শিউলি ও কল্পনার ক্ষোভে ক্রমশঃ উতপ্ত হয়ে উঠছে দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনীতি। পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের পর থেকে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এই দুই আদিবাসী মহিলার ক্ষোভের ঘটনা বাড়তে থাকায় কিছুটা ঘরে বাইরে চাপে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে তৃণমূলের অন্দরে এই আদিবাসী মহিলাদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই এবার লোকসভা নির্বাচনের ছক কষতে শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্বরা। যদিও এমন যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি কল্পনা কিস্কু, যিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তপন আসন থেকে অন্যতম আদিবাসী মুখ হিসাবে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়াই করেন। সামান্য ভোটে সেই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বুধরাই টুডুর কাছে পরাজিত হন তিনি। যদিও কল্পনা কিস্কুর হয়ে প্রথম থেকেই নির্বাচনী ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছিল বালুরঘাটের প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে। যে সময় থেকেই অর্পিতা ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতি কল্পনা কিস্কু।
অন্যদিকে তপনের গোফানগর এলাকার তিন আদিবাসী মহিলা যাদের বিজেপিতে যোগ দেবার কারণে দণ্ডি কাটানো হয়েছিল। তৃণমূলের তৎকালীন মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে যে ঘটনায় কার্যত দোষী প্রমাণিত করে দলের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। যা নিয়ে শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতি নয়, তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। যার ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেও শেষ পর্যন্ত ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছিল বালুরঘাটের প্রাক্তন সাংসদ তথা মহিলা নেত্রী অর্পিতা ঘোষকে। অভিষেকের নব জোয়ার কর্মসূচি নিয়ে ওই মহিলাদের সাথে কথা বলবার ব্যাপারেও যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, আদিবাসী সমাজকে বিশেষ বার্তা দিতে দণ্ডিক কান্ডের নির্যাতিতা শিউলি মার্ডিকে পঞ্চায়েতের প্রার্থীও করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যে সময়েই অর্পিতার অতি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন দণ্ডি কান্ডের নির্যাতিতা মহিলাও। এরপর নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই শুরু হয় ঝামেলার সুত্রপাত। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি দণ্ডি কান্ডের নির্যাতিতা শিউলি মার্ডিকে। যা নিয়েই ক্ষোভ উগড়ে দেন ওই আদিবাসী মহিলা। তার দাবি তাকে পঞ্চায়েতের প্রধান করবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তা না করায় শুধুমাত্র তার সাথেই নয়, আদিবাসী সমাজের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। একইভাবে অর্পিতা ঘনিষ্ঠ অপর আদিবাসী মহিলা কল্পনা কিস্কুকেও এবারে বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি না করায় বেজায় ক্ষুব্ধ হন তিনিও। সিলেকশন কিভাবে হল বা কারা করলো সেই প্রশ্ন তুলে দলের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন তিনিও।
এদিকে তৃণমূলের প্রতি আদিবাসী মহিলাদের ধারাবাহিকভাবে এমন ক্ষোভ নিয়েই এবারে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে কিছুটা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। যদিও এসবকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তপশিলী উপজাতির ভোটার রয়েছে প্রায় ১৫.৩ শতাংশ। যার মধ্যে সংখ্যার নিরিখে সর্ব্বোচ্চ রয়েছে তপন বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটার শুধুমাত্র তপশিলী উপজাতিরই রয়েছে। যে এলাকা থেকে এই দুই আদিবাসী মহিলার প্রকাশ্যে এমন ক্ষোভ উগড়াবার বিষয়টি যে মোটেও ইতিবাচক দিক নয় তা যেন অনেকেই বুঝতে পারছেন। এলাকার এই আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্কের ধসে যে লোকসভায় বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে শাসকদল তৃণমূল এমনটাও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যদিও এসবকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ।
তিনি বলেন, এধরণের কোনো ব্যাপার নেই। দল তাদের নিয়েও ভাবছে। এক ব্যক্তি চিরকাল এক চেয়ারে থাকতে পারে না। তৃণমূলই এই জেলার দুটো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আদিবাসী মহিলাকে বসিয়েছে। জেলার সর্ব্বোচ্চ চেয়ার অর্থাৎ সভাধিপতির আসন এবং মহিলা তৃণমূল নেত্রী হিসাবেও আদিবাসী মুখকে এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, আদিবাসীদের সাথে বরাবরই বঞ্চনা করে এসেছে তৃণমূল। প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতিশ্রুতি রাখেনি। যেসবের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এবারের লোকসভার ফলাফলেই ঘটবে।