উত্তরপ্রদেশের হিন্দুত্ববাদী নেতা কমলেশ তিওয়ারি খুনের ঘটনায় রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলে দিল তাঁর পরিবার। কমলেশের ছেলে সত্যম তিওয়ারি স্পষ্ট বলেছেন, “আমরা কাউকে বিশ্বাস করি না। এই ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চাই।”
নিহত নেতার ছেলে আরও বলেন, “আমার বাবার সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী ছিল। তারপরও কী ভাবে আমার বাবাকে আততায়ীরা ওইরকম নৃশংস ভাবে খুন করল? আমরা তাহলে প্রশাসনকে কী ভাবে বিশ্বাস করব?”
শুক্রবার বিকালে লখনউয়ে নিজের বাড়িতে খুন হন হিন্দুত্ববাদী নেতা কমলেশ তেওয়ারি (৪৩)। তিনি হিন্দু সমাজ পার্টির নেতা ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গলায় গেরুয়া রং-এর স্কার্ফ জড়ানো দুই ব্যক্তি এ দিন কমলেশের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তারা বলেছিল, দেওয়ালির মিষ্টি দিতে এসেছে। তাদের একজন ছুরি দিয়ে কমলেশের গলা কেটে দেয়। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত করতে আর একজন তাঁকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি চালায়। স্থানীয় লোকজন দৌড়ে এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাত পুলিশের বিশেষ দল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে একটি মিষ্টির বাক্সও। এক পুলিশ কর্তার কথায়, এই মিষ্টির বাক্স অনেক কিছুর কিনারা করতে পারে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনিবার সকালে মোট পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
দু’বছর আগে কমলেশ হিন্দু সমাজ পার্টি গঠন করেন। ২০১৫ সালে মহম্মদ সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তারপরে বিরাট বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বহু মানুষ ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। সম্প্রতি তিনি সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই কেউ তাঁকে খুন করেছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ওপি সিং বলেছেন, খুনিরা কমলেশের পরিচিত ছিল। খুনের আগে দু’জন ৩৬ মিনিট কথা বলেছিল তাঁর সঙ্গে। খুনিদের খুঁজে বার করার জন্য ১০ টি টিম গঠিত হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে চারজন হিন্দুত্ববাদী নেতা খুন হলেন। গত শনিবার বিজেপির কাউন্সিলার ধারা সিং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি সাহারানপুর জেলায় এক সুগার মিলে যাওয়ার পথে তাঁকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। তার কয়েকদিন আগে বস্তি জেলায় কবীর তেওয়ারি নামে এক বিজেপি নেতা খুন হন। তিনি একসময় ছাত্রনেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্ররা কয়েকটি সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। গত ৮ অক্টোবর দেওবন্দ জেলায় বিজেপি নেতা যশপাল সিংকে গুলি করে মারা হয়। তিনি একসময় বিজেপির কিষাণ মোর্চার সহ সভাপতি ছিলেন।