গ্ৰামীন শিক্ষা ব্যবস্থার করুন অবস্হার নিদর্শন সাতমৌলী চাঁদবিলা জুনিয়র হাইস্কুল।বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা ব্লকের সাতমৌলী গ্ৰামে ২০১৮ সালে গড়ে তোলা হয় এই স্কুল। কিন্তু বর্তমানে কোনও স্হায়ী শিক্ষক তো নেই-ই, একমাত্র অতিথি শিক্ষক, তাও দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে স্কুলে আসতে না পারায় ছ’মাস স্কুল বন্ধ। বিভিন্ন দপ্তরে বারবার জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ অভিভাবকেদের। আশ্চর্যের বিষয়, দীর্ঘদিন একটা স্কুল বন্ধ অথচ শিক্ষা দপ্তর, স্হানীয় জনপ্রতিনিধি কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। স্কুলে পঠনপাঠন না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত অথৈ জলে। প্রাইভেট টিউশনই ভরসা সাতমৌলি চাঁদবিলা গ্রামের ছেলেমেয়েদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ঘটা করে চালু হয় বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের সাতমৌলি চাঁদাবিলা জুনিয়ার হাইস্কুল। ক্লাসরুম তৈরি থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়। কিন্তু শিক্ষকের অভাব স্কুল চালুর সূচনা থেকেই। ধুঁকতে ধুঁকতে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের দরজা। সাতমৌলি ও চাঁদাবিলা দুটি বর্ধিষ্ণু গ্রামের শিশুদের পড়াশোনার জন্য দুটি গ্রামেই পৃথক দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী পুন্যাশা ও উপরশোল গ্রামেও রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনোর পর উঁচু ক্লাসের পাঠ নিতে ওই চার গ্রামের পড়ুয়াদের ছুটতে হত চার কিলোমিটার দূরের সাবড়াকোন হাইস্কুলে। পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সাতমৌলি গ্রামে ২০১৮ সালে সাতমৌলি চাঁদাবিলা জুনিয়ার হাইস্কুলটি চালু করে রাজ্য সরকার। স্কুলের পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলেও ওই স্কুলে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে দু’জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন শুরু করা হয়। দুই গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন পড়ুয়া পড়াশোনাও শুরু করে ওই স্কুলে। পরবর্তীতে দুই অতিথি শিক্ষক অবসর নেওয়ায় একজন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুল শিক্ষা দফতর। ওই অতিথি শিক্ষকের কাঁধেই এতদিন চারটি ক্লাসের পঠন পাঠন থেকে শুরু করে মিড ডে মিল দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, মাস ছয় আগে ওই অতিথি শিক্ষক পথ দুর্ঘটনায় আহত হলে তিনি স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করেন। আর তার ফলে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের দরজা। গ্রামবাসীদের দাবি, স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকা ৩২ জন পড়ুয়ার কাছে এখন ভরসা শুধুমাত্র প্রাইভেট টিউশান। অবিলম্বে স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে ফের পঠন পাঠন স্বাভাবিক ভাবে চালুর দাবি করেছেন তারা। এখনই স্কুল চালু না হলে পড়ুয়াদের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে। স্কুল শিক্ষা দফতর অবশ্য শিক্ষকের অভাবে ৬ মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কথা মানতে চায়নি।
জেলা স্কুল পরিদর্শক পীযূষ কান্তি বেরার দাবি, ৩ মাস স্কুল বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই ওই স্কুলে একজন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুল চালুর তোড়জোড় চলছে। পরবর্তীতে আরও দু’জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। ফের কবে স্কুল চালু হবে সে দিকেই তাকিয়ে স্কুলের পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।