শহীদ কারা?

না ২১শে জুলাই, ১৯৯৩ সালে মমতা ব্যানার্জী আজকের দিনে ডাক দিয়েছিলেন মহাকরণ দখল অভিযানের। একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী কিভাবে ভোট ছাড়া রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ভবন “দখলের” ডাক দিতে পারেন, গণতান্ত্রিক পরিসরে তা সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন অবশ্যই থাকবে। তবে সেই প্রশ্ন ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি উঠে আসে সেদিনের ১৩টি মৃতদেহের দায় কার ছিল?

মমতা ব্যানার্জীর নাকি সিপিএমের?

তৃণমূল বলবে সিপিএমের, সিপিএম বলবে মমতা ব্যানার্জীর।

সাধারণ মানুষ বলবে দুজনেরই।

দুদলই অরাজকতার রাজনীতি করে অভ্যস্ত প্রথম থেকেই। সেই অরাজকতারই ছবি উঠে এসেছিল ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাইতে। পুলিশ লাঠি না চালিয়ে সটান গুলি চালিয়েছিল। আর মমতা ব্যানার্জী তার দলের কর্মীদের উস্কেছিলেন দখলের জন্য। একটি গণতান্ত্রিক দেশে তা বিশৃঙ্খলা ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করবেনা জেনেও।

এবার প্রশ্ন ওঠে যে আজকের মিটিঙে কি মমতা ব্যানার্জী সিপিএমের বিরুদ্ধে বলবেন?

মনে হয়না।বড় জোর বলবেন, “দিল্লীতে একটা জোটের কথা চলছে, তাই সিপিএম, কংগ্রেস যা বলবেন বুঝে বলুন।” সাথে থাকবে অধীর চৌধুরীর প্রতি কিছু ব্যক্তিগত আক্রমন। এ বাদে বাকী পুরোটা জুড়েই থাকবে বিজেপি।

স্বাভাবিক উনি মণিপুর নিয়ে কথা বলবেন। শর্মিলা চানু কে ছিল, কোন জমানায় তিনি অনশন করে নিজেকে শেষ করে দিতে বসেছিলেন তা অবশ্য ওনার মনে পরবেনা। তাও উনি বলবেন,সবাই বলছে, একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবে তাই উনিও বলবেন।জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা। নিজের রাজ্যে পার্কস্ট্রীট, কাটোয়া, কামদুনি, হাঁসখালি, কালিয়াগঞ্জ নিয়ে যেমন বলা যায়না।তেমনিই রাজস্হান নিয়েও বলা যায়না। অবশ্য এটাও বলবেননা যে বিগত এক শতাব্দীতে মণিপুরে জাতি দাঙ্গায় যতো মানুষ মারা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে তার আর্ধেক মানুষ মারা গেছে। ২০২১-এর ২রা মে-র আগের কথা যদি ছেড়েও দেওয়া হয়। ২রা মে ২০২১-এর পর থেকে এরাজ্যে যে ধারাবাহিক সন্ত্রাস, খুন, জখমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা।

কখনও রামনবমী উপলক্ষ্য করে হাওড়া, রিষড়া, ডালখোলা। আবার কখনও হাঁসখালি, কখনও কালিয়াগঞ্জ। কখনও দেখেছি অভিজিৎ সরকারদের থেঁতলে থেঁতলে মারা, আবার কখনও দেখেছি মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের বুকে পুলিশের সটান গুলি চালিয়ে দেওয়া। কখনও উনি বলেছেন সব বিরোধী চক্রান্ত, আবার কখনও বলেছেন নাবালিকাটির কোন “লাভ এফেয়ার্স” ছিল কিনা দেখতে হবে। অর্থাৎ তদন্তের আগেই তদন্তের গতিমুখ স্হির করে দেওয়া। এবার সবাই তো আর দময়ন্তী সেন নন, কাজেই তদন্তগুলির কি হয় তার কোন খোঁজ আর আমরা পাইনা। যদি নির্যাতিত বা নির্যাতিতার পরিবারের মনের জোর থাকে তাহলে তারা হাইকোর্টে দৌড়াবে। সিবিআই পাবে। নাহলে দুই লাখ কি পঞ্চাশ হাজার নিয়ে চুপ থাকতে হবে। এক সুরে মিশে যাবে বিষমদে মৃতর পরিবারের হাহাকার আর নির্যাতিতার বাবা মায়ের কান্না।

