পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলোর মধ্যে দুয়ারসিনি এখনও জায়গা করে উঠতে পারেনি। তবে মন যদি চায় জঙ্গলে খানিকটা নিরিবিলি সময় কাটাতে, পুরুলিয়ার এই ছোট্ট গ্রামের তুলনা হয় না। ইকো-ট্যুরিজমের জন্য আদর্শ। লোকজনের ভিড় নেই। প্রকৃতি তার আদিম সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। শাল, শিমুল, পিয়াল, পলাশ – কত রকমের গাছপালা। গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই মুন্ডা, শবর, খেরিয়া, সাঁওতাল জনজাতির মানুষ। হাজার বছরের পুরোনো সংস্কৃতির অনেকটাই তাঁরা আজও বজায় রেখেছেন। আদিবাসী সমাজের এই সব আচার-উৎসব নিজের চোখে দেখার সুযোগ পাবেন আপনি।
বন্য জীবজন্তুর অভাব নেই দুয়ারসিনিতে – হাতি, বুনো শুয়োর, ভালুক, নেকড়ে এবং আরও কত কী! যে কারণে স্থানীয় গাইড না নিয়ে গভীর জঙ্গলে যেতে বারণ করা হয় পর্যটকদের। আরেক আকর্ষণ সাতগুড়ুম নদী। জঙ্গল ভেদ করে নবযৌবনা তরুণীর মতো বয়ে চলেছে। ইচ্ছে হলে নদীর ধারে বসতে পারেন। পাখিদের কলতান আর জলের সুরেলা আওয়াজ শুনে মন ভরে যাবে। মাথার ওপরে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ। এভাবে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়।
মন চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন আশেপাশের খেরিয়া, মুন্ডা এবং সাঁওতালদের গ্রাম। কাছেই রয়েছে গালুডি এবং ভালোপাহাড়। সুর্বণরেখা নদীর ওপর বাঁধ দেখতে গালুডি যান পর্যটকরা। ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জল সরবরাহের জন্য এই বাঁধ গড়ে তোলা হয়েছে। দুয়ারসিনি থেকে ভালোপাহাড় মোটামুটি ৫ কিলোমিটার দূরে। সত্যিকারের পাহাড় নয়। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে প্রায় ১৫০ বিঘা জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম অরণ্য। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু হয় ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। ১৯৯৬ সালে একদল প্রকৃতিপ্রেমী মিলে ভালোপাহাড় প্রকল্প শুরু করেন। এখন প্রায় এক লক্ষ গাছ রয়েছে। কিছু বিরল প্রজাতির গাছও পাওয়া যায়।
কলকাতা থেকে দুয়ারসিনি যাওয়ার পথে পড়বে ঝাড়গ্রাম। নেমে অবশ্যই রাজপ্রাসাদ, অরণ্য এবং পুরোনো মন্দিরগুলি দেখে নেবেন। কয়েকদিন থাকতেও পারেন ঝাড়গ্রামে। মল্ল রাজাদের প্রাসাদ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দুয়ারসিনি মাত্র দু’ঘণ্টার পথ।
কলকাতা থেকে দুয়ারসিনির দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটারের মতো। একটি ফরেস্ট বাংলো আছে। চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন।