যাদবপুরের হস্টেলে চলত ‘তোলাবাজিও’? কত টাকা করে দিতে হত নতুনদের? কী বলছেন সিনিয়রেরা?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে কি ‘তোলাবাজি’ও চলত? নতুন ছাত্রদের থেকে টাকা তুলতেন সিনিয়রেরা? ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর থেকে এমন একটি অভিযোগ উঠছে নানা মহলে। তবে তোলাবাজির অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন হস্টেলের সিনিয়র আবাসিকদের একাংশ। বরং, টাকা তোলার অন্য যুক্তি দিয়েছেন তাঁরা।

যাদবপুরের হস্টেলের সিনিয়র আবাসিকেরা জানিয়েছেন, হস্টেলে অতিথি হিসাবে যাঁরা থাকতেন, অর্থাৎ, যাঁরা খাতায় কলমে হস্টেলের আবাসিক নন, তাঁদের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে নেওয়া হত। কিন্তু একে ‘তোলাবাজি’ বলতে নারাজ তাঁরা। বরং, সিনিয়রদের একাংশের দাবি, হস্টেলে থাকার খরচ না লাগলেও খাওয়াদাওয়ার খরচ দিতে হত সকলকেই। সেই খাবারের খরচ বাবদ হাজার টাকা করে নেওয়া হত।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে গত ১০ অগস্ট নদিয়া থেকে পড়তে আসা বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার পরেই প্রকাশ্যে এসেছে হস্টেলের একাধিক অব্যবস্থার ছবি। অভিযোগ, হস্টেলে সিনিয়র ছাত্র, বিশেষ করে প্রাক্তনীদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি, হস্টেল সুপার থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী, সকলেই এই প্রাক্তনীদের সমীহ করে চলতেন। তাঁদের কোনও কাজে বাধা দেওয়ার সাহস পেতেন না। এই প্রাক্তনী এবং কয়েক জন সিনিয়র ছাত্রের বিরুদ্ধে গত ৯ অগস্ট নদিয়ার ওই ছাত্রকে র‌্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে। তার ফলেই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গিয়েছিলেন ওই ছাত্র। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

এই ছাত্রও হস্টেলে অন্য এক জনের অতিথি হিসাবে থাকছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও কোনওরকম টাকা নেওয়া হয়েছিল কি না, এখনও জানা যায়নি।

এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান পড়ুয়া মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতেই এক প্রাক্তনীকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও তিনি হস্টেলের আবাসিক নন। ধৃত জয়দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সেই রাতে পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে চাইবে পুলিশ। অন্য ধৃতেরা হলেন, সৌরভ চৌধুরী (প্রাক্তনী, গণিত বিভাগ), মনোতোষ ঘোষ (সমাজবিদ্যা, দ্বিতীয় বর্ষ), দীপশেখর দত্ত (অর্থনীতি, দ্বিতীয় বর্ষ), মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), অসিত সর্দার (প্রাক্তনী), সুমন নস্কর (প্রাক্তনী), সপ্তক কামিল্যা (প্রাক্তনী), শেখ নাসিম আখতার (রয়াসন, প্রাক্তনী), হিমাংশু কর্মকার (গণিত, প্রাক্তনী) এবং সত্যব্রত রায় (কম্পিউটার সায়েন্স)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.