ঘিঞ্জি গলিতে পর পর বহুতলের ঘেঁষাঘেঁষি অবস্থান। সেই সব বাড়ির ছাদ ও বারান্দা ছুঁয়ে গলির দু’পার জুড়ে চলেছে মোটা বিদ্যুৎবাহী তার। মঙ্গলবার বিকেলে সেখানেই রোগাটে এক তরুণকে বিদ্যুতের তারে ছটফট করে ঝুলতে দেখা গেল। হাড়-হিম করা এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল আনন্দপুরে ই এম বাইপাস লাগোয়া মার্টিনপাড়া এলাকা। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা ওই যুবককে কোনও মতে তার থেকে নামান। বর্তমানে দগ্ধ অবস্থায় এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম নাজিবুল শেখ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের কাছে জীবনতলার বনমালীপুরের বাসিন্দা ২৩ বছরের নাজিবুল পেশায় শ্রমিক। জলের পাইপ সারানোর কাজ করেন। স্থানীয় একটি বাড়ির ছাদে উঠে আশপাশের আগাছা পরিষ্কার করার সময়ে ওই তারের সংস্পর্শে আসেন তিনি। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
কসবায় রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার সাব স্টেশনের হাই-টেনশন লাইনে ছোঁয়া লেগেই নাজিবুল গুরুতর আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানাচ্ছে। ওই তারের লাইন তাদের নয় বলে সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়। বিদ্যুৎ সংবহন সাব-স্টেশনের হাই-টেনশন তারের গা ঘেঁষে এতগুলি বাড়ির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে প্রশাসনের একাংশ। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘হাই-টেনশন লাইনটা আগে হয়েছে। তার পরে বাড়ি হয়েছে। আমাদের সরকারের রেগুলেশন বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, যে ন্যূনতম উচ্চতা বজায় রাখতে হয়, হাই-টেনশন লাইন তার থেকে উঁচুতে রয়েছে। ’’
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রেরও খবর, কসবার সাব-স্টেশনটি অনেক পুরনো। ওই তল্লাটে বিধিসম্মত উচ্চতা এবং আশপাশে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখেই হাই-টেনশন তারগুলির বিন্যাস। কিন্তু অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদতে অনেক বছর ধরেই নির্বিচারে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাড়িগুলি ক্রমে লম্বা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে এর সদুত্তর মেলেনি। স্থানীয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তথা বরো সভাপতি সুশান্ত ঘোষ শুধু বলছেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে নতুন এসেছি। বাড়িগুলি অনেক পুরনো। এই বিষয়ে বলতে পারব না।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় হাই-টেনশন তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা নতুন নয়। কিছু দিন আগে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে একটি বাচ্চা ছেলে তড়িদাহত হয়। এ দিন নাজমুলও একটি ছাদে উঠেই আগাছা পরিষ্কার করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তখনই অঘটন ঘটে।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনও নাজমুলের পাইপ সারানোর সরঞ্জাম ছড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই শ্রমিককে তারে ঝুলতে দেখেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ কয়েকটি বাঁশ নিয়ে এসে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নাজমুলকে নামায়। তবে কারা তাঁকে কাজে লাগিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়নি। তারের কাছে গিয়ে আগাছা পরিষ্কার ঝুঁকির হতে পারে, তা সত্ত্বেও কেন ওই যুবককে পাঠানো হল, সেই প্রশ্ন উঠছে।
সেই সঙ্গে বহুতলগুলির বেআইনি নির্মাণ নিয়েও কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের একাংশের মদতে জনবসতি বাড়লেও নিরাপত্তার শর্ত কেন মানা হয়নি? পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত বলছেন, ‘‘এখন বেআইনি ভাবে কোনও বহুতল নির্মাণ হচ্ছে না।’’