দত্তপুকুরে বিস্ফোরণকাণ্ডের নেপথ্য বাজি না বোমা কী ছিল, তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কেরামত আলির ‘বাজি’ কারখানায় ছোট পাথর বা স্টোনচিপ মজুত থাকতে দেখে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, সেগুলি তথাকথিত ‘বাজি’তে অন্যতম কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হত। বিস্ফোরক বস্তুগুলির কাঁচামালের মধ্যে চকচকে জিনিসের উপস্থিতি টের পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যা থেকে আবার অনুমান করা হচ্ছে, অ্যালুমিনিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় কিছু বাজি তৈরিতে ব্যবহার করা হত। তবে নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার পরই এই বিষয়ে সুনিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজির কাঁচামালে পরিমাণগত তারতম্য ঘটলেই তা বোমায় পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।
তবে এত বড় বিস্ফোরণের নেপথ্য কি নেহাতই মামুলি বাজি? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এ ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছেন তৈরি করা বাজি কী ভাবে মজুত রাখা হচ্ছে, তার উপর। বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন, মোচপোল কেরামতের কারখানায় কোনও রকম সুরক্ষাবিধি না মেনে বাজি বস্তাবন্দি করে মজুত রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যদি তৈরি করা বাজি ঠিক ভাবে রাখা না হয়, তবে চাপ এবং ঘর্ষণে সেগুলি ফেটে যেতে পারে। সেই বিস্ফোরণের অভিঘাত বোমা বিস্ফোরণের তুলনায় কম কিছু হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে অবৈধ কারখানায় বোমা না বাজি তৈরি হত, তা এখনই নিশ্চিত করে বলছেন না তাঁরা। সব সম্ভাবনাই তদন্তে উঠে আসছে।
তা ছাড়া বিস্ফোরণস্থলে বহু কাঁচামাল মজুত থাকতে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। সচরাচর বাজি তৈরিতে এত কাঁচামাল মজুত থাকে না বলেই জানা গিয়েছে। এই সব কাঁচামাল গ্রামেই তৈরি করা হত, না অন্য কোনও জায়গা থেকে আমদানি করা হত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরণের অভিঘাত বাড়াতেই বোমার স্প্লিন্টারের মতো মতো ‘বাজি’তে পাথরকুচি ব্যবহার করা হত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রবিবারই অবশ্য ‘সারা বাংলা আতসবাজি ব্যবসায়ী সমিতি’র তরফে বলা হয়েছিল, ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে আতসবাজির কোনও সম্পর্ক নেই। সমিতির নেতা বাবলা রায়ের দাবি ছিল, দত্তপুকুরের মোচপোলে আতসবাজি তৈরি হত না। তিনি নিজে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। সেখানে আতসবাজি তৈরির মশলা ছিল না। রবিবার দত্তপুকুর ঘুরে বাবলা বলেন, ‘‘দত্তপুকুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। কিন্তু আরও দুঃখজনক ব্যাপার হল, বোমাকে আতসবাজি বলে চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনের পর ব্যবসায়ী সমিতির নেতার দাবি, সেখানে কোনও আতসবাজি তৈরির মশলা ছিল না। ছিল পটাশিয়াম ক্লোরাইড। যার সঙ্গে আতসবাজি বানানোর কোনও সম্পর্কই নেই।