভাঙা ভাঙা বাংলায় গল্প বলতে চেষ্টা করেন। নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েও ছাত্রীরা সিস্টারের কথা বলতেন। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গেও সিস্টার বিশেষ পরিচিত। অন্য ইংরেজ পরিবারের মত বাস না করে, তাদের মধ্যে বাস করছেন এবং মেয়েদের শিক্ষা ও উন্নতির জন্য চেষ্টা করছেন, তা তাঁরা বেশ বোঝেন ও প্রয়োজন মত তাঁকে কিছু সাহায্য করেন – যেমন স্বামীজী বা অতিথি এলে তাঁরা খাবারও পাঠাতেন। বৃদ্ধা গোপালের মা যখন শেষ জীবনে নিবেদিতার কাছে এলেন, তখন পাড়ার কোনো ব্রাহ্মণ পরিবারের কাছ থেকে তাঁর খাবার আনিয়ে তার খাবার ব্যবস্থা হতো।
এই পল্লীর লোকগুলির প্রতি নিবেদিতার যথার্থ ভালোবাসা জন্মেছিল। কারও অসুখ-বিসুখে সাহায্য করবার জন্য তাঁর কি আগ্রহ !
কিন্তু সিস্টার যে পরমাত্মীয়া, প্রতিবেশীরা তা আরও ভালো করে বুঝলেন, যখন সে-বছর আবার প্লেগের আবির্ভাব হল।
কলকাতার প্লেগ মহামারী রূপে দেখা দেওয়ায় প্রাণ উপেক্ষা করে নিবেদিতার সেবারতা রূপটি দেখা গেল।
৩১ শে মার্চ ১৮৯৯ কাজ শুরু হলো। বস্তিগুলি পরিস্কার রাখা সর্বাগ্রে প্রয়োজন, কারণ অপরিচ্ছন্ন বস্তি থেকেই প্লেগের বিস্তৃতি। স্বামী সদানন্দ, ধাঙ্গর নিয়ে বাগবাজার শ্যামবাজার প্রভৃতি অঞ্চলের বস্তিগুলি সাফ করতে আরম্ভ করলেন।
[ ৪ ]
অর্থের জন্য ইংরেজি সংবাদপত্রে নিবেদিতার আবেদন বের হলে কিছু সাহায্য পাওয়া গেল।
২১ শে এপ্রিল ক্লাসিক থিয়েটারে মিশনের পক্ষে স্বামীজীর সভাপতিত্বে নিবেদিতা ‘প্লেগ ও ছাত্রদের কর্তব্য’ বিষয়ে বক্তৃতা দিলেন। তাঁর বক্তৃতা ও স্বামীজীর উদ্দীপনাপূর্ণ অভিভাষণে ছাত্রদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেল এবং ১৫ জন ছাত্র স্বেচ্ছায় নিবেদিতার কাজে যোগ দিলেন।
ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর (Dr.R.G.Kar) লিখেছেন, ‘এই সঙ্কট সময়ে বাগবাজার পল্লীর প্রতি বস্তিতে ভগিনী নিবেদিতার করুণাময়ী মূর্তি লক্ষিত হইত।’
একদিন তিনি ঝাড়ু নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে উদ্যত হলে পাড়ার যুবকগণ লজ্জিত হয়ে রাস্তা পরিষ্কার রাখবার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর আরও লিখেছেন –
“সেদিন প্রাতে বাগবাজারে কোনো বস্তিতে আমি একটি প্লেগাক্রান্ত শিশুকে দেখতে গেছিলাম। রোগীর ব্যবস্থা সম্বন্ধে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিবেদিতার আগমণ। আমি বললাম, ‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।’ বাগদী বস্তিতে কিরূপে বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা সম্ভব, তার আলোচনা করে আমি তাঁকে বিশেষ সাবধান হতে বললাম। অপরাহ্নে পুনরায় রোগী দেখতে গিয়ে দেখলাম নিবেদিতা সেই রোগাক্রান্ত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। দিনের পর রাত্রি, রাত্রির পর দিন তিনি স্বীয় আবাস পরিত্যাগ করে সেই কুটীরে রোগীর সেবায় নিযুক্তা রইলেন। গৃহ পরিশোধিত করা প্রয়োজন। তিনি স্বয়ং একখানা ছোট মই নিয়ে গৃহে চুনকাম করতে লাগলেন। রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তাঁর শুশ্রূষায় শৈথিল্য ছিল না।
দুদিন পরে শিশু এই করুণাময়ীর স্নেহতপ্ত অঙ্কে অন্তিম নিদ্রায় নিদ্রিত হল।
[ ৫ ]
এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
