বন্দে ভারত এর ইঞ্জিন হবে এবার নতুন ডিজাইনের। পুরানো WAP-5 রেল ইঞ্জিনকে এরোডায়নামিক ভাবে বদল করে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক রূপ। বন্দে ভারত-এর সেই নতুন ইঞ্জিন তৈরি করছে পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা। এমনটাই জানালেন জেনারেল ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ দাস।
নতুন ডিজাইন তৈরি করে রেলওয়ে বোর্ডে পাশ করাবার পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন মোড়কে বিমানের মত ব্ল্যাকবক্স সুরক্ষা কবচ নিয়ে আসছে “বন্দে ভারত” এক্সপ্রেস। গেরুয়া ও সাদা রঙের এই ট্রেনের গতি হবে ১৩০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানায় এই প্রথম পুশপুল এরোডাইনামিক সিস্টেমে বন্দে ভারত লোকো বা রেল ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে।। প্রাথমিকভাবে ২ ইঞ্জিন সেপ্টেম্বর মাসেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে কর্মচারীরা জানান। কাজ ভালো লাগলে আরও ইঞ্জিন তৈরি করার বরাত এই কারখানা কর্তৃপক্ষ পাবে বলে আশাবাদী কর্মাচারীরা।
দুটি করে ইঞ্জিন ২৪টি যাত্রী কামরা নিয়ে সামনে এবং পিছনের দিকে থাকবে। সামনের ইঞ্জিনটি টানবে এবং পিছনের ইঞ্জিনটি ঠেলবে। এটাই হল পুসপুল সিস্টেম। এই ইঞ্জিনগুলো তৈরি হলেই তা চলে যাবে আইসিএফ রেলওয়ে কোচ তৈরির কারখানায় এবং সেখান থেকে নতুন ২৪টি করে কামরা নিয়ে এই যাত্রী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। সেপ্টেম্বর মাসেই এই ইঞ্জিনগুলি আইসিএফ বা ইন্টিগ্যাল কোচ ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ওই আইসিএফ কারখানা থেকেই চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানায় সম্প্রতি জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে এসেছেন দেবীপ্রসাদ দাস। শ্রমিক সংগঠনগুলি প্রতি তাঁর আহ্বান, অনেক অত্যাধুনিক লোকো ইঞ্জিন তৈরি করেছেন। বন্দে ভারতের মতো ইঞ্জিন তৈরি করতে পারলে ৭০ বছরের পুরনো রেলইঞ্জিন কারখানার গরিমা আরও বাড়বে। এ বছর জুনের শেষে আমরা রেলওয়ে বোর্ড থেকে “বন্দে ভারত” ইঞ্জিন তৈরির বরাত পাই। আমরা ডিজাইন তৈরি করে ফেলি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে। এই কারখানায় WAP 5 অ্যারো ডায়ানামিক ফেস মডেলের ইঞ্জিন তৈরি হতো। আগে সেই ফেস ছিল ২০ ডিগ্রি এখন তা করা হলো ৪৫ ডিগ্রি। অর্থাৎ সেমি বুলেটের লুক দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাতাসে হাওয়ার বাধা অনেকটাই কম আসবে। ইঞ্জিনের গতি আরও বাড়বে।
শুধু মডেল বা লুক পরিবর্তন নয় আরো অনেক অত্যাধুনিক ফিচার আনা হয়েছে। এই ইঞ্জিনটির মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ইঞ্জিনের সুরক্ষা কবচ। লুকিং গ্লাস অনেক বড় করা হয়েছে। সিসিআর ভিসিপ্রযুক্তি অর্থাৎ লোকো পাইলটের সমস্ত অ্যাক্টিভিটিস কথাবার্তা বা যদি তিনি কোনও ভুল কিছু করে থাকেন তা বিশেষভাবে রেকর্ড হয়ে থাকবে ওই সিস্টেমের মধ্যে। যদি কখনো কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তার পর্যালোচনা করা যাবে। প্লেনে যেমন ব্ল্যাকবক্স থাকে সেরকম ব্ল্যাকবক্স থাকছে এই ইঞ্জিনে। পেছনে ইঞ্জিন থাকলেও সামনের ইঞ্জিন থেকেই পেছনের ইঞ্জিনকে কন্ট্রোল করা যাবে সামনে থেকে। অর্থাৎ একজন লোকো পাইলটই দুই প্রান্তে দুটি ইঞ্জিনকে একসঙ্গে কন্ট্রোল করতে পারবেন। তার জন্য আলাদা পাইলটের প্রয়োজন পড়বে না। পাশাপাশি রয়েছে অত্যাধুনিক সিগনালিংয়ের ব্যবস্থা। জানালার ধারে লাল সবুজ পতাকার দেখানোর দরকার নেই। লোকো পাইলট নিজের কন্ট্রোল রুম থেকেই মনিটরের মাধ্যমে বিশেষ লাইটের মাধ্যমে সিগনেলিং ব্যবস্থাকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। স্টেশনের সঙ্গে পাইলটের যদি কোথাও কথোপকথন ডিলে হয় বা কমিউনিকেশন গ্যাপ হয় তাহলে ইঞ্জিনটি অটোমেটিক ব্রেক লেগে যাবে।
ইঞ্জিনসহ কোচে রয়েছে শুধু এলইডি আলোর ব্যবস্থা আর এই সমস্ত কন্ট্রোল হবে ইঞ্জিনের রুম থেকেই। লোকো পাইলটের রুমটি এয়ারকন্ডিশন থাকবে বলে জানান জেনারেল ম্যানেজার। চিত্তরঞ্জন রেলিং কর্তৃপক্ষের তরফে জিএমের দাবি নবনির্মিত ইঞ্জিনটি চালানো যদি সার্থক হয় তাহলে আগামী দিনে চিত্তরঞ্জনে রেলবোর্ড থেকে ইঞ্জিনের আরো অনেক অর্ডার আসতে থাকবে। জানাগেছে যাত্রীর বগির সংখ্যা ২৪টা পর্যন্ত হবে। এমন দুটি যাত্রী ট্রেনকে এই ইঞ্জিন দিয়েই দেশের দুই জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। কোন রুটে সেটা চলবে তা অবশ্য এখন ঠিক হয়নি।
ইনটাক নেতা, এনআই এফআরের কার্যকরি সভাপতি নেপাল চক্রবর্তী বলেন, আমরা কয়েক মাস আগেই জেনারেল ম্যানেজারের সাথে আমাদের অন্যান্য দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলার সময় বন্দে ভারত নিয়ে কথা বলেছিলাম। জানতে পারি এখানকার জেনারেল ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ দাস এখানে আসার আগে আইসিএফ রেল কোচ কারখানায় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। আমাদের আবেদনের পর তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে রেলওয়ে বোর্ড থেকে এই অর্ডার নিয়ে এসেছেন। আমরা গর্বিত। বাংলার মানুষ গর্বিত বন্দে ভারত তৈরি করতে পেরে। যদি এক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য আসে তাহলে আগামী দিনের চিত্তরঞ্জনে এমন ইঞ্জিনের অর্ডার আরো পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করি।