আত্মবিস্মৃতি কি ভারতের জাতীয় রোগ?
হিটলার বারো বছরে ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে। এটা নিয়ে বহু বাঙালিকে বহু চোখের জল ফেলতে দেখেছি। হিটলার শ্রেণীশত্রুদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু বাঙালী ভুলে গেছে চার্চিলের অর্ডারে এক বছরে চল্লিশ লক্ষ ভারতবাসীকে হত্যা করা হয়।
না কোনো কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প করতে হয়নি, তার মেইনটেন্যান্স এর জন্য কোনো খরচও ছিলো না, খুব সহজে একটা ভয়ংকর অস্ত্র তৈরি করা হয় তার নাম দুর্ভিক্ষ। বেঙ্গল ফেমিন অর্থাৎ তেতাল্লিশের মন্বন্তর।
দুর্ভিক্ষের অস্ত্রে ভারতীয়দের গণহত্যার জন্য কোনো মেমোরিয়াল নেই। ইহুদীরা গাদা গাদা মেমোরিয়াল বানিয়ে স্মরণ করে ইহুদী হলোকাস্ট এ মৃত লোকজনকে। শিল্প সাহিত্য সিনেমায় বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে কি অত্যাচার হয়েছিলো তাদের পূর্বপুরুষদের উপর। বিভূতিভূষণ এর অশনিসংকেত ও কয়েকটি মাত্র কালজয়ী সাহিত্য ছাড়া এই ভয়াবহ গণহত্যার উল্লেখ অবধি নেই গোটা ভারতেই।
কি ভাবছেন একটিমাত্র গণহত্যা?
১২০ বছরের মহারাণীর ব্রিটিশ রাজত্বে ৩১ টি মন্বন্তর। তার আগে ভারতের ইতিহাস খুঁজলে ২০০০ বছরে ১৭ টি মন্বন্তরের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাংলা ছিলো ভারতের মধ্যে চিরকাল চালের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক প্রদেশ। ব্রিটিশ রাজত্বে জবরদস্তি নীলচাষ ও অন্যান্য ভুল জমি বন্টন নীতির কারণে বাংলা হয়ে দাঁড়ায় চালের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক প্রদেশে। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সবচেয়ে বড় কারণ, বাংলার মজুদ চাল পুরো নষ্ট করে দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রভুদের অঙ্গুলিহেলনে। ব্রিটিশ প্রশাসন, যাতে বিভিন্ন পদে আসীন ছিলো প্রচুর কালো সায়েব অর্থাৎ বাঙালী প্রভুও, বাংলার জনতাকে কোনোরকম সাহায্য করে নি এই চূড়ান্ত খাদ্যহীনতা থেকে রক্ষা করার জন্য।
এছাড়াও ব্রিটিশরা ১৭৭০, ১৭৮৩, ১৮৬৬, ১৮৭৩, ১৮৯২,১৮৯৭ এর দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী যাতে মোট এক কোটি চল্লিশ লক্ষ ভারতবাসীর গণহত্যা হয়। দুর্ভিক্ষ তৈরিই করা হতো এই কারণে, যাতে কেবল খিদের জ্বালায় ব্রিটিশ প্রভুদের দাসবৃত্তি করতে চায় মানুষ।
ব্রিটিশরা এজন্য এমনকি কেনিয়ার কাছেও হালকা করে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু ভারতের কাছে কখনো না। চার্চিল বলেছিল ভারতবাসীরা যতই দুর্ভিক্ষে মরুক খরগোশের মতো বাচ্চা ঠিকই পয়দা করবে। তখনো ভারতে ‘নেতা’ রা ছিলেন, এ অপমানজনক মন্তব্যের কি প্রতিবাদ কারা করেছিলেন, ইতিহাস জানে।
ইজরায়েল মনে রেখেছে ইহুদী হলোকাস্ট, ভারতবাসী সব কিছু বিস্মৃতির আড়ালে রাখতে পারলেই বাঁচে।