এযেন ধ্বংসলীলার খেলায় মেতে উঠেছে হাতির দল। রাত হলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রামগুলিতে হানা দিয়ে সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে। মাটির বাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছে। হাতির দল বুধবার ভোররাতে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জের শিমুলডাঙ্গা গ্রামে হানা দিয়ে ধূলিসাৎ করে দিল ১০টি মাটির বাড়ি। তার পাশাপাশি আংশিকভাবে ভেঙ্গে ফেলেছে আরও ১১টি মাটির বাড়ি। যার জেরে অসহায় হয়ে পড়েছে শিমুলডাঙ্গা গ্রামের লোধা-শবর পরিবারগুলি।
জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের লোধাশুলি রেঞ্জে বেশ কয়েকদিন ধরে ৩৫ থেকে ৪০টি হাতির একটি দল রয়েছে। রাত হলেই খাবারের সন্ধানে গ্রামে হানা দিচ্ছে হাতির দল। ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে মাটির বাড়িঘর। মঙ্গলবার রাতে লোধাশুশুলি রেঞ্জ থেকে মানিকপাড়া রেঞ্জে ঢুকে পড়ে হাতির দলটি। গভীর রাত থেকেই হানা দিতে থাকে বিভিন্ন গ্রামে। কিসমত, ঠাকুরথান গ্রামে হানা দেওয়ার পর হাতির দলটি ঢুকে পড়ে শিমুলডাঙ্গা গ্রামে।
গ্রামের বাসিন্দা টুকুরাম মাহাতো বলেন, “রাত সাড়ে বারোটার পর হঠাৎ করে গ্রামের কাছে হাতির দল ঢুকে পড়ে। বেশিরভাগ হাতি গ্রামে না ঢুকেই গ্রামের পাশ দিয়ে পেরিয়ে যায়। ৪ থেকে ৫টি হাতি দল থেকে বেরিয়ে গ্রামে ঢুকে একের পর এক মাটির বাড়ি ভাঙ্গা শুরু করে। হাতিগুলিকে দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন তাদের গায়ের রাগ মেটাচ্ছে বাড়ি ভেঙ্গে।” গোপাল মল্লিক, মধুসূদন মল্লিক, চঞ্চলা মল্লিক, ভবেশ মল্লিক, ঝন্টু মল্লিক, নির্মল নায়েক, ধূবেশ মাহাতো সহ ১০ জনের বাড়ি ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে ৪ থেকে ৫ টি হাতি। মধুসূদন মল্লিক বলেন, “সপরিবারে আমরা সবাই ঘুমিয়েছিলাম। কিছুই বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ হাতিগুলি বাড়ি ভাঙ্গতে শুরু করল। আমরা কোনোক্রমে অন্যত্র পালিয়ে প্রাণে বাঁচি।”
জানা গিয়েছে, বাঁশতলা এলাকার বড়বাড়ির কাছে হাতির দলকে তাড়ানোর সময় দু’জন হুলা পার্টির সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এক সপ্তাহের মধ্যে। তাই হাতি তাড়ানোর কাজে যাচ্ছেন না হুলা পার্টি সদস্যরা। তাদের একাধিক দাবি সামনে রেখে ঝাড়গ্রামের ডিএফও’র কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছে। যতক্ষণ না তাদের দাবি মেটানো হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত হুলা পার্টির সদস্যরা হাতি তাড়ানোর কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে কালঘাম ছুটছে বন দপ্তরের। হুলা পার্টিরা কাজে না যোগ দেওয়ায় হাতি তাড়াতে পারছেন না বনদপ্তর, ফলে হাতির তাণ্ডব দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ঝাড়গ্রামে।
রাজ্যের বনপ্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “বিষয়টি আমি সকালেই জানতে পারার পর ওই এলাকার মানুষজনের দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত দিক থেকে উনাদের পাশে আমরা রয়েছি”।
গ্রামবাসী টুকুরাম মাহাতো বলেন, “সকালে বনদপ্তরের লোকেরা এসেছিল। সবকিছু দেখে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়েছে। বাড়ি ঘর ভেঙ্গে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে, তাই দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে।”