সাদাসিধে, ভাল ছেলে, ওকে ফাঁসানো হয়েছে, বলছে যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুতে ধৃত নাসিমের পরিবার

যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত নাসিম আখতারকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করল তাঁর পরিবার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুতে শুক্রবার আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা নাসিম। রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী নাসিমের গ্রেফতারের পরই ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর মা। পরিবারের দাবি, নাসিম নির্দোষ।

গত ৯ অগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের বারান্দা থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র পড়ে যান বলে অভিযোগ। তার পর তাঁর মৃত্যু হয়। র‌্যাগিংয়ের কারণে নদিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দিন যাদবপুরেই ছিলেন নাসিম। পরের দিন, অর্থাৎ ১০ অগস্ট দাদুর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবার। ১০ অগস্ট ভোরে মৃত্যু হয় ‘নির্যাতিত’ ছাত্রের। নাসিমের মামা ইজাজুল হক সাহানা বলেন, ‘‘নাসিম সাদাসিধে ছেলে। ও খুব ভাল ছেলে। পড়াশোনায় ভাল। কোন ভাবেই জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। ও নির্দোষ। ওকে যেন শাস্তি না দেওয়া হয়।’’

নাসিমের বোন শায়েরি আখতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘ও খুবই ভাল ছেলে। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার হস্টেল সুপার তাঁর দাদাকে ফোন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা নাসিমকে ফোনে বলেন হস্টেল সুপার। সেই মতো শুক্রবার সকালে নাসিম এবং তাঁর বাবা যাদবপুরে যান। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাসিমকে। তার পরই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।

নাসিমের গ্রেফতারির খবরে স্তম্ভিত বারারি গ্রাম। নাসিম এই ঘটনায় জড়িত— এটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না গ্রামের বাসিন্দারা। নাসিমের গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর মা নূরজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নাসিমের মা পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী। চাষবাস করেন নাসিমের বাবা মহসিন আখতার। তাঁর একটি মুদির দোকান ছিল। ছেলের পড়াশোনার জন্য অর্থের জোগান দিতে দোকান বন্ধক রেখেছিলেন নাসিমের বাবা। গ্রামের হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাশ করার পর খড়্গপুর আল-আমিন মিশনে ভর্তি হয়েছিলেন নাসিম। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন।

বড়পলাশন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বসিরউদ্দিন ইসলাম শেখ বলেন, ‘‘নাসিম ছেলে হিসেবে খুবই ভাল। কী করে ওর নাম জড়ালো বুঝতে পারছি না।’’ গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘‘নাসিমদের পরিবারই খুব ভাল এবং ভদ্র। ছেলের পড়াশোনা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন ওর বাবা।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.