‘ ভগিনী নিবেদিতা যে সকল কাজে নিযুক্ত ছিলেন তাহার কোনটারই আয়তন বড়ো ছিল না, তাহার সকলগুলিরই আরম্ভ ক্ষুদ্র। নিজের মধ্যে যেখানে বিশ্বাস কম, সেখানেই দেখিয়াছি বাহিরের বড়ো আয়তনের সান্ত্বনালাভ করিবার একটি ক্ষুধা থাকে। ভগিনী নিবেদিতার পক্ষে তাহা একেবারেই সম্ভবপর ছিল না। তাহার কারণ এই যে, তিনি অত্যন্ত খাঁটি ছিলেন। যেটুকু সত্য তাহাই তাঁহার পক্ষে একেবারে যথেষ্ট ছিল ; তাঁহাকে আকারে বড়ো করিয়া দেখাইতে হইলে যে-সকল মিথ্যা মিশাল দিতে হয়, তাহা তিনি অন্তরের সহিত ঘৃণা করিতেন। ‘
‘ এইজন্যই একটি আশ্চর্য দৃশ্য দেখা গেল, যাঁহার অসামান্য শিক্ষা ও প্রতিভা, তিনি এক গলির কোণে এমন কর্মক্ষেত্র বাছিয়া লইলেন যাহা পৃথিবীর লোকের চোখে পড়িবার মত একেবারেই নহে। বিশাল বিশ্বপ্রকৃতি যেমন তাহার সমস্ত বিপুল শক্তি লইয়া মাটির নীচেকার অতি ক্ষুদ্র একটি বীজকে পালন করিতে অবজ্ঞা করে না, এও সেইরূপ।’ …
[ ৬ ]
‘… ভগিনী নিবেদিতা একান্ত ভালোবাসিয়া সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে ভারতবর্ষে দান করিয়াছিলেন, তিনি নিজেকে বিন্দুমাত্র হাতে রাখেন নাই। … জনসাধারণকে হৃদয় দান করা যে কতবড় সত্য জিনিস তাহা তাঁহাকে দেখিয়াই আমরা শিখিয়াছি। … মা যেমন ছেলেকে সুস্পষ্ট করিয়া জানেন, ভগিনী নিবেদিতা জনসাধারণকে তেমনই প্রত্যক্ষ সত্তা রূপে উপলব্ধি করিতেন। তিনি এই বৃহৎ ভাবকে একটি বিশেষ ব্যক্তির মতই ভালোবাসিতেন। তাঁহার হৃদয়ের সমস্ত বেদনার দ্বারা তিনি এই ‘পীপল’কে ( People ), এই জনসাধারণকে আবৃত করিয়া ধরিয়াছিলেন। এ যদি একটি মাত্র শিশু হইত তবে ইহাকে তিনি আপনার কোলের উপর রাখিয়া আপনার জীবন দিয়া মানুষ করিতে পারিতেন।’
‘বস্তুত তিনি ছিলেন লোকমাতা। যে মাতৃভাব পরিবারের বাহিরে একটি সমগ্র দেশের উপর আপনাকে ব্যাপ্ত করিতে পারে তাহার মূর্তি তো ইতিপূর্বে আমরা দেখি নাই। … তিনি যখন বলিতেন Our People তখন তাঁহার মধ্যে যে একান্ত আত্মীয়তার সুরটি লাগিত আমাদের কাহারও কণ্ঠে তেমনটি তো লাগে না।’
শ্রীমা ও মায়ের সঙ্গিনী প্রবীণা মহিলা ভক্তদের কথায় আবার ফিরে আসি। অন্য বাড়িতে উঠে গেলেও নিবেদিতা প্রতি বিকেলে শ্রীশ্রীমার নিকট কাটাতেন এবং গ্রীষ্মের সময় মা নিজের ঘরেই তাঁকে বিশ্রামের আদেশ দিতেন। ঘরটি ছিল ঠাণ্ডা। পালিশ করা কালো মেঝের উপর সারি সারি মাদুর বিছানো। উপরতলা থেকে গঙ্গা দর্শন হতো। শ্রীশ্রীমার কাছে গোপালের মা, যোগীন মা, গোলাপ মা, লক্ষ্মী দিদি প্রায় সর্বদাই থাকতেন।
[ ৭ ]
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা – স্বামীজী পাশ্চাত্য দেশ থেকে ফিরে একদিন গোপালের মাকে বলেছিলেন, ‘ আমার সব সাহেব-মেম চেলা আছে, তাদের কি তুমি কাছে আসতে দেবে, না তোমার আবার জাত যাবে ? ‘ তাতে তিনি উত্তর দেন,
‘ সে কি বাবা ? তারা তোমার সন্তান, তাদের আমি আদর করে নাতি-নাতনী বলে কোলে নেব না ! তোমার ও ভয় আর নাই। ‘ সত্যিই দেখা গেল – গোপালের মা নিবেদিতাকে যেদিন বাগবাজারে স্বামী সদানন্দের সঙ্গে দেখতে পান জিজ্ঞাসা করলেন,
