বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হোক বা রাজ্যের দুর্নীতি ও হিংসা নিয়ন্ত্রণে রাজভবনে কন্ট্রোলরুম খোলা, এই সব কিছুর জন্য রাজ্যপাল আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যপাল এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। সংবিধান মেনে কাজ করছেন না। রাজ্যের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন না রাজ্যপাল। আর এরই পাল্টা দিতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বললেন, মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির মানেই সম্ভবত বোঝেন না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে মু্খ্যমন্ত্রী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারতেন। কেন সেটা হচ্ছে না?
সুকান্ত মজুমদার বলেন, রাজ্যপাল যদি আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করছে বলে মনে হয় মুখ্যমন্ত্রীর, তাহলে তো তাদের জন্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট খোলা আছে। সেখানে যান। কিন্তু মু্খ্যমন্ত্রী আসলে জানেন সংবিধানের মধ্যে থেকেই রাজ্যপাল কাজ করছেন। সেই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছেন না।
বিজেপি নেতা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সংবিধান আসলে সম্পূর্ণ আলাদা। তার মনের মতো কাজ হলে সেটা সংবিধান মতো কাজ হচ্ছে আর যদি ওনার মনের বাইরে কাজ হয় তাহলে সেটা সংবিধানের বাইরের কাজ হচ্ছে।
রাজভবনে কন্ট্রোলরুম খোলার প্রসঙ্গে মমতার সমালোচনার জবাবে সুকান্ত বলেন, রাজ্যপাল বাংলাকে দুর্নীতি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন। তিনি একটি ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছেন কার কী অসুবিধা হচ্ছে এখানে জানান। সুকান্ত প্রশ্ন তোলেন, “এতে কার কী অসুবিধা হচ্ছে? এখানে কোথায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস হচ্ছে? তাহলে মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের বাইরে থেকে কাউকে উপাচার্য নিয়োগ করার ঘটনায় মু্খ্যমন্ত্রী সরব হয়েছেন। তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটা সম্ভবত বুঝতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ যার যোগ্যতা থাকবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারবেন। তাঁর কথায়, একজন উপাচার্য তিনি হবেন যার অন্ততপক্ষে জাতীয় স্তরের অধ্যাপক হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সমালোচনার সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠেছে। সেখানে যাকে পারছেন তাকে উপাচার্য বসিয়ে দিচ্ছেন মু্খ্যমন্ত্রী। কলেজের প্রিন্সিপাল যিনি ৫টা রিসার্চ পেপার বের করতে পারেননি তাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন মানুষকেও মু্খ্যমন্ত্রী উপাচার্য করেছিলেন যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনোর যোগ্যতা নেই শিক্ষক হিসেবে।
তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় শব্দের মানে বোঝেন না। তাকে সমস্ত কিছু বুঝে মন্তব্য করতে বলুন। কেরল থেকে কেউ উপাচার্য হতেই পারেন। কোনো অধ্যাপক যদি অন্য রাজ্য থেকে এসে আমাদের রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারেন বা আমাদের রাজ্যের অধ্যাপকরা যদি অন্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে পড়াতে পারেন তাহলে অন্য রাজ্যের একজন যোগ্য অধ্যাপককে কেন এখানে উপাচার্য নিয়োগ করা যাবে না? সুকান্তর পরামর্শ বাংলা শিক্ষিত মহলের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা উচিত।