এহেন পরিস্হিতিতে ওনাকে যে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে মণিপুর নিয়ে বেশী চিন্তিত হতে হবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হোল এই রাজ্যের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্ন করার অক্ষমতা। যদিও সাধারণ নিয়মে আমরা জানি বুদ্ধিজীবীর অন্যতম লক্ষণ তিনি প্রশ্ন করেন। তিনি প্রশ্ন করেন সমাজকে, নিজেকে এবং ক্ষমতাকে। কিন্তু এখানে বুদ্ধিজীবি মানে তো শহীদ দিবসে স্টেজে উঠে গিটার নাড়িয়ে ফ্যাসিজিমের মুন্ডুপাত করবেন কিন্তু একবারও প্রশ্ন করবেননা “কেন এতো রক্ত”? খুব যদি বিবেকের দংশন হয় তাহলে হয়ত মিডিয়াকে একটা লাইন ছুঁড়ে দেবেন, “সবথেকে বেশী লোক মারা গেছে তৃণমূলের”। কিন্তু এ প্রশ্ন করবেননা তৃণমূলের লোকগুলোর প্রতিও কি পুলিশ এবং প্রশাসনের কোন দায়িত্ব ছিলনা?

মুখ্যমন্ত্রী সগর্বে ঘোষণা দেবেন তিনি ১৯ জনের মুখ্যমন্ত্রী, তাই ১৯ জনকেই ক্ষতিপূরণ দেবেন, চাকরি দেবেন। বাকী ৪০ জনের মুখ্যমন্ত্রী তিনি নন।বা হয়ত জোটের কমপ্ল্যান যদি খান খানিকটা তাহলে ১৯ থেকে বেড়ে ২৪ হবে। হাজার হলেও জোট রাজনীতির একটা বাধ্য বাধকতা আছে। তাই কংগ্রেস এবং সিপিএমকেও খানিকটা জায়গা তো দিতেই হবে।আসনে না হোক, অন্তত শহীদের তালিকায়।

সভায় আরও নানা রঙিন জিনিষ থাকবে। চাকরি চোরদের প্রতি মানবিকতার বার্তা থাকবে, যুবরাজের অভিষেকের বার্তা থাকবে, এতো খুন, এতো সন্ত্রাস, এতো রক্তের পরেও পঞ্চায়েতে কেন ২০% ভোট কমে গেল সেসব চেপেচুপে বিশাল জয়ের উচ্ছ্বাস থাকবে। ডিম্ভাত থাকবে, সুপ্রীম কোর্টের প্রতি আস্হা থাকবে, রাজশেখর মান্হা, অভিজিৎ গাঙ্গুলিদের প্রতি কটাক্ষ থাকবে।

খালি থাকবেনা পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ৪০ জন খুন হয়ে যাওয়া মানুষের কথা। থাকবেনা বছরের পর বছর রাস্তায় বসে থাকা যোগ্য চাকুরিপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার দেওয়ার কথা। থাকবেনা কয়েক শতাব্দীর জাতিদাঙ্গার ইতিহাসের সাথে তুলনামূলক আলোচনায় কেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হানাহানিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশী। থাকবেনা কেন “এতো রক্ত” সেই প্রশ্নের উত্তর।

সভা শেষ হবে, মফস্বল,গ্রাম চিড়িয়াখানা ঘুরে, হাতে ডিম বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে ফিরবে ঘরের দিকে।হয়ত বাড়িতে ব্যাগ গোছানো আছে। কাল সকালের ধৌলি কি রাতের চেন্নাই এক্সপ্রেস ধরে পাড়ি দেবে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে।

আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনি হতে থাকবে, “খেলা হবে, খেলা হবে”। খেলা হবে ধ্বনির সাথে মিশে গিয়ে ঢেকে যাবে পাঁচলার নির্যাতিতা মায়ের হাহাকার। আরও একটু একটু করে আরও একটু একটু নগ্ন হবে এই বাংলা।

দীপ্তাস্য যশ:
????????‍♂️????‍♂️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.