‘ ও গুপ্ত এটি কে রে ? এ কি নরেনের মেয়ে-যে তার সঙ্গে এসেছে ? ‘ অনুমান সত্য জেনে ব্রাহ্মণী নিবেদিতার চিবুক স্পর্শ করে চুম্বন করলেন ও পরে ডান হাত ধরে চলতে লাগলেন। গোপালের মা ব্রাহ্মণ ও বাল বিধবা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে গোপাল রূপে নিষ্ঠা ভরে উপাসনা করতেন, কিন্তু তখন ছিলেন অত্যন্ত গোঁড়া। পরে ইষ্টদর্শন করেন ও গোপালকে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে অভিন্নভাবে দেখতে থাকেন ও ক্রমশই উদার হতে থাকেন। বিবেকানন্দ বা নরেনকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। পরে স্বামীজীর দেহত্যাগের খবর হঠাৎ শুনে ‘নরেন নেই’ বলেই বেঁহুশ হয়ে পড়ে যান। তাই ‘নরেনের মেয়ে’ বলে এবং নিজের ব্যবহার গুণে নিবেদিতা তাঁর স্নেহপাত্রী ছিলেন। শেষজীবনে নিবেদিতার নিকটেই তিনি দেহত্যাগ করেন।
নিবেদিতা গভীর অভিনিবেশ সহকারে ভারতীয় দৈনন্দিন জীবন অনুধাবন করতেন – বিশেষত শ্রীশ্রীমায়ের সাথে ১০/২ নং লেনে থাকার সময়টিকে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। মায়ের এই গৃহখানি যেন তাঁর কাছে ছিল শান্তি ও মাধুর্যের নিলয়।
[ ৮ ]
নিবেদিতার প্রখর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার ফলে তিনি শ্রীশ্রীমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসে কয়েকটি কথাচিত্র আমাদের উপহার দিয়েছেন।
তাঁর ইচ্ছানুসারে নিবেদিতা ও কৃষ্টিন খ্রিস্টান বিবাহপ্রথা বোঝাবার জন্য বর, কনে ও পুরোহিতের আচরণাদি ব্যাখ্যা করতে করতে বিয়ের মন্ত্র উচ্চারণ করলেন –
‘ সুখে-দুঃখে, সৌভাগ্যে-দারিদ্র্যে, রোগে-স্বাস্থ্যে , যতদিন না মৃত্যু আমাদিগকে পৃথক করে ‘ – তখন মা সাগ্রহে বারবার ঐ মন্ত্র শুনলেন ও মা আহ্লাদে বলতে থাকলেন, ‘ আহা কী ধর্মীয় কথা গো। ‘
নিবেদিতা আরো বুঝেছিলেন – ” তাঁহার পবিত্রতা যেমন চমকপ্রদ ছিল, তেমনি অপূর্ব ছিল তাঁহার সুমার্জিত সৌজন্য এবং অপরের ভাব বুঝিবার মত পরম উদার মন। তাঁহার নিকট উত্থাপিত প্রশ্নগুলি যতই কঠিন বা অভিনব হউক না কেন, আমি তাহাকে কখনও উত্তরদানকালে ইতস্তত করিতে দেখি নাই। মায়ের অগোচরে সমাজে যে সব বিপ্লব ঘটিতেছে, তাহা দ্বারা বিভ্রান্ত বা বিপর্যস্ত হইয়া যদি কেহ তাঁহার নিকট উপস্থিত হইত, তবে তিনি অভ্রান্ত দৃষ্টিতে সে সমস্যার মর্মোদঘাটন করিয়া প্রশ্নকর্তার মনকে সেই বিপদ কাটাইবার জন্য প্রস্তুত করিয়া দিতেন।” শ্রীমাকে তিনি কতটুকুই বা সাক্ষাৎভাবে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন, অথচ তারই মধ্যে অপূর্ব মনস্বীতার দ্বারা তিনি কত গভীরভাবেই না মাকে অবধারণ করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে দীক্ষাদানের সময় নাম দিয়েছিলেন ‘নিবেদিতা’। পরে আর একটি কবিতা লিখে তাঁকে একটি আশীর্বাণী উপহার দেন। সেই কবিতার শেষ দুটি পংক্তি নিম্নরূপ
” ভবিষ্যৎ ভারতের সন্তানের তরে,
সেবিকা, বান্ধবী, মাতা তুমি একাধারে। ”
মূল ইংরেজী কবিতার অংশবিশেষ এই –
” Be thou to India’s future son
The mistress, servant, friend in one. “
তাঁর স্বল্পায়ু জীবনে গুরুর এই আশীর্বাণী ভগিনী নিবেদিতার জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সার্থক হয়েছিল।
স্বামী শিবময়ানন্দ
গ্রন্থপঞ্জী :
১) ভগিনী নিবেদিতা – প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা
২) শ্রীমা সারদাদেবী – স্বামী গম্ভীরানন্দ
রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টিনারি প্রাইমারি স্কুল, বরানগর এর ভগিনী নিবেদিতার শুভ আবির্ভাবের ১৫০তম বর্ষ পূর্তির সমাপনী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক পত্রিকা রশ্মি ২০১৭ হতে গৃহীত।