‘ফুড ডেলিভারি’ কর্মীদের ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৩২ জনই স্নাতক, কাজ করতে হয় ৯ ঘণ্টা, আয় নামমাত্র

মোটর বাইকে চেপে লাল ব্যাগ নিয়ে যাঁরা বাড়ি বাড়ি রেস্তরাঁর খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, সেই ‘ফুড ডেলিভারি’ কর্মীদের ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৩২ জনই কলেজ গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু লোকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিলেও তাঁদের নিজেদের পেট চালাতে মাসের শেষে টান পড়ছে। কারণ মূল্যবৃদ্ধি ও পেট্রল-ডিজ়েলের দাম। তাই দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ করে আয় করলেও, তার পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে।

আজ দিল্লির আর্থিক গবেষণা সংস্থা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ’ দেশের ২৮টি শহরের ফুড ডেলিভারি কর্মীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ফুড ডেলিভারি কর্মী হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের ৬৭ শতাংশ আগের তুলনায় বেশি আয় বা অতিরিক্ত রোজগারের আশায় এই কাজে যোগ দিয়েছেন। সপ্তাহে ছয় দিন দিনে অন্তত ১১ ঘণ্টা করে কাজ করার পরে, তাঁদের মাসিক গড় আয় মাত্র ২০,৭৪৪ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২১-২২-এর শ্রমিক সমীক্ষা (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে)-তে বলা হয়েছিল, এই শ্রেণির কর্মীদের গড় মাসিক আয় ২২ হাজার টাকার বেশি। ফুড ডেলিভারি কর্মীদের আয় সেই তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও কাজ না পেয়ে শেষ সম্বল হিসেবে এই কাজ বেছে নিতে হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার গিগ-কর্মী বা ডেলিভারি কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষায় আইন এনেছে। কর্নাটকে নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী ডেলিভারি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ-এর অধ্যাপিকা বর্ণালী ভান্ডারি বলেন, সমীক্ষা অনুযায়ী ফুড ডেলিভারি কর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বিমা থাকলেও কোনও স্বাস্থ্য বিমা নেই। মাত্র ১২ শতাংশ কর্মীর কাছে আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড রয়েছে। ১১ শতাংশ কর্মীর রাজ্যের স্বাস্থ্য বিমার কার্ড রয়েছে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় সকলের কাছেই রাজ্যের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের কার্ড রয়েছে। সাধারণত বেসরকারি কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। ফুড ডেলিভারি কর্মীদের নিয়োগ করা হয় কাজের হিসেবে। তাঁরা কেউই সবেতন ছুটি বা পেনশন পান না।

সমীক্ষায় ফুড ডেলিভারি কর্মীদের ৩১ শতাংশের বেশি কর্মী জানিয়েছেন, প্রায় চার মাস বসে থাকার পরে তাঁরা এই কাজ বেছে নিয়েছেন। ৯ শতাংশ কর্মী কাজ হারিয়ে এই কাজ করছেন। প্রায় ২৪ শতাংশ কর্মী প্রথম কাজ হিসেবে এই কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই এখনও পড়াশোনা করছেন। অনেকে অন্য কাজ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত রোজগারের জন্য দিনে পাঁচ ঘণ্টা করে কাজ করছেন। সারা সপ্তাহ ৩০ ঘণ্টা কাজ করে তাঁদের মাসিক আয় হচ্ছে ৭৮০০ টাকার মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.