শনিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির স্লোগান, ‘ম্যায় ভি চৌকিদার।’ পরের দিনই নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে নাম বদলের হিড়িক পড়ে গেল বিজেপিতে। সবার আগে মোদী নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে নাম বদলে লেখেন ‘চৌকিদার নরেন্দ্র মোদী।’ তারপরেই প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল, জেপি নাড্ডা, হর্ষ বর্ধন, ধর্মেন্দ্র প্রধানরা নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে নামের আগে ‘চৌকিদার’ বসালেন। বিজেপির তরফে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মুকুল রায়ও নিজের নামের আগে চৌকিদার বসিয়েছেন।
অমিত শাহ নিজের নাম পরিবর্তন করে টুইটারে লেখেন, “যিনি স্বচ্ছতাকে নিজের নৈতিক আদর্শ বলে স্থির করেছেন তিনিই চৌকিদার। সবাই নিজের মন থেকে বলুন, আবার ফিরবে চৌকিদার।” শনিবার মোদী নিজের টুইটে সবাইকে ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
টুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “আপনাদের চৌকিদার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে দেশের হাল ধরে আছে। কিন্তু আমি একা নই। যাঁরা সমাজের নোংরা পরিষ্কার করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তাঁরা প্রত্যেকে চৌকিদার। যাঁরা প্রতি মুহূর্তে দেশের উন্নতির জন্য পরিশ্রম করেন, তাঁরা প্রত্যেকে চৌকিদার। আজকে, প্রত্যেক ভারতীয় বলছেন, ম্যায় ভি চৌকিদার।”
এই টুইটের সঙ্গে এই নির্বাচনী প্রচারের ভিডিয়োও প্রকাশ করেন মোদী। এই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিজেপির ভালো কাজের প্রশংসা করছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে পুরুষ প্রত্যেকে বিজেপির বিভিন্ন প্রকল্পকে তুলে ধরছেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযান, মুদ্রা যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রভৃতি বিষয়কে তুলে আনা হয়েছে। স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ভারতের দীর্ঘতম ব্রিজ, ইসরো থেকে উৎক্ষেপিত একের পর মহাকাশযান ও রকেট প্রভৃতি সাফল্যকেও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও আনা হয়েছে ভারতীয় সেনার সাফল্যের কথাও। বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের মতো বিষয়কেও দেখানো হয়েছে এই ভিডিয়োতে। আর দেখা যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মোদীর সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন, ‘ম্যায় ভি চৌকিদার।’ ভিডিয়োর শেষে সবাইকে ৩১ মার্চ, প্রধানমন্ত্রীর ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই চৌকিদার প্রসঙ্গেই বিরোধীদের সবথেকে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বারবার মোদীকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়।’ সম্প্রতি এক সভা থেকে রাফায়েল চুক্তির কথা তুলে এনে মোদীর উদ্দেশে তোপ দাগেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, “পাঁচ বছর আগে চৌকিদার বলেছিলেন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি বলেছিলেন কংগ্রেস মুক্ত ভারত বানাবেন। আজকে ‘অচ্ছে দিন আয়েঙ্গে’ স্লোগান পরিবর্তন হয়ে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান হয়ে গিয়েছে।”
জানুয়ারি মাসে এক সভায় দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর এই সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “যে চোর, সেই চৌকিদারকে সরাতে চায়। তাহলে তার চুরি করতে সুবিধা হয়। কিন্তু এই চৌকিদারকে সরানো অত সহজ নয়।” চোদ্দর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির স্লোগান ছিল ‘অচ্ছে দিন আনে ওয়ালা হ্যায়।’ সেই স্লোগানে ভর করে দেশজুড়ে গেরুয়া ঝড় তুলেছিল মোদী বাহিনী। আর এ বার চৌকিদার প্রসঙ্গে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ায় এই চৌকিদার প্রসঙ্গকেই নিজের নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী।