৪৭ বছর পর ‘চাঁদমারি’র চেষ্টা! ১৩ বছরের সাধনা, ১৭ হাজার কোটির লগ্নি, সব জলে গেল রাশিয়ার?

ঠিক ১৩ বছর আগে শুরু হয়েছিল পরিকল্পনা। চাঁদের অ-দেখা দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১০ সালে। তার পর কোটি কোটি রুবল গলে গিয়েছে ক্রেমলিনের কোষাগার থেকে। বড় কৃতিত্বের লক্ষ্যে বড় একটা সমঝোতা করেননি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সেই ১৩ বছরের সাধনাই রবিবার মুখ থুবড়ে পড়ল চাঁদের মাটিতে। ঠিক কতটা ক্ষতি হল রাশিয়ার?

প্রায় পাঁচ দশক পরে চাঁদ ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। শেষ বার রাশিয়া চাঁদে লক্ষ্যভেদ করেছিল ১৯৭৬ সালে। লুনা-২৪ চাঁদে নেমে চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ করে এনেছিল। কিন্তু সে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার কৃতিত্ব। পুতিনের রাশিয়া চাঁদে যাওয়ার প্রথম চেষ্টা করে এই ২০২৩ সালেই। ১৩ বছর ধরে তিলে তিলে তৈরি লুনা-২৫ অভিযানের চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল সোমবারই। সে ক্ষেত্রে একই সময়ে চাঁদের মাটিতে অবতরণের চেষ্টা করা ভারতের চন্দ্রযান-৩কে টেক্কা দিতে পারত রাশিয়া। হতে পারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তের যান্ত্রিক গোলযোগে সব হিসাব গেল গুলিয়ে।

এক কালে মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকাকেও টেক্কা দিত সোভিয়েত রাশিয়া। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হত প্রায়ই। মহাকাশে প্রথম মহাকাশচারী পাঠানো থেকে শুরু করে চাঁদে প্রথম অভিযাত্রী যান নামানো— আশির দশকের বহু আগেই এই সব কৃতিত্বের পালক নিজের মুকুটে সাজিয়ে ফেলেছিল সে দিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন, যার অঙ্গ ছিল রাশিয়াও। পাঁচ দশক পর যখন পুতিনের রাশিয়া দুনিয়ার পরোয়া না করে ইউক্রেনে শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই মহাকাশে জুটল ধাক্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার অর্থনীতির হাল খারাপ। তার উপর লুনা-২৫ চন্দ্রাভিযানের জন্য এ যাবৎ দেশের কোষাগার থেকে খরচ হয়ছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের রাশিয়ান রুবল। আন্তর্জাতিক অর্থ বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি রাশিয়ার। সেই অর্থনীতির উপর কিছুটা চাপ নিয়েই লুনা-২৫ অভিযানের খরচ গত ১৩ বছর ধরে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে রাশিয়ার সরকার। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, গবেষণার খরচ এক রকম দাঁতে দাঁত চেপেই সহ্য করেছে মস্কো। হয়তো তাই সময় লেগেছে কিছু বেশি। যে খানে গত দশ বছরে ভারতের একটি চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় অভিযানও চাঁদের দোরগোড়ায়, তত দিনে ওই একই উদ্দেশ্যে করা অভিযানের জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছে রাশিয়া। ধাক্কাটা তাই বড়।

বিশেষজ্ঞরা এ-ও বলছেন, রাশিয়ার খরচ করা ওই বিপুল অর্থও জলেই গেল। যা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটি দেশের পক্ষে নিঃসন্দেহে হাঁটু দুর্বল করে দেওয়ার মতো। শুধু কি তাই? যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রদর্শন করে দুনিয়ার মনে ভয় ধরাতে চাওয়া রাশিয়া মহাকাশে আমেরিকাকে টক্কর দেওয়ার বা চিন-ভারতকে পিছনে ফেলার যে চেষ্টা করেছিল, তাতেও তো কিছুটা হলেও মুখ পুড়ল পুতিনের দেশের! সেই ক্ষতিই বা সামাল দেওয়া যাবে কী করে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.