দিলীপ ঘোষকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গত ২৯ জুলাই। তার ঠিক এক পক্ষ কাল পরে আগামী রবিবার সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে বৈঠকে মুখোমুখি হতে চলেছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। এই প্রথম বার সভাপতি নড্ডার সঙ্গে শুধুই সাংসদ এবং প্রাক্তন পদাধিকারী হিসাবে বৈঠকে বসবেন দিলীপ। নড্ডার গোটা সফরেই তাঁর সঙ্গে থাকবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। একাধিক বৈঠকে হাজির থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও।
রাজ্য বিজেপিতে অবশ্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নড্ডা ও দিলীপের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে। সংসদে অধিবেশন চলার সময়ে নড্ডা ও দিলীপের দেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাংসদদের বৈঠকেও দু’জনে হাজির ছিলেন। তবে সেখানে দেখা হলেও কথা হয়নি। সে অর্থে পদ হারানোর পরে এই প্রথম নড্ডার সঙ্গে মুখোমুখি কথা হতে পারে দিলীপের। কেন্দ্রীয় কমিটি দিলীপকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে মেদিনীপুরের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই আমাকে সর্বভারতীয় দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।’’ রবিবারের বৈঠক থেকে এটা স্পষ্ট হতে পারে যে, দিলীপকে শুধুই নিজের আসন মেদিনীপুরে লড়াইয়ের জন্য দায়িত্বমুক্ত করা হয়েছে, না কি বাংলার অন্যত্রও ব্যবহার করা হবে রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতিকে। নড্ডা যখন সর্বভারতীয় সভাপতি হন, তখন দিলীপ রাজ্য সভাপতি। ফলে রাজ্যে নড্ডা এলে তাঁর পাশে পাশে থাকতেন দিলীপ। এর পরে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার কারণেও নড্ডার পাশের চেয়ারে জায়গা হত দিলীপের। কিন্তু এ বার কী হবে? তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
শুক্রবারই রাজ্যে আসছেন নড্ডা। যা সূচি রয়েছে, দিল্লি থেকে রাতের বিমানে কলকাতায় আসবেন তিনি। শনিবার থেকে বিজেপির সাংগঠনিক পূর্ব ক্ষেত্রের পঞ্চায়েত কর্মশালা হবে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে। মূলত সেই কর্মশালার জন্যই নড্ডার এই সফর। শনিবার তিনি কর্মশালার সূচনা করবেন। বাংলা ছাড়াও বিহার, ওড়িশা, ঝড়খণ্ড ও আন্দামান-নিকোবরের জেলা পরিষদ বা স্বশাসিত সংস্থায় নির্বাচিত বিজেপি প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন এই কর্মশালায়। থাকবেন উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের একই স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও। দু’দিনের এই কর্মশালায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাটের কর্মশালায় উপস্থিত থাকার পাশাপাশি নড্ডা রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করতে পারেন। এ ছাড়াও কয়েকটি স্তরের আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন তিনি।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মূলত কর্মশালা নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন নড্ডা। পরের দিন রাজ্য বিজেপির সব ক’টি মোর্চার নেতৃত্বকে নিয়ে তিনি বৈঠকে বসতে পারেন। রাজ্য কোর কমিটির সঙ্গেও বৈঠক করবেন। সবারই লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে পরিষদীয় দলের তালমিল নিয়ে অতীতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এখনও অনেকের এমন অভিযোগ রয়েছে, জেলা স্তরে সাংসদ বা বিধায়কদের না জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়ে যায়। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি এই দূরত্ব কমাতে তৎপর হয়েছে। আগেই কয়েক জন সাংসদ, বিধায়ক রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এ বার নতুন পাঁচ জন বিধায়ককে জেলা সভাপতি করা হয়েছে। অতীতে ছিলেন মাত্র এক জন। এ বার রাজ্য সফরে এসে রাজ্যের সব সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন নড্ডা। ফলে কোর কমিটির বৈঠক ছাড়াও শুভেন্দু বিধায়ক দলের নেতা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন দিলীপও। তবে সকলের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আলাদা করে নড্ডা-দিলীপ সাক্ষাৎ হয় কি না তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে।